দুটি বিপরীত চিত্র, কেন্দ্রে ও রাজ্যে। দিল্লির শাসক ভারতের গর্বকে ফিকে করে দিয়ে জাতীয় সম্পত্তি বেসরকারি মালিকানায় তুলে দিতে ব্যস্ত। অন্যদিকে, বাংলার জননেত্রী বাম আমলের লজ্জা মুছে, অজস্র প্রতিকূলতা জয় করে, নতুন বাংলা তৈরির কাজে মগ্ন। মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতার প্রশ্নে এই বিপরীত চলনের বিশ্লেষণ করছেন মইনুল হাসান
আরও পড়ুন-দুর্গাপুজো নিয়ে বিজেপির ভাবমূর্তি তুলে ধরলেন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-নেত্রীরা
দেশ বিক্রি করার মন ভোলানো অনেক নাম আগে শুনেছি। ডিজইনভেস্টমেন্ট বা বিলাগ্মীকরণ। পিপিপি – সরকার – বেসরকারি যৌথ অংশগ্রহণ। এবার তার নাম দেওয়া হয়েছে মানিটাইজেশন বা মুদ্রায়ন। স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবে নতুন চমক- ন্যাশানাল মানিটাইজেশন পাইপলাইন। আগামী ৫ বছরে আনুমানিক ৬ লক্ষ কোটি টাকার বিনিময়ে নরেন্দ্র মোদির সরকার বিপুল পরিমান জাতীয় সম্পত্তি কয়েকটি কোম্পানির হাতে তুলে দিতে চলেছে- যারা নরেন্দ্র মোদির বংশবদ। সরকার বলেছে, মালিকানা সরকারের হাতে থাকবে। কোম্পানিগুলো ইজারা পাবে মাত্র।
এই বিপুল পরিমান সম্পত্তি যা তালিকাভুক্ত তা বিগত কয়েকদশক ধরে জনগনের অর্থে গড়ে উঠছে।এই সম্পত্তি নির্মান ও রক্ষা করতে যেমন বিপুল অর্থ ব্যয় হয়েছে , তেমন দেশ উপকৃত হয়েছে। নিয়মিত অর্থ জমা হয়েছে দেশের কোষাগারে।
আরও পড়ুন- আশা ভোঁসলের জন্মদিনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শুভেচ্ছাবার্তা
জাতীয় সড়ক, গ্যাস পাইপ লাইন, মোবাইল টাওয়ার বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন, অপটিকাল ফাইবার লাইন, কয়লাখনি, বন্দর, ট্রেন, খাদ্য গোলা রয়েছে ইজারা দেবার তালিকায়। এই ক্ষেত্রগুলির দিকে তাকালে সহজেই বোঝাযায় কারা এগুলো কিনবে ? কারা ওৎ পেতে আছে সংস্থাগুলি কেনার জন্য? কেন্দীয় সরকার পরিস্কার করে বলছে না যে, ইজারা দেবার মূল্য ও শর্ত কর্পোরেট সংস্থানগুলির সঙ্গে পরামর্শ করেই হবে। কারণ কোন সংস্থার প্রাথমিক মূল্য নির্ধারণ করা হয়নি। স্বাধীনতা দিবসের ভাষলে প্রধানমন্ত্রী ১০০ লক্ষ কোটি টাকার পরিকাঠামো তহবিলের কথা বলেছিলেন। তার কাছে ৬ লক্ষ কোটি টাকা খুবই কম। সুতরাং ধরে নেওয়া যায় আরও অনেক কিছু বিক্রি হওয়ার মুখোমুখি দেশ হবে। ব্যঙ্ক, বীমা, লাভজনক সংস্থা হয়েও বেসরকারিকরনের পথে। এয়ার ইন্ডিয়া কার্যত বিক্রি হয়ে যাবে। আমাদের গর্বের টেলিফোন সংস্থা বি এস এন এল কে গলা টিপে মারা হচ্ছে। যে কোন সময় তার শেষ ঘন্টা বেজে যাবে। দেশের যে সম্পদ ৭০ বছর মানুষের আশীর্বাদে গড়ে উঠেছে তা মাত্র ৭/৮ বছরে বিক্রি করে দেবার কৃতিত্ব একমাত্র নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর দলের। দেশের মানুষের সম্পত্তি বিক্রি করার অধিকার তাকে কে দিয়েছে তার জবাব আমাদের চাইতেই হবে।
আরও পড়ুন- আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা
পশ্চিমবাংলা দেশ নয়, একটি রাজ্য। প্রায় ১০ কোটি মানুষের বাস। হাজার প্রতিবন্ধকতা নিয়ে এই রাজ্যটিকে চলতে হচ্ছে। কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন হুমকি আসছে। রাজ্যপাল রাজ্য সরকার সম্পর্কে অসংবিধানিক শব্দ উচ্চারন করছেন। প্রতিমাসে হাজার হাজার কোটি টাকার কেন্দীয় ঋণ শোধ করতে হচ্ছে। যার দায় মা মাটি মানুষের সরকারের উপর এসে পড়ছে বাম আমলের অবিমৃষ্যকারিতার ফল হিসেবে। সেই সঙ্গে আছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যে তাঁরা মাথা উচু্ঁ করে উঠে দাড়ালেন, তার কারণ তাঁদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন বাংলার মমতাময়ী মুখ্যমন্ত্রী ।
সারা দেশে মানুষ কিভাবে কাজ হারিয়েছেন সবাই জানেন। করোনা মহামারিতে তা আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য কিছুই করেনি কেন্দ্রের সরকার শুধু দিয়া জ্বালানো আর থালা বাজানো ছাড়া। কোনও আর্থিক প্যকেজ মানুষের কাজে আসেনি। কেবল খবরের কাগজে খবর হয়েছে পাতা ভর্তি করে। পশ্চিমবাংলা ঠিক তার উল্টো। পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য বিশেষ অনুদান এবং কাজের সংস্থান করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। যখন সারা দেশে ভয়াবহ করোনা চলছে, প্রধানমন্ত্রী সহ অন্যন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা ঘর থেকে বাণী বিতরন করছেন, তখন জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাস্তায় থেকেছেন। মানুষের পাশে সরাসরি পৌঁছে গেছেন। কারণ তিনি জানেন এবং বিশ্বাস করেন, মানুষই তাঁর শক্তির আধার। মানুষকে বাঁচানো তাঁর কাজ। সম্পদ বিক্রি করা তাঁর কাজ নয়।
আরও পড়ুন- বিজেপির দুর্গাপুজো নিয়ে কটূক্তি মনে করিয়ে দিয়ে টুইট করলেন ডঃ শশী পাঁজা
প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়েও দেখা গেছে তিনি সারা রাত জেগে সরকারি দপ্তর থেকে সমগ্র পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন ও দুর্গত মানুষের কাছে পৌঁছে গেছেন। মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা, বাংলার প্রতি দায়বদ্ধতা তাকে এই বাংলাকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে প্রেরণা দিচ্ছে।
বাংলার প্রাচীন শিল্প চা এবং চটকল। একটি উত্তরে এবং একটি দক্ষিণে। রাজ্যের চা সুন্দরী একটি নজর কাড়া প্রকল্প। চা শ্রমিকদের মজুরি, বাসস্থান সহ ওই এলাকায় পরিকাঠামোগত উন্নয়ন বাংলার অগ্রগতিতে সাহায্য করেছে। একসময় বহু চটকল বন্ধ থাকত। পাট চাষীরা পাটের নায্য দর পেতেন না। কিন্তু এখন সে পরিস্থিতি নেই। কলের চাকা ঘুরছে। পাটের দাম পাচ্ছে চাষীরা। ফসলের দাম এবং কৃষক বন্ধুদের জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু সারা দেশে কৃষকদের প্রতি অবিচার করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। সহস্র বঞ্চনা অতিক্রম করে বাংলা গড়ার কাজে লিপ্ত মুখ্যমন্ত্রী। বাংলার বুকে একটার পর একটা শিল্প প্রতিষ্ঠান মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। কোভিড পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হতেই শিল্পসংস্থা উদ্বোধন শুরু হয়ে গিয়েছে। ক্ষুদ্র শিল্পসংস্থা প্রতিষ্ঠায় এরাজ্য সারা দেশের মধ্যে প্রথম। চামড়া শিল্পে, হিরে জহরত শিল্পে এরাজ্য প্রথম। বেশি মজুর কাজ করেন এমন শিল্পসংস্থা পরিচালনা ও প্রতিষ্ঠায় বাংলা সারা দেশকে পথ দেখাচ্ছে। প্রাকৃতিক নিয়মেই অনেক শিল্প সংস্থা থাকবে না। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নীতি হল সেখানে নতুন শিল্প করা অথবা পুরোনো শিল্পের আধুনিকিকরণ । প্রধান লক্ষ্য মানুষের কর্মসংস্থান। এভাবেই নতুন বাংলা গড়ে উঠছে। যার প্রধান কান্ডারী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন- ‘বিজেপির অভিভাবক হওয়ার যদি এত শখ, বিজেপির প্রার্থী হয়ে লড়ে দেখান’ হুঙ্কার কুণাল ঘোষের
দেশের কোটি কোটি মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষা জলাঞ্জলি দিয়ে নরেন্দ্র মোদি দেশের মহামুল্যবান সম্পদ কর্পোরেটর সংস্থা দিয়ে দিচ্ছেন। আর মমতা বন্দ্যোপ্যধ্যায় বাংলার নতুন স্বপ্ন জাগিয়ে তুলছেন।