প্রতিবেদন: বদলাল না কিছুই। আগের মতোই সেই অহঙ্কার, সেই দম্ভ। বালাই নেই সৌজন্যবোধেরও। লোকসভার স্পিকার নির্বাচনের পরেই বিজেপি বুঝিয়ে দিল, সংখ্যা কমলেও সরকার ও সংসদ পরিচালনার ক্ষেত্রে তাদের চরিত্র ও মনোভাবের বিন্দুমাত্র বদল ঘটবে না। বিরোধীদের সঙ্গে সংঘাতের পথেই তারা হাঁটবে।
আরও পড়ুন-২,৩৪৪ পদে নিয়োগের অনুমোদন মন্ত্রিসভার
বুধবার স্পিকার পদে বিজেপি প্রার্থী ওম বিড়লা জিতেছেন ধ্বনিভোটে। অধ্যক্ষ নির্বাচনের পর লোকসভার কক্ষে শিষ্টাচারের যে ছবি ফুটে উঠেছিল, যেভাবে বিরোধীরা নতুন অধ্যক্ষকে অভিনন্দন জানালেন, তাতে মনে হচ্ছিল, শাসক দলের মনোভাবে কিছুটা হলেও বদল ঘটবে। কিন্তু না, সেরকম কোনও লক্ষণই দেখা গেল না এদিন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও সংসদীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজুর সঙ্গে স্পিকারের দিকে এগিয়ে যান বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী। স্পিকারকে তাঁরা বসিয়ে দেন নির্দিষ্ট আসনে। মোদির সঙ্গে করমর্দনও করেন রাহুল, যা এতকাল দেখা যায়নি। শুধু রাহুল নন, স্পিকারকে অভিনন্দন জানান বিরোধী নেতারাও। সেই সঙ্গে আশাপ্রকাশ করেন যথাযোগ্য সম্মান পাওয়ার, গণতান্ত্রিক পরম্পরা রক্ষার ও সভাকক্ষে বক্তব্য পেশের অধিকারের। একই সঙ্গে স্পিকারকেও সভা পরিচালনার ক্ষেত্রে সহযোগিতার আশ্বাস দেন তাঁরা। কিন্তু ওই পর্যন্তই। সপ্তদশ লোকসভার মতো অষ্টাদশও যে অভিন্ন, সরকার যে সংঘাতের পথ ছাড়বে না, তা বোঝা গেল অধ্যক্ষের আচরণেই।
আরও পড়ুন-লোকসভার ভোট স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে, ভারত হিন্দু রাষ্ট্র হোক চাইছেন না দেশবাসী, বললেন অমর্ত্য
তাল কাটল আচমকাই জরুরি অবস্থার প্রসঙ্গ উত্থাপনে। বলা নেই, কওয়া নেই হঠাৎ অভিনন্দনপর্ব শেষ হওয়ার পরেই ওম বিড়লা ১৯৭৫ সালে জারি হওয়া জরুরি অবস্থার উল্লেখ করে এক দীর্ঘ বিবৃতি পাঠ করেন। তাতে কীভাবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ব্যক্তিস্বাধীনতা ও মানবাধিকার হরণ করেছিলেন, দেশকে জেলখানা বানিয়ে দিয়েছিলেন, বাবাসাহেব আম্বেদকরের তৈরি সংবিধান পদে পদে লঙ্ঘন করেছিলেন, সেসব বিস্তারিত উল্লেখ করে তাঁকে ‘স্বৈরাচারী’ আখ্যা দেন ও ওই সময়কে দেশের ইতিহাসের ‘কালো অধ্যায়’ বলে বর্ণনা করেন। কংগ্রেসকে আক্রমণ করে স্পিকার বলেন, সে সময় তারা জোর করে বন্ধ্যাত্ব করিয়েছিল। গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা যাতে আদালতে যেতে না পারেন, তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সংবাদপত্রের ওপর জারি করা হয়েছিল যাবতীয় নিষেধাজ্ঞা। আট মিনিটের দীর্ঘ বিবৃতি পাঠ শেষে জরুরি অবস্থা জারির বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণের পর স্পিকার সেই সময় প্রাণ হারানো ব্যক্তিদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দুই মিনিট নীরবতা পালনের ডাক দেন। তার পরেই সারা দিনের মতো মুলতবি করে দেন লোকসভা। স্পিকার বিবৃতি পাঠ শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই বিরোধীরা তীব্র প্রতিবাদ করতে থাকেন। শুরু হয় স্লোগান। স্পিকার ও সরকারের মনোভাবের কড়া নিন্দা করে কংগ্রেসসহ বিরোধী সদস্যরা বলতে থাকেন, ৫০ বছর আগের ঘটনা টেনে এই সরকার তাদের অঘোষিত জরুরি অবস্থা চাপা দিতে চাইছে। জরুরি অবস্থায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে নীরবতা পালনে সরকার পক্ষের সদস্যরা উঠে দাঁড়ালেও বিরোধীরা প্রতিবাদে মুখর থাকেন। ১৫ সেকেন্ড নীরবতা পালন করেই স্পিকার ওম বিড়লা সারা দিনের মতো অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করেন। কিন্তু কেন যে হঠাৎ জরুরি অবস্থার কথা তুলে ধরা হল, এর যৌক্তিকতাই বা কী তা স্পষ্ট হল না কোনওভাবেই। অধ্যক্ষের এই ভূমিকাই বুঝিয়ে দিচ্ছে, নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকলেও মোদি সরকার তার আক্রমণাত্মক ভূমিকার বদল ঘটাবে না। সংসদ ও সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রেও বিরোধীদের পক্ষে তেমন কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন আশা করা বৃথা।বিগত সপ্তদশ লোকসভায় বিরোধীদের প্রতিবাদ লোকসভা টিভিতে দেখানো হতো না। এবারও হলো না। বিরোধীদের প্রতিবাদ না দেখিয়ে ক্যামেরা ধরে রাখল শুধুই অধ্যক্ষকে। নতুন রূপে ফিরে এল মোদির স্বৈরাচার।