প্রতিবেদন : উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে প্রবল বর্ষণের তাণ্ডবে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। রাজপথ থেকে শুরু করে গ্রামীণ সড়ক পর্যন্ত ডুবে গেছে বন্যার জলে, বহু বাড়িঘর ভেসে গেছে স্রোতের তোড়ে, এবং একের পর এক রাজ্যে জারি করা হয়েছে বিপদ সংকেত। মৌসম ভবনের পূর্বাভাস, দুর্যোগের পরিস্থিতি থাকবে আরো সাতদিন।
আরও পড়ুন-টাকার রেকর্ড পতন ও চাকরির সংকোচন, ভারতীয় অর্থনীতি এখন দ্বিমুখী চাপে
জম্মু-কাশ্মীর ও উত্তরাখণ্ডে ধারাবাহিক মেঘভাঙা বৃষ্টির ফলে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি। ইতিমধ্যেই বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং অনেকে এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। পাঞ্জাবে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ, গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বিধ্বংসী বন্যার কবলে পড়ে রাজ্যটিতে এখন পর্যন্ত অন্তত ২৯ জনের প্রাণহানি ঘটেছে এবং হাজার হাজার মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন। রাজধানী দিল্লি ও তার আশেপাশের এনসিআর এলাকাতেও বাড়িঘর জলমগ্ন। নদীর উপর অবস্থিত ব্যারাজ থেকে একটানা জল ছাড়ার কারণে বিপদের আশঙ্কা আরও বেড়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর স্পষ্ট জানিয়েছে, অন্তত আগামী সাতদিন এই পরিস্থিতির উন্নতির কোনো সম্ভাবনা নেই। ইতিমধ্যেই জম্মু-কাশ্মীর, গুরগাঁও, উত্তরপ্রদেশ, চণ্ডীগড়সহ একাধিক অঞ্চলে স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার গুরগাঁও ও এনসিআর জুড়ে প্রবল বৃষ্টির কারণে প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার সেখানে সরকারি ও বেসরকারি অফিসগুলিতে বাড়ি থেকে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দিল্লি-এনসিআরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলি যেমন জলে ডুবে রয়েছে, তেমনই জম্মু-কাশ্মীর ও উত্তরাখণ্ডের বহু মহাসড়ক ভেঙে পড়েছে ভূমিধসের কারণে। সেইসঙ্গে দুর্গত এলাকায় পৌঁছনো আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। পাঞ্জাবের দশের বেশি জেলা এখন বন্যার জলে ডুবে, রাজ্য জুড়ে বিপর্যস্ত মানুষের দীর্ঘ সারি। আগস্ট মাসে পাঞ্জাবে গড় বৃষ্টিপাতের তুলনায় প্রায় ৭৪ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। এই রাজ্যে ২৫৩.৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে— যা গত ২৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান। জম্মু-কাশ্মীরে গত পনেরো দিনে প্রবল বর্ষণ ও আকস্মিক বন্যায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। জম্মু-শ্রীনগর হাইওয়ে টানা আট দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। রাজৌরি ও সাম্বা জেলায় টানা বৃষ্টির জেরে ভূমি ধসের ঘটনা ঘটায় ১৯টি পরিবারকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যেতে হয়েছে। ডোডা জেলায় অন্তত ৫০০টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রবল বর্ষণ ও আকস্মিক বন্যার প্রভাবে। উত্তরাখণ্ডে পরিস্থিতি আরও শোচনীয় রূপ নিয়েছে। মেঘভাঙা বৃষ্টির ফলে রাজ্যের বিভিন্ন পাহাড়ি অঞ্চলে একের পর এক ভূমিধস ও আকস্মিক বন্যার ঘটনা ঘটছে। অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং প্রায় ৬৯ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। ভেসে গিয়েছে বাড়িঘর, গবাদি পশুও চাপা পড়েছে ধ্বংসস্তূপের নিচে। মঙ্গলবার এই রাজ্যে লাল সতর্কবার্তা জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। উত্তর-পশ্চিম ভারতের একাধিক রাজ্যে, বিশেষ করে দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব, উত্তরাখণ্ড, জম্মু-কাশ্মীর এবং হরিয়ানায় অন্তত ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রবল বর্ষণ চলতে পারে বলে সতর্ক করেছে আইএমডি। এর পাশাপাশি দিল্লি, জম্মু-কাশ্মীর, লাদাখ, হিমাচল প্রদেশ, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, চণ্ডীগড়, উত্তরাখণ্ড, রাজস্থান ও পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে অতিবৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে, যা সাম্প্রতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।