প্রতিবেদন : বেআইনি নজরদারির অভিযোগে এবার আমেরিকাতেও পেগাসাসের উপর কোপ৷ ইজরায়েলি স্পাইওয়্যার পেগাসাস নির্মাতা সংস্থা এনএসও গ্রুপকে কালো তালিকাভুক্ত করল আমেরিকা। জো বাইডেন প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে আমেরিকার নিষিদ্ধ সংস্থার তালিকায় থাকবে ইজরায়েলের এই সংস্থার নাম। ইজরায়েলি সংস্থা এনএসও আমেরিকার বৈদেশিক নীতি এবং জাতীয় নিরাপত্তার পরিপন্থী কাজ করছে বলেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ইজরায়েলের এই সংস্থার তৈরি পেগাসাস স্পাইওয়্যারের মাধ্যমে যে কোনও মানুষের ফোনে আড়িপাতা যায়। এমনকী, যার ফোনে আড়িপাতা হবে তিনি বিষয়টি টেরও পাবেন না। ইতিমধ্যেই ভারতেও পেগাসাস স্পাইওয়্যার নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, নরেন্দ্র মোদি সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রী থেকে শুরু করে বিচার বিভাগের শীর্ষকর্তা, এমনকী শিল্পপতিদের ফোনেও আড়ি পেতেছে। মোদি সরকার এই অভিযোগ স্বীকার করেনি। তবে, দেশের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য শীর্ষ আদালতের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। ওই কমিটি ভারতে পেগাসাস আড়িকাণ্ডের তদন্ত করছে।
আমেরিকার প্রতিরক্ষা দফতর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিভিন্ন দেশের সরকারকে স্পাইওয়্যার বিক্রি করে থাকে ইজরায়েলের সংস্থা এনএসও গোষ্ঠী। এই স্পাইওয়্যারকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির গতিবিধির ওপর নজরদারি চালানো হয়। এই প্রবণতা আমেরিকার নিরাপত্তার পক্ষে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। একইসঙ্গে এই ধরনের পদক্ষেপ ব্যক্তি স্বাধীনতার পরিপন্থী ও দেশের গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোর উপর কুঠারাঘাত। তাই দেশের নাগরিকদের ডিজিটাল নিরাপত্তা সুরক্ষিত করতে, সাইবার হানার মোকাবিলার লক্ষ্যে এবং মানুষের উপর নজরদারি বন্ধ করার জন্য এনএসও গোষ্ঠীকে নিষিদ্ধ তালিকায় আনা হচ্ছে।
বাইডেন প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে এনএসও সংস্থা এরপর কোনও মার্কিন সংস্থার কাছ থেকে যন্ত্রাংশ বা অন্য কোনও উপাদান কিনতে পারবে না। পাশাপাশি আমেরিকার এই সিদ্ধান্তের ফলে গোটা বিশ্বের বাজারে তাদের স্পাইওয়্যার বিক্রির ক্ষেত্রেও চরম সমস্যায় পড়বে। এনএসও-র বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পরই আমেরিকার প্রতিরক্ষা দফতর অন্তর্দেশীয় তদন্ত শুরু করে। সেখানে দেখা গিয়েছে, এই ইজরায়েলি সংস্থা বিভিন্ন দেশের সরকারকে তাদের স্পাইওয়্যার বিক্রি করেছে। ওই সব দেশের সরকার সেই স্পাইওয়্যার কাজে লাগিয়ে সরকারি আধিকারিক থেকে শুরু করে শিল্পপতি, সমাজকর্মী, মানবাধিকারকর্মী ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীদের উপর নাগাড়ে নজরদারি চালিয়েছে।
তবে ইজরায়েলি সংস্থার দাবি, তারা সরকার ছাড়া কোনও বেসরকারি সংস্থাকে স্পাইওয়্যার বিক্রি করে না। অপরাধমূলক কাজকর্ম বন্ধ করতেই তারা এই স্পাইওয়্যার তৈরি করেছে। আমেরিকা অবশ্য এনএসও-র এই বক্তব্য খারিজ করে দিয়েছে।