নাহ্! ২০২৬-এও হবে না

যত দিন এগোচ্ছে ততই বিজেপি নেতাদের বাংলা জয়ের প্রত্যয় 'আমতা-আমতা’য় পরিণত হচ্ছে। আর বিজেপি যত ব্যাকফুটে যাচ্ছে ঠিক ততটাই ফ্রন্টফুটে এসে একের পর এক ছক্কা হাঁকাচ্ছে ঘাসফুল। লিখছেন পার্থসারথি গুহ

Must read

বিজেপি নাকি বাংলা দখল করবে। এই গপ্পো শুনে কার্যত ঘোড়ার মুখেও হাসি ফুটেছে। হাসির চোটে এমন চিঁহিঁইইই করে উঠেছে যে ধর্মের ষাঁড়, বকতপস্বী বিজেপি নেতারা বেজায় ঘাবড়ে গিয়েছে। কার্যত ঘোড়-পুলিশের ডান্ডা খেয়ে ঠান্ডা হওয়ার জিগির তাদের। এমতাবস্থায় বিজেপির যখন এমন তথৈবচ বেহাল দশা তখন অপরদিকে দিব্যি নিশ্চিন্তে ফার্স্ট বয়ের মতো পড়াশোনা করে চলেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমোর নির্দেশে প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন জেলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথম স্থানাধিকারী ছাত্রর মতো সিলেবাস রিভিশন চলছে তৃণমূলের।
এর ফলে ইতিমধ্যেই ভোটযুদ্ধে প্রাথমিক বাজিমাত করে বসে আছে তৃণমূল। সেজন্যই নিয়ম করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর সুযোগ্য সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলে চলেছেন আগামী বিধানসভা নির্বাচনে পঞ্চাশ পেরবে না বিজেপি। যদিও এর মধ্যেও খানিকটা বিনয় দেখছে রাজনৈতিক মহল। কারণ,বিজেপির হাঁড়ির খবর রাখা ওয়াকিবহাল মহলের মতে কেন্দ্র এবং রাজ্যে সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে পদ্মশিবির ছত্রভঙ্গ। এমতাবস্থায়, রাজ্যে প্রধান বিরোধী দল হয়ে উঠতে ন্যূনতম যে ৩০টি আসন প্রয়োজন তার ধারকাছ দিয়েও যাবে না বিজেপি। অতএব অশ্বত্থামা হত ইতি গজ পর্ব সম্পন্নই আছে। শুধুমাত্র সিলমোহর পড়ার অপেক্ষা।

আরও পড়ুন-‘পাকিস্তানে ট্রাম্প পরিবারের ব্যবসার জন্য ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে’ বিস্ফোরক অভিযোগ প্রাক্তন মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টার

রাজ্যে বিজেপি এমনিতেই বহুধা শিবিরে বিভক্ত। প্রাক্তন সভাপতি, প্রাক্তনতর সভাপতি, নব্য সভাপতি, ফুটো কলস বিরোধী দলনেতা-সহ কত যে গোষ্ঠী তার ইয়ত্তা নেই। সেই বিরোধী নেতা আবার মানসিক বিকারে ভুগছেন। আর ক্ষমতায় আসার ভাটের প্রলাপ বকছেন। প্রতিপক্ষ যদি এতটাই দুর্বল এবং বাঙালি-বিরোধী হয় তাহলে মাঠ তো খেলার আগেই ফাঁকা হয়ে যায়।
তবে এটাও ঠিক বিরোধীরা আহাম্মক এবং দুর্বল বলে তৃণমূল কিন্তু মোটেই আত্মতুষ্ট নয়। বরং নিজেদের যাবতীয় দুর্বলতা দূরীকরণের মাধ্যমে নিজেদের সেরাটা দিতে পুরোপুরি প্রস্তুত। যত দিন এগোচ্ছে ততই বিজেপি নেতাদের বাংলা জয়ের প্রত্যয় ‘আমতা-আমতায়’ পরিণত হয়েছে। আর বিজেপি যতটা ব্যাকফুটে ঠিক ততটাই ফ্রন্টফুটে এসে একের পর এক ছক্কা হাঁকাচ্ছে ঘাসফুল।

আরও পড়ুন-পাঞ্জাব, জম্মু-কাশ্মীর, উত্তরাখণ্ড-সহ বিপর্যস্ত উত্তর ভারত, শতাধিক মৃত্যু, সাতদিনের সতর্কতা জারি করল আইএমডি

বিধানসভা নির্বাচন খাতায়-কলমে আর মাস সাতেক বাকি। মাঝে উৎসব মরশুম ধরলে ব্যবধানটা আরও কমে মাস পাঁচেকে চলে আসবে। তারওপর প্রস্তুতি পর্ব আছে। সেদিক থেকে পুজো, কালীপুজো মিটলেই কার্যত ভোটের দামামা বেজে যাবে। যদিও দিল্লির বিজেপি সরকার এমন দাবি করছে যেন এবার তাঁরা বাংলা দখল করে বসে আছে। আকাশকুসুম চিন্তায় ভর করে অনেক মিডিয়াও তাতে সুর মেলাচ্ছে। ভাবখানা এমন যেন দিল্লি এবং পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতারা রাস্তায় টিয়াপাখি নিয়ে বসেছে। বলাবাহুল্য, শেখানো-পড়ানো সেই টিয়াও গৈরিক গোয়েবলসদের সুরে বলছে, অব লেঙ্গে বঙ্গাল। দিল্লির দানবদের দেব সাজার নাটকে হাসছেন অন্তর্যামী। আর ফিরে তাকাচ্ছেন ২০২১ বিধানসভা ভোটের দিকে। প্রসঙ্গত, গল্পের গরু সেবারও গাছে তুলেছিল বিজেপি। অমিত শাহ তো এককাঠি এগিয়ে দাবি করেছিলেন, ইসবার দোশো পার। বস্তুত, সেই দুশো পার ব্যুমেরাং হয়ে বিজেপিকে কেমন পগারপার করেছিল সেই স্মৃতি এখনও অমলিন। তারপর বেশ কিছুদিনের বিরতি। ক্রিকেটে যেমন লাঞ্চ, টি-ব্রেক সহ প্রতি ঘন্টায় জলপান বিরতি লেগে থাকে মরশুমি রাজনৈতিক দল বিজেপিরও একইরকম অবস্থা বাংলায়। রাজ্যের এতগুলো বুথ। বিজেপি অন্ততপক্ষে আশি শতাংশ বুথে এজেন্ট বসানোর ক্ষমতাও রাখে না। এই ক্ষমতা কিন্তু বলপূর্বক করা সম্ভব নয়। সংশ্লিষ্ট মানুষের সহায়তা থাকলে রাজ্যের প্রতিটি বুথেই কোনও রাজনৈতিক দল নিজেদের এজেন্ট বসাতে পারে। সিপিএমের প্রবল অত্যাচার ও নির্যাতন সহ্য করেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কিন্তু জন্মলগ্ন থেকে বুথে বুথে এজেন্ট বসাতে সক্ষম হয়েছে। গড়ে তুলেছিল দক্ষ সংগঠন। সিপিএমের গুন্ডাবাহিনীর অত্যাচারে ক্ষতবিক্ষত হয়েছেন তাঁরা, মাথা ফেটে রক্তের বন্যা বয়ে গিয়েছে। তাও কিন্তু নিজেদের সংগঠন ক্রমশ বাড়াতে সক্ষম হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। আজ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্যব্যাপী যে নিচ্ছিদ্র, নিরবচ্ছিন্ন সংগঠন গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস, রূপান্তরিত হয়েছে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসে তার বুনোট রচিত হয়েছে কিন্তু হার্মাদ সিপিএমের বিরুদ্ধে পালটা লড়ার মতো শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তুলে। অগণিত তৃণমূল কর্মীর বলিদান ও রক্তঘামে ভেজা সেই সংগঠনের চারাগাছ আজ মহীরূহে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে বিজেপির যা কিছু সবটাই, মুখে মারিতং জগতং। কার্যে অশ্বডিম্ব। ওই যে বললাম, রাজ্যের অধিকাংশ বুথে যাঁরা কর্মী বসাবার ক্ষমতা রাখেন না, তাঁরা কী করে বাংলা জয় করবে! সেটাই লাখ টাকায় প্রশ্ন। যদিও তাতে থোড়ি কর্ণপাত করছে বিজেপি এবং তাদের স্যাঙাতরা। অলীক, অবাস্তব বাংলা জয়ের স্বপ্নে বিভোর তারা। এবার কেউ যদি গঞ্জিকা সেবন করে রূপকথার ব্যাঙ্গমাবেঙ্গমির গল্প ফেঁদে বসে তাহলে কীইবা বলার আছে। মাঠে-ময়দানে না থেকেও ফেসবুক তথা সোশ্যাল মিডিয়ায় খাপ পঞ্চায়েত বসিয়ে বিজেপি আকাশকুসুম স্বপ্ন দেখছে। যথারীতি গোদি মিডিয়া বা পক্ষান্তরে মোদি মিডিয়া অলীক চিত্রনাট্য রচনায় কিছু স্বপন কুমারের আজগুবি গল্পের জোগান দিচ্ছে। যাতে ভর করে আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ হাতে পাওয়ার ভান করছেন বিজেপির এ রাজ্যের সেই নেতারা যাঁদের মাটির সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই। বাংলা ভাষা ও বাঙালিকে প্রতিনিয়ত অপমান করে চলেছে যে বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকার তাদের তল্পিবাহক হয়ে এ রাজ্যের ভোটারদের ভবি ভোলাতে চাইছে। পুরো বিষয়টাই বড্ড বেশি ফাঁপা এবং দুর্বল চিত্রনাট্য প্রসূত। বাঙালির হৃদয় ও মনের নাগাল না পেয়ে শুধুমাত্র টাকার জোরে বাংলা দখলের এই স্বপ্ন যারা দেখছে তাদের চোখে নির্ঘাত ভালমতো ছানি পড়েছে। কারণ, বাঙালি আর যাই হোক কোনও দিন টাকার কাছে নিজেকে বিক্রি করেনি। হ্যাঁ, হাতের পাঁচ আঙুল যেমন সমান হয় না, তেমনই গুটিকয়েক বেইমান, বিশ্বাসঘাতক, দালাল এ-যুগেও আছে। গদ্দার অধিকারী, ন্যাড়া নাড়ু, অচল ঘোষের মতো কতগুলো অর্বাচীন বাঙালি বিদ্বেষী প্রভুদের বুট চেটে চলেছে। যদিও তাদের নিজেদের এলাকার মানুষের কাছেই গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে তারা। কুকুরও নিজের এলাকায় শের হয়। কিন্তু এই নরপিশাচগুলো গলিগালা খুঁজে কার্যত ইঁদুরের গর্তে সেঁধিয়ে গিয়েছে।

Latest article