ভাইকে খুব কাঁদিয়েছিলাম
অন্বেষা হাজরা
আমাদের যৌথ পরিবার ছিল। ছোট থেকেই আমি খুব ছটফটে আর ডানপিটে। তবে সেই অর্থে দুষ্টু ছিলাম না। একবার একটা মজার ঘটনা ঘটেছিল, তখন আমি বোধহয় ক্লাস টু-তে পড়ি, আমাদের শেখানো হয়েছিল যে বড়দের কারওর গায়ে পা লাগলে প্রণাম করতে হয়। আমার ভাই ছোটবেলায় খুব নিরীহ প্রকৃতির ছিল। আমি একবার ইচ্ছা করে আমার গায়ে ওর পা-টা ঠেকিয়ে দিয়েছিলাম, আর তারপরেই দে দৌড়। বেচারা ভাই পাপ যাতে না হয় তার জন্য আমার পিছন পিছন আমাকে প্রণাম করার জন্য দৌড়েও আমার নাগাল পায়নি। প্রণাম করতে না পেরে কী কান্না কেঁদেছিল সেদিন। সেসব দিনের কথা ভাবলে আজও হাসি পায়। আমাদের একটা কুকুর ছিল, ওর নাম ছিল রকি। রকি ছিল আমাদের খেলার সাথী। আমরা যখন স্কুলে যেতাম তখন রকি আমাদের যাওয়ার আগে স্কুলের জুতো মুখে করে লুকিয়ে রেখে দিত। আমি যখন হস্টেলে চলে যাই তখন রকিকে খুব মিস করতাম। বর্ধমানের মেমারিতে আমার বাড়ি। ক্লাস ফোর পর্যন্ত মেমারির জ্ঞানভারতীতে পড়াশোনা করেছি। ফাইভে উঠে চন্দননগরের কৃষ্ণভামিনী নারী শিক্ষা মন্দিরে ভর্তি হই। হস্টেলে থাকাকালীন আমাদের একমাত্র ভরসা ছিল কণিকাদি। কণিকাদির বকুনি ছিল বিখ্যাত। সেই বিখ্যাত বকুনি আজও ভুলতে পারিনি। একবার ক্লাস টেনে পড়ার সময় আমি এবং আমার সহপাঠীরা অনেকে মিলে আম পাড়ার লগি দিয়ে ওঁর ঘর থেকে যে ঘরে টিভি থাকত সেই ঘরের চাবি চুরি করেছিলাম। লুকিয়ে টিভি দেখব বলে।
আরও পড়ুন-জঙ্গলের অধিকার জনজাতিদের, আদিবাসীদের জমি কেউ কাড়তে পারবে না: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
খুব বাধ্য মেয়ে ছিলাম
সোনালি চৌধুরী
আমার পরিবার খুব বড় তাই সবার সঙ্গে মিলেমিশে বড় হয়ে উঠেছি। আমার বাড়িতে দুটো কুকুর ছিল। তারাও ছিল আমার বড় হয়ে ওঠার সঙ্গী। ছোট থেকেই আমি একটু বাধ্য প্রকৃতির বাচ্চা ছিলাম। তবে একেবারেই যে দুষ্টুমি করতাম না তা নয়। একবার মা উলকাঁটা দিয়ে কিছু একটা বুনছিলেন। কিছুটা বোনার পর সেটা খাটের উপর রেখে রান্নাঘরে রান্না করতে গিয়েছিলেন, আমি সেই ফাঁকে এসে মায়ের বোনাটা খুলে দিয়েছিলাম। আমার দিদি ছিল হাতে-পায়ে দুষ্টু কিন্তু তেমন ধরনের দুষ্টুমি কোনওদিনই করিনি। তাই মা সবসময় বলতেন আমাকে বড় করতে নাকি কোনও কষ্ট হয়নি। কিন্তু ছোটবেলায় দিদির সঙ্গে খুব মারামারি হত, চুল টানাটানি হত। আমার বয়স তখন চার কিংবা পাঁচ। আমাদের একটা অ্যাকোয়ারিয়াম ছিল। সেই অ্যাকোয়ারিয়ামের একটা মাছকে আদর করতে গিয়ে তার গায়ে নখের আঁচড় লেগে গা চিরে গিয়েছিল। আমি তখন মাছটাকে তুলে এনে ওর গায়ে একটু ডেটল লাগিয়ে আবার জলে ছেড়ে দিয়েছিলাম। মাছটা এরপর মরে যায়। সেটা নিয়ে আমি তিনদিন খুব কান্নাকাটি করেছিলাম, খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলাম। মনে হয়েছিল আমার জন্য মাছটা মরে গেছে। আমি মাল্টিপারপাস গার্লস স্কুলে পড়াশোনা করেছি। স্কুলে শিশুদিবস হত। যেহেতু ছোটবেলা থেকেই নাচ করি সেহেতু ওইদিন আমি স্কুলে নাচ করতাম। আমরা ছোটবেলা থেকেই একটা জিনিস শিখেছি যে কোনও কিছুই সহজলভ্য নয়। কিছু পেতে গেলে কষ্ট করতে হয়। সেই আদর্শেই আজীবন পথ চলেছি।
আরও পড়ুন-অলিম্পিকে পদক আনবে জঙ্গলমহলের ছেলেমেয়েরা
অতিষ্ঠ হয়ে যেত বাবা-মা
ঊষসী রায়
ছোটবেলায় আমি খুব দুষ্টু ছিলাম। আমার বাবা-মা আমাকে নিয়ে অতিষ্ঠ হয়ে যেতেন। আমার মা-বাবা বাইরে বেরিয়ে গেলেই আমি পড়া বাদ দিয়ে টিভি খুলে বসে পড়তাম। বাবা-মা যখন বাড়িতে ঢুকতেন তার একটু আগেই টিভিটা বন্ধ করে দিতাম। এটা বুঝতাম না যে টিভি চালালে টিভির উপরটা গরম হয়ে থাকে। বাবা-মা যথারীতি ঘরে ঢুকে টিভির উপর হাত দিয়ে বুঝে যেতেন আর তখন আমি প্রচণ্ড বকা খেতাম। যখন স্কুল ছুটি থাকত তখন মামার বাড়ি, দেশের বাড়ি যেতাম। নদিয়া জেলায় আমার বাড়ি। সেখানে ভীষণ মজা হত। ভাই-বোনেরা আমরা সবাই একসঙ্গে প্রচুর হুল্লোড় করতাম। দুপুরে যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়ত তখন আমরা ভাই-বোনেরা মিলে মাঠে ঘুরে বেড়াতাম, কাদা-মাটি মাখতাম, গাছে উঠে আম পাড়তাম এইসব অকাজগুলো করতাম। আমি পড়াশোনা করেছি কমলা গার্লসে। যখন প্রাইমারিতে পড়তাম তখন শিশুদিবসের দিন টিচাররা আমাদের চকোলেট, পেন্সিল, ইরেজার দিতেন।
লক্ষ্মীর ঘট উল্টে দিতাম
দিব্যজ্যোতি দত্ত
আমি ছোট থেকেই ভীষণ দুষ্টু আর ছটফটে। মায়ের কাছে শুনেছি ছোটবেলায় দাদু যখন খেতে বসতেন তখন নাকি আমি দাদুর কোলে বসে টয়লেট করে দিতাম। এ-ছাড়াও ঠাকুরঘরে ঢুকে লক্ষ্মীর ঘট উল্টে দিতাম। মায়ের উপর রাগ হলে মায়ের সব মেকাপ ফেলে দিতাম। এইসব কারণের জন্য গুছিয়ে মারও খেতাম মায়ের কাছে। ছটফটে হওয়ার কারণে আমি এক জায়গায় বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারি না, আর আমার এই স্বভাবের কারণে একবার অনেক বড় অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিল। আমাদের সোনার বিজনেস। সোনা পরিষ্কার করতে নাইট্রিক অ্যাসিড লাগে। আমাদের নাকতলা শোরুম তৈরি হওয়ার সময় কিছু জিনিস কোনও কারণে বাড়িতে আনা হয়েছিল। তার মধ্যে চার বোতল নাইট্রিক অ্যাসিড ছিল। আমি সবার চোখের আড়ালে সেই বোতল চারটে দুটো ব্যাগের মধ্যে ভরে দু’হাতে ঝুলিয়ে আমার পায়ের থেকে বড় মাপের চটি পরে সিঁড়ি দিয়ে উপর থেকে নিচে নামছিলাম। হঠাৎ করে হোঁচট খেয়ে একটা ব্যাগ আমার হাতের থেকে নিচে পড়ে গেল। প্রচণ্ড শব্দ করে বোতলটা ফেটে গিয়ে চারিদিকে নাইট্রিক অ্যাসিড ছড়িয়ে গেল! এরপরে জুতোতে হোঁচট খেয়ে আমিও নিচে মাটিতে ছড়ানো অ্যাসিডের ওপর পড়ে যাই। ঈশ্বরের অশেষ করুণা যে অ্যাসিড ছড়িয়ে যাওয়ার পরে আমি তার ওপর পড়েছিলাম, কারণ অ্যাসিড ছড়িয়ে গেলে তার তীব্রতা অনেকটা কমে যায়। যাইহোক বাবা-মা এসে প্রথমেই আমাকে রিজার্ভারে চুবিয়ে দিয়েছিল এবং তার পরে আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছিল। তারপর এক মাস লেগেছিল আমার হাত সারতে।
আরও পড়ুন-মধ্যরাতে বিধ্বংসী আগুন নিমতলা ঘাট সংলগ্ন এক কাঠগোলায়
সাপকেও বোতলবন্দি করেছি
অনুপম রায়
আমার ছেলেবেলাটা দুষ্টুমিতে ভরা। ঠাকুরপুকুরে বাবা-মার সঙ্গে আমি একাই থাকতাম। ছুটির দিন দুপুরবেলায় পাড়া-পড়শির গাছ থেকে আমি আর আমার বন্ধুরা মিলে আম চুরি করতাম, তেঁতুল চুরি করতাম। নর্দমা থেকে মাছ ধরতাম। কয়েকবার জলঢোঁড়া সাপও বোতলবন্দি করেছিলাম! এগুলো ছিল আমাদের একধরনের মজার খেলা। আর এইসব কাজের জন্য বাবা-মায়ের কাছে প্রচুর মার খেয়েছি, বকুনি শুনেছি। কিন্তু এত কাণ্ডের পরও দুষ্টুমি করা ছাড়িনি। আমি খিদিরপুর সেন্ট পলস স্কুলে পড়তাম। একবার কী মনে হয়েছিল স্কুল থেকে দশ কিলোমিটার হেঁটে বাড়ি ফিরেছিলাম। আসলে ওই বয়সে মাথার মধ্যে কখন যে কী পোকা নড়ে উঠত সেটাই বুঝতে পারতাম না! পাড়াতে যখন রবীন্দ্রজয়ন্তী উৎসব পালন করা হত তখন আমরা বন্ধুরা মিলে প্রতিটা বাড়ির কলিংবেল বাজিয়ে বেড়াতাম। এটাও আমাদের কাছে এক ধরনের মজাই ছিল। আমাদের স্কুলে শিশুদিবসের অনুষ্ঠানে নাটক, নাচ, গান করা হত, সেগুলো আমাদের শিক্ষকরাই করতেন। আমার বাবা-মা কখনওই আমাকে আবদার দেয়নি— করেননি। তবে দাদু-দিদারা খুব আদর-আবদার দিতেন। আমার বাবার বাড়ি এবং মায়ের বাড়ি দুটোই বহরমপুরে। আর ছুটি মানেই বহরমপুরে যাওয়া। আর, বহরমপুর গেলে আমাকে পায় কে! তখন হাজার দুষ্টুমি করলেও বাবা-মা কিচ্ছুটি বলতে পারত না কারণ দাদু-দিদারা ছিলেন। এছাড়াও আমার যে খাবারগুলো খাওয়া বারণ ছিল সেগুলো খেতাম, বিশেষ করে মিষ্টি। সারাদিনে আমার একটা বা দুটো মিষ্টি খাওয়ার অনুমতি ছিল। কিন্তু বহরমপুরে যখন যেতাম তখন ন’টা, দশটা করে মিষ্টি খেয়ে ফেলতাম।