আজ, ২৯ জুন, নান্দীকার নাট্যগোষ্ঠীর ৬৫তম জন্মদিন। সাড়ম্বরে পালিত হবে কলকাতার একাডেমি অফ ফাইন আর্টস-এ। মঞ্চস্থ হবে দুটি নাটক। উপস্থিত থাকবেন দলের নতুন-পুরোনো সদস্য এবং বাংলার নাট্যপ্রেমীরা। এছাড়াও আসবেন নাট্যজগতের বিশিষ্টরা। বসবে চাঁদের হাট।
আরও পড়ুন-ও নদী রে
ফিরে যাওয়া যাক অতীতে। কলকাতার বি কে পাল অ্যাভেনিউ। ওখানে ছিল অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের মামারবাড়ি। ওই বাড়িতে নিয়মিত আসতেন অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়। গল্পগুজব হত। আলোচনা হত দেশ-বিদেশের থিয়েটার নিয়ে। একদিন কথায় কথায় তাঁরা একটি নাট্যদল প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেন। দীপেন সেনগুপ্ত, সত্যেন মিত্র, অজয় গঙ্গোপাধ্যায়, মহেশ সিংহ, দীপক নন্দী, চিন্ময় রায় প্রমুখ ছিলেন মণীন্দ্র কলেজের ছাত্র এবং তাঁদের অন্তরঙ্গ বন্ধু। ১৯৬০-এর ২৯ জুন, ওই বাড়িতেই প্রত্যেকের উপস্থিতিতে পথচলা শুরু করে নান্দীকার নাট্যগোষ্ঠী। দলের সভাপতি মনোনীত হন অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্পাদক অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়। সহকারী সম্পাদক অজয় গঙ্গোপাধ্যায়। কোষাধ্যক্ষ সত্যেন মিত্র। দীপেন সেনগুপ্ত নতুন দলের নাম দেন ‘নান্দীকার’। লোগো তৈরি করেন বিশ্ববরেণ্য চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়। পরবর্তীকালে নান্দীকার-এ যোগ দেন রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, বিভাস চক্রবর্তী, অশোক মুখোপাধ্যায়, কেয়া চক্রবর্তী, স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত প্রমুখ। অন্যরকম প্রযোজনার গুণে প্রথম থেকেই নাট্য-মোদীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে দলটি। জনপ্রিয়তা পায়। শুরুর দিকের প্রযোজনাগুলি ছিল প্রধানত অ-ভারতীয় নাটকের রূপান্তর। পরবর্তী সময়ে মঞ্চস্থ করেছে ভারতীয় নাটক, মৌলিক বাংলা নাটক।
মধ্যিখানে এসেছে বহু ঝড়ঝাপটা, উত্থান-পতন। সাতের দশকে দেখা দেয় ভাঙন। নান্দীকার ছেড়ে বেরিয়ে যান প্রথমে অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়, পরে অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়। সেইসময় হাল ধরেন রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত। আবারও দল মাথা তুলে দাঁড়ায়। সূচনা হয় নতুন যুগের। বরাবরই দল এগিয়েছে নিজস্ব গতিতে। মেলবন্ধন ঘটেছে ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার। একটা সময় নান্দীকারে থেকেই বাংলা রঙ্গমঞ্চে ঝড় তুলেছিলেন গৌতম হালদার, দেবশঙ্কর হালদারের মতো দাপুটে অভিনেতারা। নাটক মঞ্চায়নের পাশাপাশি নান্দীকার বার্ষিক ন্যাশনাল থিয়েটার ফেস্টিভ্যাল এবং কর্মশালার আয়োজন করে।
আরও পড়ুন-শপথে জট, রাষ্ট্রপতিকে চিঠি স্পিকারের
বর্তমানে দল পরিচালনা করছেন সোহিনী সেনগুপ্ত। তাঁর সঙ্গে আছেন অন্যরা। উঠে এসেছেন নতুন প্রজন্মের একঝাঁক অভিনেতা-অভিনেত্রী। তাঁরা নিজেদের মেলে ধরছেন দলের বিভিন্ন প্রযোজনায়। গত এক দশকে নান্দীকার ভারত, বাংলাদেশ, জার্মানি, সুইডেন, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সহ বেশ কয়েকটি দেশে নাটক মঞ্চস্থ করেছে।
আজ নান্দীকারের ৬৫তম জন্মদিন উপলক্ষে মঞ্চস্থ হবে দলের দুটি নাটক। দুপুর ২-৩০-এ দেখা যাবে স্বাতীলেখা সেনগুপ্তর লেখা কোর্ট রুম ড্রামা ‘এক থেকে বারো’। সপ্তর্ষি মৌলিকের নির্দেশনায়। প্রধান উপদেষ্টা সোহিনী সেনগুপ্ত। আলো করেছেন সাধন পাড়ুই, সাজসজ্জায় অয়ন ঘোষ, সঙ্গীতে অর্ঘ্য-সপ্তর্ষি, প্রোডাকশন কন্ট্রোলার অনিন্দিতা চক্রবর্তী, সহকারী পরিচালক অর্ঘ্য দে সরকার। অভিনয়ে অপালা বন্দ্যোপাধ্যায়, অরুন্ধতী সিনহা, রূপসা ভট্টাচার্য, সুমেঘা ঘোষ, অর্ঘ্য দে সরকার, অনিন্দিতা চক্রবর্তী, দীপ্তসোম দাস, তন্ময় কোলে, মলয় সরকার, সৌরভ মুখোপাধ্যায়, বরিষন চট্টোপাধ্যায়, অয়ন ঘোষ, কুলদীপ পল্ল্যে, সৌরভ দিন্দা, কৌশিক দাস এবং সপ্তর্ষি মৌলিক।
আরও পড়ুন-নিট-কেলেঙ্কারিতে বিজেপি যোগ আরও স্পষ্ট, উঠে এল যোগীরাজ্যের বিধায়কের নাম
সন্ধে ৬-৩০-এ মঞ্চস্থ হবে সোহিনী সেনগুপ্তর নির্দেশনায় মহাভারত-আশ্রিত নাটক ‘পাঞ্চজন্য’। রচনা এবং সহ-নির্দেশনায় পার্থপ্রতিম দেব। সঙ্গীতে ময়ূখ-মৈনাক, কোরিওগ্রাফি দেবকুমার পাল, মঞ্চ দেবব্রত মাইতি, আলো সাধন পাড়ুই, স্টাইলিং মোঃ আলি, মেক আপ মলয় দাস এবং নৃপেন চক্রবর্তী। অভিনয়ে সোহিনী সেনগুপ্ত, স্বজন সৃজন, শম্ভুনাথ শ, পার্থপ্রতিম দেব এবং নান্দীকারের নতুন অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। শ্রীকৃষ্ণের চরিত্রে দেখা যাবে সপ্তর্ষি মৌলিককে।
আয়োজন সম্পর্কে সোহিনী সেনগুপ্ত জানালেন, প্রতি বছর নান্দীকারের জন্মদিনে আমাদের দলের দুটো নাটক মঞ্চস্থ হয়। এবারেও হবে। দুটোই নতুন প্রযোজনা। গতবছর থেকে মঞ্চস্থ হচ্ছে। এখনও চলছে। দর্শকরা আসবেন। নাটক দেখবেন। আমাদের সঙ্গে সময় কাটাবেন। থাকবেন আমার বাবা রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত। তিনি সবার সঙ্গে ভাব বিনিময় করবেন। আমার মা স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত কয়েক বছর আগে চলে গেছেন। তিনি থাকবেন আমার, আমাদের প্রত্যেকের মনের মধ্যে।
আরও পড়ুন-ছবি বিকৃত করে বিজেপির নোংরা খেলা, প্রকৃত ঘটনা সামনে আনল তৃণমূল
সপ্তর্ষি মৌলিক জানালেন, দুটোই নতুন নাটক। গত এক বছরে কয়েকবার মঞ্চস্থ হয়েছে। আজ দুটো শো-ই হাউসফুল হবে। জন্মদিনে মঞ্চস্থ হবে বলে দলের সবাই ভিতরে ভিতরে দারুণ উত্তেজিত। আমিও। অ্যাকাডেমির বাইরের জায়গাটা সুন্দরভাবে সাজানো হবে। দেবব্রত মাইতির ব্যবস্থাপনায়। দলের জন্মদিন উপলক্ষে নান্দীকারের পুরোনো সদস্যরা আসেন। আসেন কলকাতার অন্যান্য থিয়েটার দলের সদস্যরাও। ফুল হাতে। শুভেচ্ছা জানান। দেখা করেন আমাদের অভিভাবক রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তর সঙ্গে। এবারেও তার ব্যতিক্রম হবে না। এইভাবেই চেনা মুখগুলোর সঙ্গে আমাদের সাক্ষাৎ হবে। হবে ভাব বিনিময়। সবথেকে বড় কথা, প্রতি বছর বহু নতুন দর্শক আসেন। তাঁদের সঙ্গেও আলাপ পরিচয় হয়। এবারও বহু নতুন মুখের সঙ্গে আলাপ পরিচয় হবে। আমরা অভিনয় করব তাঁদের সামনে। পূর্ণ প্রেক্ষাগৃহে। এইভাবেই সবাই মিলে উদযাপন করব দিনটা।