প্রতিবেদন : ১০০ দিনের বকেয়া টাকা ইস্যুকে সামনে রেখে গোটা বাংলা জুড়ে তৃণমূল কংগ্রেসকে জরুরি ভিত্তিতে ময়দানে নামিয়ে দিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। বৃহস্পতিবার বিকেলে ভার্চুয়াল বৈঠকে অভিষেক কেন্দ্রীয় সরকারকে তুলোধোনা করে আগামী ১৫ দিনব্যাপী বাংলা জুড়ে কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন তিনি। এদিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সব সাংসদ, বিধায়ক, জেলা সভাপতি, ব্লক সভাপতি ও রাজ্য কমিটির সদস্যরা। তাঁদের প্রতি অভিষেকের নির্দেশ, এতদিন ধরে কেন্দ্র বঞ্চনা করেছে। তার বিরুদ্ধে তৃণমূল কংগ্রেসের আন্দোলন তা মানুষকে বারবার মনে করিয়ে দিতে হবে। একইসঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লাগাতার আন্দোলনের পর তাঁর আবেদনে সাড়া দিয়ে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২৭ লক্ষ বঞ্চিতদের যে টাকা দিচ্ছেন তা নিয়ে নিবিড় প্রচারে যেতে হবে। গ্রামের রাস্তার চায়ের দোকান থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে তা প্রচার করতে হবে। তৃণমূল কংগ্রেসের দীর্ঘ আন্দোলনের পর বঞ্চিতরা টাকা পেতে চলেছেন, মা-মাটি-মানুষের রাজ্য সরকার সেই টাকা দিচ্ছে। যা দেওয়ার কথা কেন্দ্রীয় সরকারের। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তৃণমূলের তরফে সারা বাংলা জুড়ে ৩৩৪৩টি অঞ্চলে সহায়তা শিবির করা হবে। এটা স্বনির্ভর বাংলা। আমাদের রাজ্য দিল্লির মুখাপেক্ষী হয়ে থাকবে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারই টাকা পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করছে। শুধু দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা বাদ দিয়ে, যেহেতু ইতিমধ্যেই সেখানে সহায়তা শিবির চলছে, বাংলা জুড়ে ৩৩৪৩টি সহায়তা শিবির হবে আগামী ১৮ তারিখ থেকে। চলবে ২৫ তারিখ পর্যন্ত। যেহেতু পরীক্ষা চলছে তাই মাইক বাজানো যাবে না। তাই দুটো প্রচার করুন সহায়তা শিবিরের জন্য। সেখানে ফর্ম দেওয়া থাকবে। সকাল দশটা থেকে বিকেল ছ’টা পর্যন্ত ফর্ম দেওয়া হবে সহায়তা শিবিরের। যাঁরা ১০০ দিনের টাকা পাননি, তাঁরা সেই ফর্ম ফিলআপ করবেন। সেগুলি ব্লক অঞ্চল হয়ে জেলা হয়ে তারপর রাজ্যস্তরে পৌঁছবে। সেখান থেকে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এই ২৭ লক্ষ বঞ্চিতদের ফর্ম পৌঁছবে। যাঁদের টাকা দেবে রাজ্য সরকার। এই সহায়তা শিবির চলার সময়ই দলকে প্রচার করতে হবে যে বিজেপি টাকা বন্ধ করে আর তৃণমূল টাকা পাইয়ে দেয়। জোরদার এই প্রচারটা চালাতে হবে।
বিধায়করা এই আট দিনে প্রতিদিন দু’বার করে শিবির পরিদর্শন করবেন। সংসদরা তাঁর আওতাধীন প্রতি বিধানসভার পাঁচটি করে ক্যাম্প বা শিবির প্রতিদিন পরিদর্শন করবেন। একেবারে চায়ের দোকানে বসে মানুষের সঙ্গে কথা বলতে হবে, গল্প করতে হবে, তাঁদের সঙ্গে চা খেতে হবে। তাঁদের বোঝাতে হবে গত দু’বছর ধরে কেন্দ্রীয় সরকার একটা টাকাও দেয়নি। তৃণমূল কংগ্রেসই তাঁদের হয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
এরপর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) দুটি সাংগঠনিক ঘোষণা করেন, ১) আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে, প্রত্যেক ব্লক প্রেসিডেন্টকে ১০ জন এসসি ও পাঁচজন করে এসটির নাম দিতে হবে। আগামী ২১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে এই নাম পৌঁছে দিতে হবে। অবশ্যই এঁদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল কংগ্রেসের আদর্শে বিশ্বাসী হতে হবে। একই সঙ্গে বুথে ও সমাজে তাঁদের গ্রহণযোগ্যতাও যেন থাকে।
আরও পড়ুন- পাঞ্জাব-হরিয়ানার সীমানায় মৃত্যু আন্দোলনরত কৃষকের
আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারি মধ্যে, প্রতি বুথ থেকে চারজন কর্মীর নাম পাঠাতে হবে। এদের মধ্যে দু’জন থাকবেন মূল সংগঠনের। আর একজন মহিলা একজন যুব সংগঠনের তরফে থাকবে। এটা ব্লক সভাপতি হয়ে জেলা সভাপতিদের মাধ্যমে রাজ্যের কাছে পৌঁছে যাবে। আগামী ১৫ দিন প্রতি বুথে বুথে, মাইক না বাজিয়ে বুথ সভাপতিদের প্রত্যেকে, ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ২ মার্চ নেতৃত্বরা হাটে-বাজারে চায়ের দোকানে আধঘণ্টা করে বসবেন এবং নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল কংগ্রেসের এই লড়াইয়ের কথা মানুষকে বলবেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে বাংলার মানুষকে টাকা দিচ্ছেন তা প্রচার করতে হবে, মানুষকে গিয়ে বলতে হবে। স্পষ্ট নির্দেশ অভিষেকের। আগামী ১ মার্চ থেকে সব উপভোক্তাকে বলা হচ্ছে, ব্যাঙ্কের পাস বই আপডেট করিয়ে নিন। কারণ ওই দিনই টাকা ঢুকে যাবে তাঁদের ব্যাঙ্কে।
১ ও ২ মার্চ রাজ্য সরকারের তরফে প্রতি অঞ্চলে উপকৃতদের সভা হবে। যেখানে সব জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। বৈঠকে অভিষেক বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বঞ্চিতদের টাকা দেবেন দিল্লির দিকে আমরা তাকিয়ে থাকব না। আমরা বলব, জমিদারি হটাও, বাংলা বাঁচাও। করোনা, আমফান, আয়লার সময় বিজেপির কোনও নেতা মানুষদের পাশে থাকে না। এক্ষেত্রে এতটুকু সময় নষ্ট নয় এবং এক মুহূর্তের জন্য শৈথিল্য নয়। এখনই নেমে পড়ুন। আগামী ১৫ দিন রাজ্য জুড়ে সব ক’টি জায়গায় এই কর্মসূচি পালিত হবে। অভিষেকের কথায়, এবার ধর্মের নামে ভোট হবে না, কর্মের নামে হবে। মানুষ ধর্মের নামে একবারই ভোট দেয়। এবার হবে প্রতিরোধের ভোট প্রতিশোধের ভোট। জমিদারদের হারিয়ে বাংলা দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। ভোট টু ইলেক্ট নয়, ভোট টু রিজেক্ট হবে। বিজেপিকে বাংলার মানুষ রিজেক্ট করবে। বিজেপির বিরুদ্ধে অভিষেক আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে বলেন, বাংলা থেকে গত চার বছরে ৪ লক্ষ ৬৪০০০ টাকা দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্র টাকা বাংলা থেকে নিলেও বাংলাকে তার প্রাপ্য দেওয়া হয়নি। বাংলার পাওনা এখনও পর্যন্ত ১ লক্ষ ৭ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে না কেন্দ্র। এরপর আবাসের টাকাও রাজ্য সরকারই ব্যবস্থা করবে। তার জন্য তৃণমূলের হাত শক্ত করতে হবে। বৈঠকে তৃণমূল রাজ্য সভাপতি মনে করিয়ে দেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লড়াই, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিল্লিতে ধরনা, সংসদদের গ্রেফতার। এত কিছু করেও কেন্দ্র বাংলার বকেয়া দেয়নি। ফলে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই হবে জোরদার। এক ইঞ্চি জমিয়ে তাদের ছাড়া হবে না।