প্রতিবেদন : এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট নম্বর ১৭১-এর পাইলট সুমিত সভরওয়ালের শেষ কথা কী ছিল? মে-ডে কলে তিনি বলেছিলেন, নো থ্রাস্ট, লুজিং পাওয়ার, আন-এবল টু লিফ্ট। অর্থাৎ ইঞ্জিনে শক্তি নেই। বিমানকে উপরে তুলতে পারছে না। এই কথাগুলির মধ্যেই লুকিয়ে আসল ট্র্যাজেডি। নিশ্চিতভাবে যার পিছনে রয়েছে গাফিলতি, প্রতারণা এবং টেকনিক্যাল ব্যর্থতা। শুক্রবার সকালে দুর্ঘটনাস্থলে প্রধানমন্ত্রী এলেও এর কোনও উত্তরই দিতে পারেননি। কিন্তু ঘটনার পিছনে যারা দোষী তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এমন নিশ্চয়তাও দেননি প্রধানমন্ত্রী।
আরও পড়ুন-স্বচ্ছ-নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানাল তৃণমূল
প্রশ্ন, দায়ী কে? ব্ল্যাকবক্স ডি-কোড করার পর সেটা পরিষ্কার হবে। কিন্তু প্রশ্ন হল, প্রথমেই মাথায় আসে তাঁদের নাম, যারা ফ্লাইটটিকে ফিট সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন। কেউ কি চেকলিস্ট স্কিপ করেছিলেন? দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানটি প্যারিস থেকে দিল্লি হয়ে আমেদাবাদে আসে। আসার দু’ঘণ্টার মধ্যে ফ্লাইটটি রেডি করা হয়। এটা কি যথেষ্ট সময়? এত কম সময়ে সেফটি চেক সম্ভব? দ্রুত করতে কারা চাপ দিয়েছিল? কন্টামিনেটেড ফুয়েল বিমানে ভরার কারণে ইঞ্জিন স্তব্ধ হয়নি তো? এর আগেও এয়ার ইন্ডিয়াকে বারবার শো-কজ করা হয়েছে। টাটা সংস্থার হাতে দায়িত্ব আসার আগে থেকেই অসংখ্য অভিযোগ। সেই অভিযোগের উত্তর কি প্রত্যেকবার সংস্থা দিতে পেরেছে? যদি না দিয়ে থাকে তাহলে কড়া সিদ্ধান্ত কেন নেওয়া হয়নি? ব্ল্যাকবক্স থেকে এর অনেক উত্তরই হয়তো পাওয়া যাবে, কিন্তু সম্ভাবনাগুলো ক্রমশ গভীর হচ্ছে। স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও উচ্চপর্যায়ের তদন্তের দাবি ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। তার কারণ, পাইলট বলেছিলেন ইঞ্জিন কাজ করছে না। ডবল ইঞ্জিনের বিমান। তাহলে কী এমন হল যার জন্য দুটি ইঞ্জিনই পুরোপুরি বিকল হয়ে গেল? গ্রাউন্ড ইঞ্জিনিয়াররা বিমানটি পরীক্ষা করার সময় এর কণামাত্র ইঙ্গিত পেলেন না? স্বভাবতই অন্তর্ঘাত, নাশকতার অভিযোগও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। একটি বিমান তার আগের ফ্লাইটেও যদি ঠিক থাকে তাহলে দু’ঘণ্টা পরে ‘ফেল’ করল কীভাবে?
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
বোয়িং বিমান নিয়েও একরাশ অভিযোগ। সংস্থার ইঞ্জিনিয়ার সাম সালেহপোর গত বছর বেশ কিছু অভিযোগ তুলেছিলেন। তাঁর বক্তব্য, ৭৮৭ ড্রিমলাইনার তৈরিতে শর্টকাট পদ্ধতি নেওয়া হয়েছে। আলাদা আলাদা করে বিভিন্ন সংস্থা তৈরির বরাত পায়। পরে এগুলি জোড়া লাগানো হয়। যে কারণে বিমান তৈরিতে বেশ কিছু ‘গ্যাপ’ তৈরি হয়। যা বিমানটির ‘লাইফ স্প্যান’ শুধু কম করে তাই নয়, বিপদের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। এই কারণে বোয়িংয়ের সিইও ডেব কোলহান ইস্তফাও দেন।