অন্তরা চৌধুরী, সঙ্গীতশিল্পী
বাবা বলতেন, লতা মঙ্গেশকর হলেন মা সরস্বতী। আর অদ্ভূত সমাপতন হল এই যে, সরস্বতীপুজোর বিসর্জনের দিনই উনি চলে গেলেন। খুবই কষ্টের একটা দিন। তবে, লতা মঙ্গেশকর (Lata Mangeshkar) একজন কিংবদন্তি। আমার মতে, কিংবদন্তির মৃত্যু হয় না। উনি আমারও সঙ্গীতগুরু ছিলেন। ওঁর গান শুনেই বড় হয়েছি।
আরও পড়ুন-সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকরের প্রয়াণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শোকবার্তা
তাঁর কাজের ভিতর দিয়ে তিনি সব সময় আমাদের মধ্যে থাকবেন। তাঁর গান অবিস্মরনীয়। বিশেষ করে আমার বাবা সলিল চৌধুরীর (Salil Chowdhuri) সঙ্গে লতাজির যুগলবন্দি এক একটা মুক্তোর মতো। এসব গান কি কখনও পূরণ হবে! আমার তো মনে হয় শুধু আমি কেন, সমস্ত সঙ্গীতপ্রেমী মানুষের মনেই আজীবন বেঁচে থাকবেন লতা মঙ্গেশকর।
লতাজির নিজের শিল্পের উপর অত্যন্ত দখল ছিল। একবার মনে আছে, 2013 সালে ‘সলিল রচনা সংগ্রহ’ নামে একটি বই প্রকাশ করেছিলাম আমরা। সেই বইয়ের মুখবন্ধ লিখে দিয়েছিলেন লতা মঙ্গেশকর। সেই সময় যখন তাঁর সঙ্গে দেখা করি, তিনি হাসতে হাসতে বলেছিলেন, “তোমার বাবার গান আমি যত ভালো গাই আর কেউ সেটা গাইতে পারবে না, আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি।” মজা করেই বলেছিলেন। কিন্তু এটাও ঠিক সলিল চৌধুরীর কম্পোজিশনে লতা মঙ্গেশকরের গান উচ্চতার শিখর ছুঁয়েছিল।
আরও পড়ুন-উনি কোথাও যাননি, আমাদের মধ্যেই আছেন: হৈমন্তী শুক্লা
লতা মঙ্গেশকর যে একজন কিংবদন্তী গায়িকা ছিলেন তাই নয়, ওঁর আর একটা গুণ ছিল, উনি যে কোনও গান খুব মন দিয়ে শুনতেন। দূরদর্শনে একবার দেশ রাগের উপর আমার একটি গান শুনে খুব প্রশংসা করেছিলেন লতাজি। পরে দেখা হলে অনেক আশীর্বাদও করেছিলেন, যা আজীবন আমার সঙ্গে থাকবে। অত্যন্ত ভালো মনের মানুষ ছিলেন। খুবই সরল জীবনযাপন। “আজ তবে এইটুকু থাক, বাকি কথা পরে হবে”, “কী যে করি দূরে যেতে হয়, সুরে সুরে কাছে যেতে চাই”, “আজ নয় গুনগুন গুঞ্জন প্রেমের… পৃথিবী তোমারে চায়” আজ ঘুরে ফিরে এই গানগুলির কথাই মনে পড়ছে।