অংশুমান চক্রবর্তী
জ্ঞানমুদ্রা প্রকাশনের নিজস্ব পত্রিকা ‘ছায়াপথ’। বইমেলায় বেরিয়েছে দ্বাদশ সংখ্যা। এবারের বিষয় : ‘প্রকৃতি ও সাহিত্য, শিল্পে নান্দনিকতা’। দীর্ঘ সূচি। লেখক তালিকা চমকপ্রদ।
শুরুতেই কবিতা। কৃষ্ণ বসুর লেখার শিরোনাম ‘জীবন সত্য’। ছন্দের আশ্রয় নিয়েছেন কবি। মনে দোলা দিয়ে যায়। লিখছেন : ‘অতীত কিছু ম্যাজিক জানে কাছেই টানে হায়!/ বর্তমান তো শূন্য নেই গো, কাছেই ডাকে, আয়।/ তবে কেন কষ্ট পাই গো জীবন যাপন রঙ্গে/ জীবনটাকে জাপটে ধরি গভীর গহন অঙ্গে।’ জীবনের সারসত্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ছোট্ট কবিতায়। দুলেছেন অতীত ও বর্তমানের দোলাচলে।
আরও পড়ুন-চিন্নাস্বামীতে আজ রোহিত-বিরাট ম্যাচ
মনে রেখাপাত করে কমল দে সিকদারের ‘হাওয়া’, বিভাস রায়চৌধুরীর ‘না-পাওয়া’, প্রবালকুমার বসুর ‘অস্ফুট’, বৈজয়ন্ত রাহার ‘এসো অন্ধ হই’, মৃণালকান্তি দাশের ‘কৃষ্ণা’, অনীশ ঘোষের ‘মায়ের ভাষা’, মেঘ বসুর ‘অন্ধ আমি, মূর্খ আমি’, অরূপ পান্তীর ‘কান্না কথা’, ভারতী বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সম্পর্ক’ কবিতাগুলো। আছে শিবাশিস মুখোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎকার। বেশ কিছু প্রশ্নের বুদ্ধিদীপ্ত উত্তর দিয়েছেন। একটি প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, ‘শুধু নন্দনতত্ত্ব কেন, লেখার সময় কোনও তত্ত্বই আমাকে প্রভাবিত করতে পারে না। আমি আমার হৃদয় মগজের সবটুকুই তো ঢেলে দিই কবিতায়।’ তাঁর এই ভাবনা যেন সমগ্র সৃষ্টিশীল মানুষের ভাবনা। বাঁধা পড়ে যায় এক সুতোয়। সাক্ষাৎকারটি বেশ ভাল।
আছে চমৎকার একটি পালাগান। স্বপ্নময় চক্রবর্তীর ‘নিতাই গাইনের গোপন কথা’। এই পালা বড় বেশি মাটির কাছাকাছি।
আরও পড়ুন-হ্যাঁ, এগিয়েই বাংলা
দুর্দান্ত কিছু ছোট গল্প পড়ার সুযোগ হল। চুমকি চট্টোপাধ্যায়ের লেখার শিরোনাম ‘পোকায় ধরা মেওয়া’। গল্পের কেন্দ্রে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির প্রোডাক্ট ম্যানেজার সম্বিত। চল্লিশ ছুঁই-ছুঁই। অবিবাহিত। হঠাৎ তাঁর মনে ভালবাসার উদয় হয়। কমপ্লেক্সের একটি মেয়েকে দেখে। স্বল্প পরিসরে লেখা গল্পটি সুন্দরভাবে বোনা হয়েছে। রয়েছে টান।
এ-ছাড়াও পড়তে ভাল লাগে অজিতেশ নাগ-এর ‘টিপ’, অলোকা চক্রবর্তীর ‘ভালোবাসার গল্প’ অশ্রুকণা দাসের ‘আরণ্যক প্রেমগাথা’ পুলক রায়ের ‘ভালোবাসা বৈদুর্য রহস্য’, সুভাষচন্দ্র দত্তের ‘স্টেশন মাস্টারের ভূত দর্শন’ গল্পগুলো।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
একটি অনবদ্য গদ্য উপহার দিয়েছেন শুভঙ্কর দে। বইপাড়ার অপুদা। শিরোনাম ‘সম্পর্ক প্রকাশক ও লেখক’। ইতিহাসের পাতা থেকে এলাহাবাদের ইন্ডিয়ান প্রেসকে তুলে এনেছেন তিনি। যে প্রেসের মালিক ছিলেন চিন্তামণি ঘোষ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গীতাঞ্জলি’ থেকে একাধিক বইয়ের প্রকাশক। দুটি চিঠি তুলে ধরা হয়েছে। প্রকাশক চিন্তামণি ঘোষের চিঠি রবীন্দ্রনাথকে। আরেকটি চিঠি রবীন্দ্রনাথের লেখা চিন্তামণি ঘোষকে। দুটি চিঠিতেই ফুটে উঠেছে পরস্পরের প্রতি গভীর বিশ্বাস এবং শ্রদ্ধা।
জয়তী রায়ের ‘নীল মসজিদ’ লেখাটি তথ্যসমৃদ্ধ। সুলতান আহমেদ মসজিদের ইতিহাস এবং নান্দনিক সৌন্দর্যের কথা তুলে ধরা হয়েছে। জানা যায়, এই মসজিদ তুর্কি স্থাপত্যের উপযুক্ত উদাহরণ।
আরও পড়ুন-কেন্দ্রীয় শিশু কমিশনের অসভ্যতা-গুন্ডামি, সঙ্গে বিজেপি নেতা, গ্রামবাসীদের বিক্ষোভ
শম্পা রায় বোসের ‘বৈদিক বিবাহ এবং মহিলা পুরোহিত’ লেখাটি আকর্ষণীয়। একটি অংশে বলা হয়েছে, ‘বৈদিক বিবাহে পুরুষ বা মহিলা পুরোহিত বলে কিছু নেই।… পৌরোহিত্যের অধিকার শুধুমাত্র পুরুষদেরই সেই ভাবনা থেকে সরে আসার সময় এসে গেছে।’
নিবেদিতা রায় বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফিচারের শিরোনাম ‘নন্দনতত্ত্ব’। বিষয়টি গুরুগম্ভীর। প্রকাশ করা হয়েছে সহজ-সরল ভাষায়। লেখাটি এই সংখ্যার অন্যতম সম্পদ।
এ-ছাড়াও পাতায় পাতায় ছড়িয়ে রয়েছে মুক্ত গদ্য, অণুগল্প, ভ্রমণ, চিঠি ইত্যাদি বিষয়ের লেখা। সবমিলিয়ে সংগ্রহে রাখার মতো একটি অনবদ্য সংখ্যা। সম্পাদক সুমিতা মুখার্জি। দাম ২০০ টাকা।