নবরাত্রি বললেই প্রথম মনে আসে শ্রীশ্রী চণ্ডীর দেবীকবচের সেই বিখ্যাত শ্লোক প্রথমং শৈলপুত্রী চদ্বিতীয়ম্ ব্রহ্মচারিণী। তৃতীয়ং চন্দ্রঘণ্টেতি কুষ্মাণ্ডেতি চতুর্থকম্।। পঞ্চমং স্কন্দমাতেতি, ষষ্ঠম্ কাত্যায়নীতি চ। সপ্তমং কালরাত্রীতি মহাগৌরীতি চাষ্টমং।। নবমং সিদ্ধিদাত্রী চনবদুর্গা প্রকীর্তিতাঃ।।
নবরাত্রি বললে মনে আসে দান্ডিয়া রাস। নবরাত্রি মানে গরবা নাচ। নবরাত্রি মানে ফসল কাটার পর খানিক অবসরের আনন্দ। নবরাত্রি মানে পিতৃপক্ষ অবসানকল্পে দেবীপক্ষের সূচনা। নবরাত্রি মানে পুরুষের একচেটিয়া ক্ষমতার ইতিহাসে নারীশক্তির জাগরণ।
আরও পড়ুন-যৎকিঞ্চিৎ
শারদীয়া দুর্গাপুজোর আগে যে অমাবস্যা তাকে বলে মহালয়া অমাবস্যা। এই অমাবস্যায় হয় পরলোকগত পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে তর্পণ। ঠিক তার পরদিন থেকে শুরু হবে নবরাত্রি পালন। আগের দিন ঘর পরিষ্কার, ঘটস্থাপন আর মধ্যরাত্রিতে পুজো দিয়ে সেই আনন্দময়ীর আবাহন। নয়দিন ব্যাপী নিয়মিত পুজোপাঠ, অবশ্যই নিরামিষ আহার তারপর দশমীতে দেবীর ঘট বিসর্জন। এইভাবে প্রতি বছর সারা ভারতে বিশেষত উত্তর ভারতে নবরাত্রি পালিত হয়। বছরে আরও একবার পালিত হয় নবরাত্রি। চৈত্রমাসে বাসন্তী পুজোর প্রাক্কালে হয় চৈতি নবরাত্রি। খুব খেয়াল করে দেখলে বছরের দুটি অর্ধ ভাগে একই রকম উৎসব পালন করা হয়। শারদীয়া দুর্গাপুজোর সাথে বাসন্তী দুর্গাপুজো, শারদীয়া নবরাত্রির সাথে চৈতি নবরাত্রি, দশেরার আগুন উৎসবের সাথে হোলিকা দহন ইত্যাদি… সর্ব বিষয়ে একটা সাম্যতা।
বাঙালির রক্তে শক্তিপুজো। সে সিন্ধু সভ্যতার মাতৃমূর্তি হোক বা গঙ্গারিডাই সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ থেকে পাওয়া মাতৃকা মূর্তি, সবেতেই তিনি পশুবধরত কালান্তরে যা অসুরে রূপান্তরিত। প্রতীকী হলেও কি অসম্ভব ব্যঞ্জনাময়। নারীশক্তির মুখ্য ভূমিকা অসুর নিধনে সুর প্রতিষ্ঠায়। পুরুষের যা অসম্ভব তা সাধিত হবে নারীদ্বারা। এই ভাবনা সনাতন ধর্মের স্তম্ভ, প্রকৃতি মাতৃরূপা তাই প্রকৃতি পূজাই ধর্মের মূল সাধনা।
সেই সুদূর অতীতে এক একক বিন্দু মহাবিস্ফোরণ সৃষ্টি করেছিল জগৎ যাকে বিজ্ঞান বলে সিংগুলারিটি, তন্ত্র বলে জগৎকারণ মহাকালী বেদান্ত বলে ব্রহ্ম। তারপর থেকে সৃষ্টি চালিত হয়েছে এক ছন্দে নির্দিষ্ট লয়ে। প্রকৃতির এই স্বাভাবিক ছন্দকে আমরা নাম দিয়েছি ঈশ্বর। সেই জগৎ সৃষ্টির পর নানা বিন্যাস আর সমবায়ের মাধ্যমে ধাপে ধাপে এসেছে মানুষ আর মানুষের সঙ্গে হাত ধরে এসেছে ধর্ম। কে কাকে এনেছে সে বিতর্কের অবসান কোনওদিন সম্ভব নয়। তবে আমরা জগন্মাতার সৃষ্টি এই ভাবনার মধ্যে বেশ একটা আনন্দ আছে।
আরও পড়ুন-প্রথমবার ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মহালয়া
মার্কণ্ডেয় পুরাণে বর্ণিত দেবীকবচে রয়েছে নবদুর্গার রূপবর্ণনা। নবদুর্গার প্রথম রূপ দেবী শৈলপুত্রী নামে পরিচিত। মাতা শৈলপুত্রী পর্বতরাজ হিমালয়ের কন্যা। নবরাত্রির প্রথম দিনে ব্রাহ্মমুহূর্তে উঠে স্নানকার্য সমাধা করে পরিষ্কার বস্ত্র পরিধান করে গঙ্গাজল দিয়ে মাকে ঘটে স্থাপন করতে হয়। এই পূজায় মাকে সাদা ফুল নিবেদন করা হয়। এরপর ধূপ, প্রদীপ প্রভৃতি দিয়ে মাকে ভোগ নিবেদনের পালা।
নবরাত্রির দ্বিতীয় দিন মা ব্রহ্মচারিণীর পুজোর ক্ষণ। মা ব্রহ্মচারিণী হলেন জ্ঞান, তপস্যা ও বৈরাগ্যের দেবী। মা দুর্গার অবিবাহিত রূপকে ব্রহ্মচারিণী রূপে পুজো করা হয়। এই রূপে দেবী দুর্গা দেবাদিদেব মহাদেবকে স্বামী রূপে পাওয়ার জন্য তপস্যা করেছিলেন। ভীষণ কঠিন পরিস্থিতিতেও কেউ যদি দেবী ব্রহ্মচারিণীর পূজা করেন, তাঁর সমস্ত মনের ইচ্ছা পূরণ হয়।
তৃতীয়ম চন্দ্রঘণ্টেতি শ্লোকের অর্থ নবদুর্গার তৃতীয় রূপ চন্দ্রঘণ্টা। প্রচলিত লোককাহিনি অনুসারে শিব-পার্বতীর বিবাহের দিনে অনুষ্ঠান পণ্ড করার মানসে তারকাসুর দৈত্যবাহিনী প্রেরণ করলে বিবাহকার্য নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে দেবী পার্বতী ত্রিনেত্রা দশভুজা সিংহবাহিনী রূপে আবির্ভূতা হন ও চন্দ্রসম বিশাল ও শুভ্রঘণ্টা বাজিয়ে সকল দৈত্য বিতাড়ন করেন। আরেক মতে শিব বিবাহকালে বিকট রূপ পরিগ্রহ করে ভূতপ্রেতাদি অনুচর-সহ বিবাহসভায় উপস্থিত হলে তাঁদের দেখে মেনকা মূর্ছিতা হন। দেবী পার্বতী শিবের এই রূপের বিপ্রতীপে চন্দ্রঘণ্টা রূপ ধারণ করেন। দেবীর এই যোদ্ধৃরূপ দেখে শিব চণ্ডরূপ সংবরণ করেন ও বিবাহের জন্যে অপূর্ব মনোহর চন্দ্রচূড় বা চন্দ্রশেখর রূপ ধারণ করেন। দেবী চন্দ্রঘণ্টার পূজা নবরাত্রিক ব্রতের তৃতীয় দিনে শুক্লতৃতীয়াকল্পে সম্পন্ন হয়। মণিপুর চক্রে অবস্থিতা, কোটিসূর্যরূপে দশভুজা ত্রিনেত্রা এই দেবী সাধকের সকল দুর্গতি, বিঘ্ননাশ করেন।
আরও পড়ুন-ছবি বিতর্কে সাসপেন্ড প্রান্তিক, রাজন্যা
নবদুর্গার চতুর্থ রূপ কুষ্মাণ্ডা। নবরাত্রি উৎসবের চতুর্থ দিনে তার পূজা করা হয়। ‘কু’ শব্দের অর্থ কুৎসিত এবং ‘উষ্মা’ শব্দের অর্থ ‘তাপ’— কুষ্মাণ্ড শব্দের অর্থ তাই ত্রিতাপ বা দুঃখ— দেবী জগতের দুঃখ গ্রাস করে নিজের উদরে ধারণ করেন, তাই তার নাম ‘কুষ্মাণ্ডা’। জগজ্জননী দুর্গা আদ্যাশক্তি জগতের সর্বপ্রকার জ্বালা-যন্ত্রণার হাত থেকে সন্তানদের সর্বদা রক্ষা করতে করুণায় দ্রবীভূত হয়ে স্বেচ্ছায় সব তাপ নিজের শরীরে গ্রহণ করেন। দূরিতবারিণী–‘ত্রিতাপহারিণী’ মায়ের নাম তাই কুষ্মাণ্ডা। দেবী কুষ্মাণ্ডা ত্রিনেত্রা অষ্টভুজা— তাঁর ডানদিকের চার হাতে থাকে যথাক্রমে পদ্ম, বাণ, ধনুক ও কমণ্ডলু; এবং বাঁদিকের চার হাতে থাকে যথাক্রমে চক্র, গদা, অমৃতপূর্ণ রুধিরাপ্লুত ঘট ও জপমালা।
দেবী স্কন্দমাতা নবরাত্রির পঞ্চম দিনে পূজিতা হন। স্কন্দমাতা অর্থাৎ স্কন্দের মা, স্কন্দ হলেন দেব সেনাপতি কার্তিক। আর তিনি কার্তিকের জননী রূপেই পূজিতা হন। তাই তিনি স্কন্দমাতা নামে। একটি কিংবদন্তি অনুসারে, কথিত আছে যে তারকাসুর নামে এক অসুর ছিল। যার শেষ সম্ভব হয়েছিল একমাত্র শিবের পুত্রের হাতেই। মা পার্বতী তখন তাঁর পুত্র স্কন্দকে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দিতে স্কন্দমাতার রূপ ধারণ করেন। ভগবান কার্তিকেয় স্কন্দমাতার কাছ থেকে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়ে তারকাসুরকে বধ করেন।
কাত্যায়নী দেবী দুর্গার একটি বিশেষ রূপ এবং মহাশক্তির অংশবিশেষ। তিনি নবদুর্গা নামে পরিচিত দুর্গার ন’টি বিশিষ্ট রূপের মধ্যে ষষ্ঠ। নবরাত্রি উৎসবের সময় তার পূজা প্রচলিত। শাক্তধর্ম মতে, তিনি মহাশক্তির একটি ভীষণা রূপ এবং ভদ্রকালী বা চণ্ডীর মতো যুদ্ধদেবী রূপে পূজিতা।
কালরাত্রি ভীষণদর্শনা দেবী। তাঁর গায়ের রং ঘন অন্ধকারের মতো কালো। তিনি এলোকেশিনী। তাঁর গলায় দোলে বজ্রের মালা।
আরও পড়ুন-সোনাগাছি-মন্তব্যে মামলা, প্রাক্তন আইপিএসকে ধমক হাইকোর্টের
তিনি ত্রিনয়নী এবং তাঁর চোখ দুটি ব্রহ্মাণ্ডের মতো গোলাকার। তাঁর নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে ভয়ঙ্কর অগ্নিশিখা নির্গত হয়। কালরাত্রির বাহন গর্দভ বা গাধা। তিনি চতুর্ভুজা৷ তাঁর চার হাতে বর ও অভয়মুদ্রা এবং খড়্গ ও লোহার কাঁটা রয়েছে। কালরাত্রির রূপ ভয়ঙ্কর হলেও তিনি শুভফলের দেবী। কারণাগম, চণ্ডীকল্প এবং ভবিষ্য পুরাণ অনুযায়ী, দেবী মহাকালী বা কালী উগ্ররূপা। উদ্ধার হওয়া প্রস্তরলিপিতেও দেবী কালীর উগ্ররূপের বর্ণনা রয়েছে। আবার, মার্কণ্ডেয় পুরাণের দেবীমাহাত্ম্যে যেখানে দেবী কালীর বর্ণনা আছে, সেখানেও দেবীর ভয়ানক মূর্তির কথাই বলা আছে। সেই বর্ণনা অনুযায়ী, দেবী করালবদনা, অসিপাশধারিণী, নৃমু্ণ্ডমালিনী, বিচিত্রখট্টাঙ্গধরা, ব্যাঘ্রচর্মবসনা, শুষ্কমাংসা, অতিভীষণা, অতিবিস্তৃতমুখী, লোলজিহ্বা আরক্তা, কোটরগত নয়নবিশিষ্টা। দেবীর কণ্ঠস্বরে দিঙমণ্ডল মুখরিত হয়। তিনি মহাদেবী বা অম্বিকার ভ্রূকুটি থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। দেবী চণ্ড-মুণ্ড নামের দৈত্যদের বধ করেন। তাঁদের ছিন্নমুণ্ড দেবী অম্বিকাকে উপহার দেন। তাই দেবীর নাম চামুণ্ডা। দুর্গাপুজোয় অষ্টমীর ধ্যানের পুজোর মূল মন্ত্র ওং হ্রীং শ্রীং চামুণ্ডায়ৈ নমঃ।
বাঙালি সাধারণত যে কালীর পূজা করে থাকে, তা হল দক্ষিণাকালী। কালীতন্ত্রের বর্ণনা অনুযায়ী দেবী কালীর ধ্যান বা পূজা চলে। এই ধ্যান অনুযায়ী, দেবী করালবদনা। তিনি ঘোরা, মুক্তকেশী, চতুর্ভুজা, শ্যামা এবং দিগম্বরী। তিনি মুণ্ডমালা বিভূষিতা, মহামেঘপ্রভা, ঘোরদংষ্ট্রা, পীনোন্নত পয়োধরা, শ্মশানবাসিনী, শবরূপী, মহাদেবের হৃদয়ের ওপরে অবস্থিতা। দেবীর বামহাতে সদ্যবিচ্ছিন্ন নরমুণ্ড এবং খড়্গ। আর, ডানহাতে বরাভয় মুদ্রা। দেবীর কণ্ঠে ঝোলানো মুণ্ড থেকে গলে আসা রক্তে অঙ্গ সিক্ত। দেবীর ঠোঁটের প্রান্ত থেকে গলে পড়ছে রক্তের ধারা। কিন্তু, দেবীর সেই কঠিন রূপও বাঙালির সহ্য হয়নি। বাঙালি তাই কালীর মূর্তি তৈরি করেছে দক্ষিণা বা উদার রূপে। যেখানে তিনি সাধকের সাধনায় সন্তুষ্ট হয়ে তাঁর অভীষ্ট পূরণ করছেন। ঠিক যেন রামকৃষ্ণ আর রামপ্রসাদের ভাবনার মতো।
আরও পড়ুন-উত্তরপ্রদেশে কালা জাদুর বলি দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র, গ্রেফতার শিক্ষক-সহ ৫
দুর্গাপুজোর অষ্টম দিন দেবীকে পুজো করা হচ্ছে মহাগৌরী রূপে। দেবী শ্বেতবর্ণা। তাঁর আগমন যেন রাতের পর দিনের আলো আসার মতো। সপ্তমীতে দেবী কালরাত্রির পুজোর পর, অষ্টমীতে তেমন ভাবেই যেন আগমন ঘটে দেবী মহাগৌরীর। চতুর্ভুজা দেবী। তাঁর ডান দিকের এক হাতে থাকে ত্রিশূল। অন্য হাতে অভয়মুদ্রা। বাম দিকের ওপরের হাতে ধরা ডমরু। অন্য হাতে বরাভয় শোভা পায়।
দেবীর বসন শুভ্র। মূর্তিভেদে তিনি কোথাও একহাতে পদ্মফুল ধরে রাখেন। অন্য হাতে ধরে রাখেন জপমালা। পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী, দেবী কালী ব্রহ্মাকে তপস্যায় তুষ্ট করেছিলেন। ব্রহ্মার আশীর্বাদেই তিনি মানস সরোবরে স্নান করেছিলেন। ঘোর কৃষ্ণবর্ণা থেকে হয়ে উঠেছিলেন মহাগৌরী।
নবদুর্গার নবম তথা শেষ রূপ হল সিদ্ধিদাত্রী। সিংহবাহিনী দেবীর চার হাতে আশীর্বাদী মুদ্রা। অপরূপ লাবণ্যময়ী চতুর্ভুজা, ত্রিনয়নী, প্রাতঃসূর্যের মতো রঞ্জিতা যোগমায়া মাহেশ্বরী ইনি সকল কাজে সিদ্ধি প্রদান করেন।
সিদ্ধি হল আধ্যাত্মিক ক্ষমতা যা একজন ব্যক্তিকে জীবনের সাধারণ জিনিসের চেয়ে আরও বেশি করে সফল হতে সহায়তা করে। ন’দিন ব্যাপী এই নবরাত্রি পূজনের শেষে মহানবমী তিথিতে সিদ্ধি বা সাফল্যলাভ হেতু দেবী সিদ্ধিদাত্রীর আরাধনা করা হয়।
প্রাচীন কাল থেকে প্রকৃতিকে মা মনে করা হয়। প্রকৃতিই মহামায়া— এই বিশ্বাসে উপাসনা করা হত প্রকৃতির। তারই ধারবাহিকতায় বর্তমানে কুমারীকে দেবী জ্ঞানে আরাধনা করা হয়। উপাসনা করা হয় নিষ্পাপতার। মানবজীবনের কলুষতা যাদের মধ্যে প্রবেশ করেনি তাদের দেবীরূপে আরাধনা করা হয়। ঋতুমতী হয়নি এমন কন্যাকে নতুন পোশাক, অলংকার, মুকুট ও তিলক, আলতা, আর মালা পরিয়ে পূজা করা হয় দেবীজ্ঞানে। এ-সময় কুমারীর হাতে থাকে পদ্ম।
আরও পড়ুন-মাত্র দুটি সংসদীয় কমিটির শীর্ষে মহিলা কেন? প্রশ্ন ডেরেকের
সারা ভারতে বিশেষত উত্তর ভারতে নবরাত্রির প্রাধান্য প্রভূত। ওখানে বিশ্বাস মতে শারদীয়া দুর্গাপুজো রামচন্দ্র করেছিলেন। অকালবোধন করে দেবীকে জাগিয়ে, দেবীর আশীর্বাদে রাবণ বধ করলেন। তাই নবরাত্রীর শেষে আসে দশেরা। খড়ের রাবণের গায়ে আগুন লাগিয়ে মানুষ উপভোগ করে অসুরবধের আনন্দ। মার্কণ্ডেয় পুরাণে অর্থাৎ শ্রীশ্রী চণ্ডীতে লেখা শ্লোক— ‘শরৎ কালে মহাপূজা’ দেখে উপাসকদের মতো দুর্গাপূজা প্রচলিত ছিল, রামকে কোনও কিছুই করতে হয়নি। তন্ত্রসাধনার মূল ভিত্তি এই বাংলার মাটি। তাই বাঙালির উৎসব আলাদা। আমাদের দুর্গাপুজো শুরু ষষ্ঠীর অধিবাস দিয়ে আর শেষ হয় দশমীর সিঁদুর খেলা দিয়ে।
সাংখ্যদর্শন জানায় প্রকৃতি থেকে উদ্ভুত জীবকুল এবং তার লয় প্রকৃতিতেই। তাই প্রকৃতিই উপাস্য, প্রকৃতিই ধর্ম। একটা বছর ঠিক যেন দুটো সমান ভাগ। সূর্যের উত্তরায়ণ আর সূর্যের দক্ষিণায়ন। বছরে দু’বার চাষ, রবি আর খারিফ। ফসল কাটার পর বছরে দু’বার মূল উৎসব। ছট থেকে শুরু করে দুর্গাপুজো সব দু’বার। দশেরায় আগুন উৎসব আবার চাঁচর পোড়ায়। ফসল কাটার পর আগাছা পোড়ানো নাকি পোকামাকড় তাড়াতে এই আগুনের উৎসব সেকথা জানাবেন ইতিহাসবিদরা। আমরা জানি প্রকৃতিই ঈশ্বর আর ঈশ্বরই প্রকৃতি। নবরাত্রি হোক বা দুর্গাপুজো উৎসবের আনন্দে প্রকৃতিকে যেন ভুলে না যাই।