প্রতিবেদন : দেশের মেডিক্যাল (NEET) শিক্ষায় অভূতপূর্ব সংকট। যোগ্য পড়ুয়ার তুলনায় আসনের সংখ্যা যৎকিঞ্চিৎ। ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য ঘোষিত জাতীয় মেডিক্যাল কমিশনের (এনএমসি) তথ্য অনুযায়ী, ভারতে বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে ৭৮০ টি মেডিক্যাল কলেজে মোট এমবিবিএস আসন রয়েছে ১,১৮,১৯০টি। অন্যদিকে, এই বছর জাতীয় টেস্টিং এজেন্সি (এনটিএ) জানিয়েছে, মোট ২২.০৯ লাখ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১২.৩৬ লাখ শিক্ষার্থী এনইইটি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। এই সংখ্যাটি গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম—২০২৪ সালে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১৩.১৫ লাখ। এতে বোঝা যায়, প্রতি দু’জন পরীক্ষার্থীর একজনের একটু বেশি এই প্রতিযোগিতামূলক প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও, এমবিবিএস আসনের পরবর্তী ধাপে গিয়ে বহু শিক্ষার্থীর জন্য উচ্চশিক্ষার পথ রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। কারণ, প্রায় ১২ লক্ষ উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী এমবিবিএস আসন পাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে চলেছেন। যাঁরা এই আসন পাবেন না, তাঁদের অনেকেই বিদেশে পড়াশোনা অথবা প্যারামেডিক্যাল, ডেন্টাল বা অন্যান্য চিকিৎসা-সংশ্লিষ্ট বিকল্প খুঁজে নিতে বাধ্য হবেন। জাতীয় মেডিক্যাল (NEET) কমিশনের প্রকাশিত ২০২৪-২৫ সালের স্নাতক স্তরের আসন তথ্য অনুযায়ী, ভারতে যে পাঁচটি রাজ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক এমবিবিএস আসন রয়েছে, সেগুলি হল: তামিলনাড়ুতে ১১,৭২৫টি, উত্তরপ্রদেশে ১১,২২৫টি, কর্নাটকে ১১,০৪৫টি, মহারাষ্ট্রে ১০,৫৯৫টি, তেলেঙ্গানায় ৮,৫৪০টি। এই পাঁচটি রাজ্য সম্মিলিতভাবে দেশের মোট আসনের প্রায় ৪৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৫৩,০০০-এরও বেশি এমবিবিএস আসন প্রদান করে। ফলে এসব রাজ্যের শিক্ষার্থীদের সুযোগ তুলনামূলকভাবে বেশি। অন্যদিকে, ভারতের কিছু রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে এখনও চিকিৎসা শিক্ষার পরিকাঠামো দুর্বল, যার ফলে সেসব অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা চরম অসুবিধায় পড়ছেন। এসব জায়গায় আসনের সংখ্যা অত্যন্ত সীমিত: অরুণাচল প্রদেশ ৫০টি, মেঘালয়ে ৫০টি, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে ১১৪টি, দাদরা ও নগর হাভেলি ১৭৭টি, সিকিম ১৫০টি। এই অঞ্চলগুলোর অনেক সরকারিকৃত মেডিক্যাল কলেজ না থাকায় শিক্ষার্থীরা প্রায়শই বেসরকারি কলেজ অথবা অন্য রাজ্যে সস্তা বা সহজলভ্য বিকল্প খোঁজেন। ফলে অর্থনৈতিক সামর্থ্য অনুযায়ী শিক্ষার সুযোগ মারাত্মকভাবে সীমিত হয়ে পড়ে। ভারতের চিকিৎসা শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা যেমন তীব্র, তেমনি পরিকাঠামোর বৈষম্যও প্রকট। এনইইটি উত্তীর্ণ হওয়া মানেই সাফল্যের শেষ কথা নয়। বরং এমবিবিএস আসন পাওয়া হয়ে উঠছে দুরূহ এক চ্যালেঞ্জ। চিকিৎসা শিক্ষার চাহিদা দিন দিন বাড়লেও, আসন বৃদ্ধির গতি তার ধারেকাছে নেই। এই বৈষম্য ও সীমাবদ্ধতা দূর করতে সরকার ও নীতি-নির্ধারকদের কার্যকর হস্তক্ষেপ এখন সময়ের দাবি।
আরও পড়ুন-বেপরোয়া ইরান, মিসাইল হামলা ইজরায়েলের মার্কিন দূতাবাসে