ভাবের ঘরে চুরি করতে করতে কী হাল হয়েছে বিজেপির! জানলে চোখ কপালে ওঠার উপক্রম।
মোদির কুশাসনে গোটা দেশ যেন বারুদের স্তূপের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। টালমাটাল অবস্থা। সারা দেশের মোট ভোটারের প্রায় এক তৃতীয়াংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের, যাদের ভোটের উপর নির্ভর করে প্রায় দেড় শতাধিক লোকসভা আসনের ভাগ্য। তাই গেরুয়া শিবিরের ঝুলি থেকে এখন বেড়াল বেরিয়ে পড়েছে। তাই লোকদেখানো সংখ্যালঘু তোষণে ক’দিন ধরেই বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছেন মোদি-শাহরা।
প্রথমে ঠিক হয়েছিল, সংখ্যালঘুদের জন্য মোদি সরকার কী কী করেছে, তাই নিয়ে প্রচারের জন্য ‘মোদি মিত্র’ নামে এক বিশেষ বাহিনী সংখ্যালঘু পরিবারে গিয়ে প্রচার করবে। বলাই বাহুল্য, চলতি বছরের গোড়ায় এই কর্মসূচি নেওয়া হলেও এখনও তা লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছেও পৌঁছাতে পারেনি— বলছে তাদের দলীয় রিপোর্ট। অর্থাৎ ‘মোদি মিত্র’ হওয়ার লোক পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে রাজ্যে রাজ্যে দলীয় নেতৃত্বের একপ্রকার ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ অবস্থা। তবু আশা নিয়েই বাঁচা। বিজেপিও সেই আপ্তবাক্য মেনে হাল ছাড়তে নারাজ। কিন্তু দলিত সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের পাপ কি অত সহজে মুছে ফেলা যাবে?
এই প্রশ্ন যখন ঘুরপাক খাচ্ছে, তখন এসে গেল আরও একটা পরিসংখ্যান।
কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এসসি, এসটিদের নিয়ে গালভরা প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলেছে মোদি সরকার। সম্প্রতি রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান পদেও তফসিলি জাতিভুক্ত আধিকারিককে নিয়োগ করা হয়েছে। মন্ত্রকের ইতিহাসে যা প্রথম। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারি পরিসংখ্যানই বলছে, মোদি জমানায় সুরক্ষিত নন তফসিলি জাতি এবং উপজাতিভুক্তরা। বিশেষ করে দ্বিতীয় মোদি জমানার প্রথম চার বছরে তফসিলি জাতি এবং উপজাতিভুক্ত মানুষের উপর হামলা কিংবা অত্যাচারের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে মাত্রাছাড়া হারে। আরও উদ্বেগজনক হল, শেষ বছরেই এক্ষেত্রে দেশের মধ্যে শীর্ষ তিনটি রাজ্যই বিজেপি-শাসিত। উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান এবং মধ্যপ্রদেশ।
গোবলয়ে দলিতের উপর অত্যাচার অব্যাহত। এবারে বিহারের নওদা জেলায় দলিত সম্প্রদায়ের শতাধিক বাড়িতে আগুন দিল দুষ্কৃতীরা। ঘরছাড়া হয়ে অসহায় অবস্থা ওই পরিবারগুলির সদস্যদের। সত্যি কথা বলতে কি, এনডিএ সরকারের আমলে বিহারে ‘জঙ্গলরাজ’ চলছে। প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছিল, ৮০টি বাড়ি ভস্মীভূত হয়েছে। যদিও পুলিশের দাবি, মোট ২১টি বাড়িতে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটেছে। গ্রামবাসীরা জানান, দুষ্কৃতীরা জবরদস্তি বাড়িতে ঢুকে তাঁদের মারধর করে। এরপর শতাধিক বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। এমনকী হুঁশিয়ারি দিতে শূন্যে গুলি ছোঁড়ে দুষ্কৃতীরা। যদিও নওদা জেলার পুলিশকর্তা অভিনব ধীমানের দাবি, গুলি চালানোর বিষয়টি রটনা, ঘটনাস্থলে বুলেটের খোল পায়নি পুলিশ। দলিত অত্যাচারের ঘটনায় বিহার জুড়ে শাসক দলের প্রতি ক্ষোভ বাড়ছে। নিন্দার ঝড় উঠেছে। সবার একটাই বক্তব্য, বিহারে এনডিএ শাসনে জঙ্গলরাজ চলছে। চাপের মুখে রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ আমলাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। পুলিশের এডিজিকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছেন নীতীশ। সরকারের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ ছাড় পাবে না। কিন্তু সাধারণ মানুষ জানেন, এ-সবই লোক দেখানো, কথার কথা। কাজের কাজ কিস্যু হওয়ার নয়, হবে না কিস্যু। আসলে, বিহারের নওয়াদায় মহাদলিত বসতিতে গুন্ডাদের দ্বারা আতঙ্ক ছড়িয়েছে, এটি এনডিএ-র ডাবল ইঞ্জিন সরকারের অধীনে জঙ্গলরাজের আরেকটি প্রমাণ৷
মহান জঙ্গলরাজ! রাক্ষসদের শাসন। দলিত বাড়িতে অগ্নি সংযোগের ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, নরেন্দ্র মোদি এবং নীতীশ কুমারের শাসনে বিহার জঙ্গলরাজের শাসন সইছে। মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার উদাসীন। ভেতর ভেতর বেচারা জ্বলে মরে মিথ্যা ভাষণ, দলিতদের উপর অত্যাচার সহ্য করা হবে না!
বিজেপি এবং তার মিত্রদের চরম উদাসীনতা, অপরাধমূলক অবহেলা, এবং দলিত ও প্রান্তিকদের বিরুদ্ধে অসামাজিক উপাদানের উৎসাহ এখন চরমে পৌঁছেছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি, যথারীতি নীরব, নীতীশ কুমার তাঁর বিষয়-ভাবনায় উদ্বিগ্ন। ক্ষমতার লোভ, এবং এনডিএ মিত্রদের জিভ বাঁধা। এই তো অবস্থা!
ভাল নেই বোধ হয় দেবতারাও।
আরও পড়ুন-অ্যালঝাইমার্স এক জটিল মানসিক অবস্থা, কেন পালিত হয় দিনটি
তিরুপতির বেঙ্কটেশ্বর মন্দিরের লাড্ডু নিয়ে অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইড়ুর অভিযোগকে মান্যতা দিয়েছে সরকারি ল্যাবরেটরি। চন্দ্রবাবুর অভিযোগ ছিল, বেঙ্কটেশ্বর মন্দিরে লাড্ডু তৈরির সময় পশুর চর্বি মেশানো হত। গুজরাতের একটি সরকারি ল্যাবে এই লাড্ডু পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল। ল্যাবরেটরির রিপোর্ট বলছে, তিরুপতির লাড্ডুতে ব্যবহার করা ঘিতে মাছের তেল, গরু ও শুয়োরের চর্বি মিলেছে। রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, গরুর শরীর থেকে চর্বিযুক্ত টিস্যু অপসারণ করার পর তা পরিষ্কার এবং সেদ্ধ করে তা থেকে মূলত তেল বের করা হয়ে থাকে। গরুর চর্বি মূলত ব্যবহার করা হয় হাই-টেম্পারেচারে ডিফ ফ্রাই বা রোস্ট করার জন্য। এ-ছাড়া সাবান এবং মোমবাতি বানাতেও এটি কাজে লাগানো হয়। আর শুয়োরের চর্বি একসময়ে বেকিংয়ের জন্য অনিবার্য ছিল। কিন্তু বর্তমানে সেটির জায়গায় ভেষজ জেল ব্যবহার করা হয় রান্নাঘরে। গুজরাতের সেন্টার ফর অ্যানালিসিস অ্যান্ড লার্নিং ইন লাইভস্টক অ্যান্ড ফুড ল্যাব এই রিপোর্ট দিয়েছে।
কী বলবেন এই অব্যবস্থাকে?