প্রতিবেদন : আজ থেকে বছর পঞ্চাশেক আগে কি কোনও কোম্পানি ভাল আইটি ম্যানেজার খুঁজত বা কোনও কোম্পানি কি চাইত একজন ভাল ডিজিটাল মার্কেট এক্সপার্টকে? না । কারণ তখন শিল্প-ব্যবসা-বাণিজ্য আজকের মতো কম্পিউটার টেকনোলজির ওপর নির্ভরশীল ছিল না। ঠিক তেমনই আগামী ৫০ বছর তো দূরের কথা, পাঁচ থেকে দশ বছরের মধ্যেই মেশিনারি ইন্টেলিজেন্সের উপর কর্মজগতের নির্ভরশীলতা অনেক গুণ বেড়ে যাবে। বেশ কিছু নতুন কর্ম-পদের সঙ্গেও পরিচিত হব আমরা।
ফিকি ও ন্যাসকমের একটি যৌথ রিপোর্ট বলছে, দেশের পাঁচটি প্রথম সারির ম্যানুফ্যাকচারিং কর্মক্ষেত্র যথা আইটি, রিটেল, ফিনান্সিয়াল সার্ভিস, টেক্সটাইল এবং অটোমোবাইল জগতেই সবথেকে বেশি কর্মসংস্থান হবে। ২০২৩-২৪ এর মধ্যেই এই সেক্টরগুলিতে কর্মসংস্থান ৩৮ মিলিয়ন থেকে বেড়ে যাবে ৪৬-৪৮ শতাংশ। তবে বিস্ময়কর বিষয় হল, এর প্রায় ৯% ক্ষেত্রে এমন কাজের সুযোগ তৈরি হবে, যা এখন নেই এবং তার নামও কেউ শোনেনি। আরও ৩৭-৪০% চাকরিজীবীর কাজের ধরনই পরিবর্তন হয়ে যাবে।
ধরুন ডেটা ডিটেক্টিভ। এরকম পদের নাম আগে শুনেছেন? দেশের অন্যতম আইটি সংস্থা কগনিজেন্ট বলছে, এরকম এক ধরনের পদে কাজের সুযোগ হবে কিছুদিনের মধ্যে। যে-কোনও কোম্পানির কাছেই এখন প্রোডাকশনাল বা বিজনেস বা মার্কেটিং রিলেটেড ডেটা হল অমৃত ভাণ্ডার। সেটা দেখাশনার দায়িত্ব থাকবে এঁদের। এই ডেটা অ্যানালিসিস, ডেটা অ্যাসেসমেন্ট থেকে বিজনেস সলিউশন বা রেকমেন্ডেশন দেওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে এই ডেটা ডিটেক্টিভ।
আরও পড়ুন: বৃহস্পতিবার গোয়ায় তৃনমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দিপনা তুঙ্গে
এবার ধরুন ড্রোন পাইলট, ড্রোন নামক যন্ত্রটি মূল ধারায় যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, অনেক সংস্থা এমন ব্যক্তিদের নিয়োগ করছে যাঁরা সহজেই একটি পাবলিক প্লেসে ড্রোন পরিচালনা করতে পারেন। সম্ভবত, অ্যামাজন হল এই ধরনের কোম্পানির সবচেয়ে জনপ্রিয় উদাহরণ যেটি প্যাকেট ডেলিভারির জন্য তাদের গ্যাজেটগুলিকে চালিত করার জন্য ড্রোন পাইলট ব্যবহার করে। স্থানীয় সরকারগুলি ড্রোনকে অনুমতি দেওয়ার জন্য নতুন আইন পাশ করার কারণে, শহর সরকারগুলি ইতিমধ্যে পরিবেশ পরিচ্ছন্নতা এবং আবহাওয়ার প্রতিবেদনের মতো প্রকল্পগুলির জন্য ড্রোন পাইলট নিয়োগ করছে।
সাম্প্রতিক জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশের উপর এর প্রভাব কোম্পানিগুলিকে পরিষ্কার প্রযুক্তি নিয়ে পরীক্ষা করার জন্য চাপ দিয়েছে। আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে সৌর যন্ত্রের দাম সাশ্রয়ী হয়ে উঠবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। অতএব, ২০২৬ সাল পর্যন্ত সৌরশক্তি প্রযুক্তিবিদদের উচ্চ চাহিদা থাকবে। যে কেউ আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত দক্ষতা পেতে পারেন। বিকল্প শক্তির অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতার স্তরের উপর নির্ভর করে একজন টেকনিশিয়ানের ভাল বেতনের চাকরির সম্ভাবনা রয়েছে।
আগামী দিনে স্ব-চালিত গাড়ি ব্যবহার বৃদ্ধির প্রবণতা রয়েছে। এক্ষেত্রে ড্রাইভার বা কুরিয়র পদের অনেক চাকরির অবসান ঘটলেও অনেক নতুন কাজের সুযোগও তৈরি হবে একইসঙ্গে। স্ব-চালিত গাড়ি হলেও সেগুলি যন্ত্রাংশ পরিবর্তন বা রিপেয়ারিংয়ের জন্য নতুন প্রযুক্তির মেকানিক প্রয়োজন। ফলে সেলফ ড্রাইভিং কার মেকানিক প্রয়োজন পড়বে আগামী দিনে।
আরও পড়ুন : বিজেপিকে প্রাক্তন করে তৃণমূলে যোগ বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণীর
তারপর ধরুন এআই বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার। এআই অর্থাৎ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। হিউম্যান ইন্টেলিজেন্স-এর পাশাপাশি যত দিন যাচ্ছে, তত আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এর গুরুত্ব বাড়ছে। যে-কোনও কোম্পানিরই মার্কেটিং, বিজনেস ডেভেলপমেন্ট, কাস্টমার সার্ভিসের সঙ্গে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে মিলিয়ে দেওয়া হবে। গবেষকরা বলছেন, ওয়াকার/টকার বলে কোনও পদের কাজ তৈরি হতে পারে। এই চাকরিটি ভবিষ্যতের জন্য। বায়োটেকনোলজির উন্নতির জন্য মানুষ আগের চেয়ে বেশিদিন বাঁচছে এবং সেখানে আগের যে কোনও সময়ের তুলনায় প্রবীণ নাগরিকদের সংখ্যা বাড়বে। এই সমস্ত বয়স্ক ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলার জন্য কারও প্রয়োজন হবে। এই কাজটি ঠিক যেমন শোনাচ্ছে তেমনই হবে; সাহচর্যের প্রয়োজনে বয়স্ক ব্যক্তিদের সঙ্গে চলাফেরা করা এবং তাঁদের নাতি-নাতনিদের কথা বলা, ভাল দিনগুলি ইত্যাদির কথা শোনা ইত্যাদির জন্য প্রয়োজন হবে ওয়াকার বা টকার-এর কাজ
তাহলে, বোঝাই যাচ্ছে এখন যাঁরা পড়াশুনার জগতের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন, তাঁরা প্রায় সবাই ইন্টারনেট জগতের সঙ্গে যুক্ত, সুতরাং সবরকম কাজের সম্বন্ধেই খোঁজখবর রাখা শুরু করুন, হয়তো দেখা যাবে এক পরিবর্তিত যুগের অভিনব পদে আপনি নিযুক্ত হয়েছেন ভবিষ্যৎ কর্মজীবনে। হয়তো এইসব নতুনত্ব পদে কাজের জন্য সব ক্ষেত্রে আলাদা পাঠ্যক্রম তৈরি হবে, তা নয়। অর্থাৎ সব বিষয় নিয়েই যে স্কুল-কলেজে পড়ানো হবে, বিষয়টা এরকম নয়। আপনি নির্দিষ্ট কোন শাখার ট্রেনিং নিয়েছেন বা পড়াশুনা করেছেন, সেখান থেকেই স্পেশালাইজড দিকে গিয়ে এরকম নতুন ধরনের কর্মযজ্ঞে শামিল হতে পারেন।