ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধনী প্রক্রিয়া ঘোষণার মাত্র ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই আতঙ্কে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এই দুঃখজনক ঘটনার জন্য নিজেপিকে নিশানা করলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সামাজিক মাধ্যমে এক বিবৃতিতে মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন, বিজেপির ভয়, বিভাজন ও ঘৃণার রাজনীতির করুণ ফল সকলে প্রত্যক্ষ করছে। ভোটার তালিকায় সংশোধনের এই প্রক্রিয়াটি বিজেপির ইচ্ছায় জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার ফলেই একের পর এক এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটছে।
আরও পড়ুন-বীরভূমে SIR-NRC আতঙ্কে আত্মহত্যার অভিযোগ, স্বজনহারা পরিবারের পাশে তৃণমূল
মুখ্যমন্ত্রী জানান, ২৭ অক্টোবর খড়দহের পানিহাটির বাসিন্দা ৫৭ বছর বয়সী প্রদীপ কর আত্মহত্যা করেন। মৃত্যুর আগে রেখে যাওয়া চিঠিতে তিনি লিখেছেন, “আমার মৃত্যুর জন্য এনআরসি দায়ী।” তার পরের দিন, ২৮ অক্টোবর কোচবিহারের দিনহাটায় ৬৩ বছর বয়সী এক ব্যক্তি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন, হয়রানির আশঙ্কায় ভীত হয়ে। আর বুধবার পশ্চিম মেদিনীপুরের কোটওয়ালির বাসিন্দা, ৯৫ বছর বয়সী ক্ষিতীশ মজুমদার — যিনি ইলামবাজারে মেয়ের সঙ্গে থাকতেন — নিজের জীবন শেষ করেন, জমি হারানোর আতঙ্কে।
এই ঘটনাগুলিকে “রাজনৈতিকভাবে সৃষ্ট মানসিক ভয় ও আতঙ্কের ফল” বলে উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, “এই ট্র্যাজেডিগুলির দায় কে নেবে? গৃহমন্ত্রী কি দায় স্বীকার করবেন? বিজেপি ও তাদের মিত্ররা কি সাহস দেখাবে এই আতঙ্কের জন্য নিজেদের দায় মেনে নিতে?”
আরও পড়ুন-ঋণ মকুব-সহ একাধিক দাবিতে ফের কৃষক বিক্ষোভে উত্তাল মহারাষ্ট্র, চাপের মুখে কী জানালেন ফড়নবিশ
তিনি আরও বলেন, “৯৫ বছরের এক বৃদ্ধ, যিনি এই মাটির জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাঁকে নিজের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে গিয়ে মরতে হচ্ছে। এ শুধু ট্র্যাজেডি নয় — মানবতার প্রতি এক বিশ্বাসঘাতকতা।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “বহু প্রজন্ম ধরে বাংলার মানুষ মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে এসেছে। আজ তাঁদের নিজের জন্মভূমির অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলতে হচ্ছে। এই নিষ্ঠুরতা কোনও ভাবেই সহ্য করা যায় না।”
রাজ্যের মানুষের প্রতি আবেদন জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কেউ প্ররোচনায় পা দেবেন না, কেউ বিশ্বাস হারাবেন না, কেউ চরমপন্থা অবলম্বন করবেন না। মা-মাটি-মানুষ সরকার আপনাদের পাশে আছে। বাংলায় কোনও ভাবেই এনআরসি প্রয়োগ হতে দেওয়া হবে না — না সামনের দরজা দিয়ে, না পিছনের দরজা দিয়ে।”
তাঁর ঘোষণা, “একজন বৈধ নাগরিককেও ‘বহিরাগত’ তকমা পরতে দেওয়া হবে না। শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত আমরা লড়ব, মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য এবং বিজেপি ও তাদের মিত্রদের কুটিল ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করার জন্য।”

