প্রধানমন্ত্রী যতই পতাকা নাড়ান কৃতিত্ব কিন্তু বাংলার মুখ্যমন্ত্রীরই

Must read

অশোক মজুমদার
আজ মেট্রোপথে জুড়ে যাচ্ছে শিয়ালদা-এসপ্ল্যানেড। রুবির সঙ্গে বেলেঘাটা এবং কলকাতা বিমানবন্দরের সঙ্গে নোয়াপাড়া। খোদ প্রধানমন্ত্রী আসছেন উদ্বোধনে। কলকাতা শহরের মুকুটে এই নতুন পালকটির জন্য সকলেই অত্যন্ত আনন্দিত।
সবুজ পতাকা যেই নাড়ুন এই গর্বের মুহুর্তের সম্পূর্ণ দাবীদার একমাত্র আমাদের মুখ্যমন্ত্রী। আজ শহরজুড়ে মেট্রোর এই নতুন রুট নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া, খবরের কাগজ ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার উন্মাদনা ও মানুষের মধ্যে খুশির বীজটা অনেক আগেই বপন হয়েছে তাঁর হাত দিয়েই।
শহরের চতুর্দিকে মেট্রো পৌঁছানোর পরিকল্পনা তিনিই রেলমন্ত্রী থাকাকালীন নিয়েছিলেন। আমি নিজেই তো সেইসময় শিলান্যাস অনুষ্ঠানে ছবি তুলেছি। নরেন্দ্র মোদি তো শুধুমাত্র নিয়মরক্ষা করবেন। সে করুন। দেশের প্রধানমন্ত্রী তো তিনিই।
আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই অনুষ্ঠানে থাকবেন না বলে জানিয়েছেন। ঠিকই করেছেন। সামনেই আগত ভোটের হিসাব করে এই লোকদেখানো সভ্যতার কৌশলটি বিজেপির নতুন নয় সেটা বুঝতে কারো বাকি নেই।
তাছাড়া এর আগে কেন্দ্র রাজ্য যৌথ অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীকে ইচ্ছাকৃত কটূক্তি অপমান করার যে উশৃঙ্খলতা দেখা গেছে তা সবটাই ছিলো বিজেপির পরিকল্পনামাফিক। ফলে যারা সভ্যতা তো দুর প্রোটোকল মানে না তাদের সবটাই লোকদেখানো ছাড়া আর কিছুই নয়।
এমনিতেই বিগত বছরগুলোতে বিজেপি সরকার চালিত রেলের যা হাল তার লিস্ট লিখতে বসলে মহাকাব্য হতে পারে। শুধুমাত্র রেল এক্সিডেন্ট ধরলেই তো এরা সাফল্যের শীর্ষে অধিষ্ঠান করছে। পাশাপাশি বাস্তব সত্য এটাই যে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের রেলমন্ত্রীত্বে দেশজুড়ে নতুন লাইন, নতুন ট্রেন, নতুন প্রকল্প, স্টেশন উন্নয়ন সহ কাজের তালিকা বিশাল।
রেলমন্ত্রী হিসাবে তিনি তাঁর স্বল্প সময়ে শুধু মেট্রো নয় গোটা দেশের রেল ব্যবস্থার খোলনলচে বদলে দিয়েছিলেন। দুরন্ত এক্সপ্রেস, রূপসী বাংলা, পদাতিক, কান্ডারীর মত বহু ট্রেন আজ রেলযাত্রী জনজীবনে অত্যন্ত কার্যকরী। মেয়েদের জন্য মাতৃভূমি লোকাল, কুড়ি টাকার মান্থলির মত প্রোগ্রামগুলো ওনার আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটকে বিবেচনা করার চিরকালীন মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি একথা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। এইতো কদিন আগে আমাদের শিয়ালদহ রাজধানী এক্সপ্রেস মহা ধুমধাম করে পঁচিশ বছরের জন্মদিন পালন করলো।
আমার মনে আছে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেড়শো বছরের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে তিনি দেশজুড়ে বিভিন্ন স্টেশনে কবির জীবন কাব্য কবিতা সম্মিলিত ছবি দিয়ে সাজানো ট্রেন কোচ চালিয়েছিলেন দেশজুড়ে। তিনিই প্রথম ট্রেনকে কাজে লাগিয়েছিলেন সাংস্কৃতিক চেতনার বিকাশ জাগাতে। কারণ এদেশে ট্রেনই একমাত্র গণপরিবহন যা ভারতবর্ষ নামক বিশাল দেশটাকে জুড়ে রেখেছে জালের মত বিছানো রেললাইনে। ভীষন জনপ্রিয় হয়েছিলো ওই ট্রেনটি। বিভিন্ন স্টেশনে লাইন দিয়ে স্কুলের ছাত্রছাত্রী সহ সাধারণ মানুষের ট্রেনটি দেখার জন্য লাইন পরে যেত।
বদলে যাওয়া সময়ের স্রোতে গা ভাসিয়ে অনেকেই অতীতকে পাত্তা না দিয়ে বর্তমানের অহংকারে মত্ত ঠিকই কিন্তু এই শহর জানে আজকের মুহুর্তটা শুধুমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্যই সম্ভব হয়েছে।
আজ তাই নরেন্দ্র মোদি যতই ঢাকঢোল পিটিয়ে উদ্বোধন করুন না কেন ইতিহাস কিন্তু লিখে রেখেছে মেট্রো সম্প্রসারণ করে কলকাতা শহরকে চারপ্রান্তে জুড়ে দেবার কারিগর বাংলার মেয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

আরও পড়ুন-সংসদ এবারও দেখল তৃণমূলের জোশ, বিরোধীদের নেতৃত্বে বাংলার শাসক দলই

Latest article