প্রতিবেদন: বিদেশে ভারতীয় তরুণীর মৃত্যুদণ্ড রুখতে ব্যর্থ কেন্দ্রীয় সরকার। সোমবার কেন্দ্রের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টকে জানানো হয়, ইয়েমেনে মৃত্যুদণ্ডাদেশের মুখোমুখি কেরলের নার্স নিমিশা (Nimisha Priya execution) প্রিয়াকে (যাঁর মৃত্যুদণ্ড ১৬ জুলাই কার্যকর হওয়ার কথা) বাঁচাতে সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ করা হলেও তা ব্যর্থ হয়েছে। কেন্দ্রের পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল আর ভেঙ্কটরামানি স্বীকার করে নেন, এই ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকারের আর বেশি কিছু করার নেই। তাঁর মন্তব্য, এখন ইয়েমেনের সংবেদনশীলতার দিকে তাকিয়ে আছি আমরা। কূটনৈতিকভাবে স্বীকৃত সব পদক্ষেপ করা হলেও তার সুফল মেলেনি। ভেঙ্কটরামানি বলেন, ভারত সরকার একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত যেতে পারে। আমরা সেই সীমায় পৌঁছেছি। ইয়েমেন বিশ্বের অন্য কোনও অংশের মতো নয়। আমরা পরিস্থিতিকে প্রকাশ্যে এনে জটিল করতে চাইনি, তাই আমরা ব্যক্তিগত স্তরে চেষ্টা করছি।
এদিন বিচারপতি বিক্রম নাথ এবং সন্দীপ মেহতার একটি বেঞ্চ ‘সেভ নিমিশা প্রিয়া ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকশন কাউন্সিল’-এর একটি আবেদন শুনছিল, যেখানে কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে আলোচনায় সহায়তা করার জন্য কেন্দ্রকে নির্দেশ দিতে আদালতের হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছিল। আবেদনকারীদের পক্ষে আইনজীবী জানান যে, প্রিয়ার পরিবার এবং সমর্থকরা নিহত ব্যক্তির পরিবারের সাথে ‘ব্লাড মানি’ (রক্তমূল্য) নিয়ে আলোচনা করছে, যাতে শরিয়া আইন অনুযায়ী তাঁকে ক্ষমা করা যেতে পারে। আইনজীবী আরও বলেন যে প্রিয়ার মা ইয়েমেনে রয়েছেন এবং অ্যাকশন কাউন্সিল শুধুমাত্র কেন্দ্রকে পরিবারের সাথে আলোচনায় হস্তক্ষেপ করার অনুরোধ করছে, যখন শরিয়া আইন অনুযায়ী রক্তমূল্যের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি-জেনারেল উল্লেখ করেন যে ‘রক্তমূল্য একটি ব্যক্তিগত আলোচনা’। তিনি যোগ করেন, প্রকৃতপক্ষে কী ঘটছে তা জানার কোনও উপায় নেই। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, সরকার ইয়েমেনের একজন প্রভাবশালী শেখের কাছেও পৌঁছেছে এবং পাবলিক প্রসিকিউটরকে মৃত্যুদণ্ড স্থগিত করার অনুরোধ করেছে, কিন্তু তাতেও খুব বেশি কিছু হচ্ছে না। তিনি বলেন, আমরা অসরকারি সূত্রে জানতে পেয়েছি যে মৃত্যুদণ্ড স্থগিত করা হবে, তবে এটি সত্যিই কার্যকর হবে কি না বা বিশ্বাসযোগ্য কি না তা আমরা জানি না।
আরও পড়ুন-৬ দিন পর যমুনা থেকে উদ্ধার দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর দেহ
এই পরিপ্রেক্ষিতে গোটা বিষয়টিকে সংবেদনশীল আখ্যা দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি মেহতা বলেন, ঘটনাটি যেভাবে ঘটেছে তা উদ্বেগের বিষয় এবং সত্যিই যদি তাঁর প্রাণদণ্ড কার্যকর হয় তবে তা হবে খুবই দুঃখজনক। আবেদনকারীর আইনজীবী বলেন যে, অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী সাহায্য করতে পারছেন না কারণ এটি ইয়েমেন। আমরা তাঁকে বাঁচাতে আরও বেশি রক্তমূল্য দিতেও ইচ্ছুক। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এটি এমন একটি বিষয় নয় যেখানে সরকারকে যা তারা ইতিমধ্যেই করেছে তার বাইরে কিছু করতে বলা যেতে পারে। নিমিশার (Nimisha Priya execution) ফাঁসি রুখতে কেন্দ্রের অপারগতার কথা জানিয়ে ভেঙ্কটরামানি বলেন, সরকারের আর কিছু করার নেই। ইয়েমেন নিয়ে স্পর্শকাতরতার বিষয়টি দেখুন। ইয়েমেনকে কূটনৈতিকভাবে ভারত স্বীকৃতি দেয়নি। সরকারি স্তরে আর কিছু করা সম্ভব নয় বলেও শীর্ষ আদালতকে জানিয়ে দেন তিনি। সোমবার কেন্দ্রের বক্তব্য শুনে সুপ্রিম কোর্ট ১৮ জুলাই পর্যন্ত বিষয়টি স্থগিত করেছে এবং সেই সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করার নির্দেশ দিয়েছে।
কেরলের পালাক্কাডের বাসিন্দা নিমিশা প্রিয়াকে ২০১৭ সালে তালাল আবদো মাহদিকে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। ইয়েমেন থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় তাঁকে গ্রেফতার করা হয় এবং ২০১৮ সালে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। নার্স হওয়ার পর বেশি রোজগারের আশায় নিমিশা প্রিয়া ২০০৮ সালে ইয়েমেনে চলে যান। ২০১১ সালে তিনি কেরলের টমি থমাসকে বিয়ে করেন এবং তাঁর সাথে ইয়েমেনে ফিরে আসেন। তিনি যেমন নার্স হিসাবে কাজ করতেন তেমনি তাঁর স্বামী ইলেকট্রিশিয়ান হিসাবে কাজ করতেন। তবে দু’জনেই নিজেদের ক্লিনিক শুরু করার স্বপ্ন দেখতেন। কিন্তু ইয়েমেনি আইন অনুযায়ী, এজন্য তাদের একজন স্থানীয় অংশীদার প্রয়োজন ছিল। এই কারণে কেরলের দম্পতি মাহদির কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। প্রিয়া যেখানে নার্স হিসাবে কাজ করতেন সেই ক্লিনিকের একজন নিয়মিত রোগী ছিলেন মাহদি। এমনকী ২০১৫ সালে নিমিশা প্রিয়ার মেয়ের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তিনি কেরলেও আসেন। নিমিশা ইয়েমেনে ফিরে আসার পর গৃহযুদ্ধের কারণে তাঁর স্বামী এবং মেয়ে তাঁর সঙ্গে যেতে পারেননি। তাঁরা কেরলেই থেকে যান। ইয়েমেনে মাহদি নিমিশার অসহায় অবস্থার সুযোগ নেন। নতুন ক্লিনিক খোলার পরেও তাঁর আয়ের ভাগ দেননি নিমিশা…