প্রতিবেদন : এখনও ভয়াবহ অবস্থা মণিপুরে। গত তিন মাস ধরে রক্তের হোলি খেলা চলছে উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে। জাতিদাঙ্গায় শেষ হয়ে গিয়েছে দুশোর বেশি মানুষ। যাঁরা কোনওক্রমে বেঁচে গিয়েছেন তাঁরা প্রতি মুহূর্তে আতঙ্কে দিন কাটছে বিভিন্ন শিবিরে। শনিবার ইন্ডিয়া জোটের সাংসদরা দিনভর মণিপুরে দফায় দফায় কুকি ও মেইতেইদের বিভিন্ন ক্যাম্পে ঘুরে বেড়িয়েছেন। কখনও গিয়েছেন চূড়াচাঁদপুর, কখনও মল্লারপুর। গিয়েছেন গণধর্ষণের পর নগ্ন করে ঘোরানো মহিলাদের বাড়িতেও।
আরও পড়ুন-জ্বলছে মণিপুর, লজ্জিত-মর্মাহত দেশ, নির্লজ্জ বিজেপি, দিল্লির ‘গুন্ডা’কে তৃণমূলের তোপ
যেখানেই গিয়েছেন মণিপুর সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ভূরি ভূরি অভিযোগ করেছেন মানুষ। ইন্ডিয়া দলের সঙ্গে মণিপুর যাওয়া তৃণমূল সাংসদ সুস্মিতা দেব ইম্ফল থেকে বললেন, নির্যাতিতা মহিলাদের পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন, মণিপুরের বিজেপি সরকার ও তাদের পুলিস মণিপুরবাসীকে মরার জন্য অসহায় অবস্থায় ছেড়ে দিয়েছে। নাগরিকদের রক্ষা করতে বিন্দুমাত্র এগিয়ে আসেনি। তাঁর সংযোজন, আমরা যা দেখলাম তা ভয়ঙ্কর। সংসদে আমরা এ-বিষয়গুলি তুলব। আর একইসঙ্গে আমাদের প্রতিবাদ-আন্দোলন চলবে সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতির জন্য।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
এখনও থমথমে গোটা মণিপুরে জাতিবিদ্বেষ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে অন্য পক্ষের ড্রাইভারকেও অপর পক্ষ ঢুকতে দিচ্ছে না। ফলত ইন্ডিয়া সদস্যদের ঘুরতে হচ্ছে হেলিকপ্টারে। সাংসদ সুস্মিতা দেব জানিয়েছেন, একটিমাত্র হেলিকপ্টার পাওয়া গিয়েছে। তাতেই দুটি টিম (টিম ‘এ’, টিম ‘বি’) ভাগ করে বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া হচ্ছে। শনিবার সকালেই ইম্ফল পৌঁছেই তাঁরা শিবির পরিদর্শনে বেরিয়ে পড়েন। পাহাড় ও সমতল— দু’জায়গাতেই তাঁরা যান। এদিন তাঁরা দেখা করেন রাজ্যপাল অনসূয়া উইকেইয়ের সঙ্গে। ইন্ডিয়ার সদস্যদের মণিপুর সফরকে স্বাগত ও সাধুবাদ জানাচ্ছে গোটা দেশ। শনিবার সকাল থেকেই এই খবরে চোখ রয়েছে দেশবাসীর।
আরও পড়ুন-৬ যাত্রীর মৃত্যু দুই বাসের সংঘর্ষে
মণিপুরের বেশ কিছু উপজাতি দল ইন্ডিয়া জোটের সদস্যদের চিঠি লিখে সংকটের অবসানের জন্য রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি জানিয়েছে। একসঙ্গে আদিবাসী উপজাতি নেতাদের ফোরাম ইন্ডিয়া জোটের সদস্যদের প্রশাসনের থেকে বিষয়টি নিজেদের হাতে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স (ইন্ডিয়া)-এর সদস্যদের উদ্দেশে লেখা চিঠিতে আইটিএলএফ অভিযোগ করেছে যে সব পক্ষই ভুগছে, সংখ্যালঘু কুকি-জো উপজাতিরা বেশি হিংসার শিকার হয়েছে। তাদের মৃত্যু হয়েছে দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি। আদিবাসী সংগঠনের পক্ষ থেকে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, নিহতদের বেশিরভাগই নিরীহ সাধারণ নাগরিক। তাদের বাড়ি, অফিস বা রাস্তায় জোর করে টেনে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন-বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে মৃত ৮
৭,০০০টিরও বেশি বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, ৩৫৯টি গির্জা ধ্বংস করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৪০,০০০-এরও বেশি আদিবাসী বাস্তুচ্যুত হয়েছে। চূড়াচাঁদপুরে ইন্ডিয়া ‘বি’ টিম ডন বসকো স্কুলের মধ্যে একটি ত্রাণশিবিরে পরিদর্শনে যায়। শিবিরের শরণার্থীরা হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে ইন্ডিয়া জোটের সামনে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানায়। ওই প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, আমরা এই পরিস্থিতির একটা সমাধান চাই। আর কতদিন আমরা এইভাবে ভুগব। আজ, রবিবার সকালেই মণিপুরের রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে টিম ইন্ডিয়া।

