নয়াদিল্লি : আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম আরও কমেছে। একদিনের ব্যবধানে অপরিশোধিত তেলের দর সাড়ে ৩ শতাংশ কমে ব্যারেল প্রতি ৭৫ ডলারে নেমে এসেছে। এই দাম গত দুই মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। যুক্তরাষ্ট্র ও চিন সংরক্ষিত তেল বাজারে ছাড়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দামে পতন লক্ষ করা যাচ্ছে। শনিবার অপরিশোধিত ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লুটিআই) দাম আগের দিনের চেয়ে ২ ডলার ৭৩ সেন্ট কমে ব্যারেল প্রতি ৭৫ ডলার ৬৮ সেন্টে বিক্রি হয়েছে। আর ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম একই হারে কমে ৭৮ ডলার ৪৬ সেন্টে বিক্রি হয়েছে।
আরও পড়ুন-বিপ্লবকে চ্যালেঞ্জ করে আজ ত্রিপুরায় অভিষেক
২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে শুরু করেছিল। ওই সময় প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ছিল ৪২ ডলার। করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে ক্রমাগত বেড়েছে তেলের দাম। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় তা আরও ঊর্ধ্বমুখী হয়। গত ১৬ অক্টোবর দাম ছিল ৮০ ডলার, ৮ নভেম্বর-এ ছিল ৮২.৫ ডলার। গত ২৭ অক্টোবর অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৮৫.০৭ ডলারে ওঠে। এরপর থেকেই তা কমতে থাকে।
আরও পড়ুন-মুম্বই বনাম গোয়া
আকস্মিক তেলের দামের এই পতন নিয়েও চলছে নানা বিশ্লেষণ। বিশ্লেষকদের একটা অংশ মনে করছেন, এটি সম্ভব হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধ চিন রেখেছে বলেই। বাইডেন প্রশাসন তার মিত্রদের কাছে অনুরোধ করেছিল যাতে দেশগুলো তাদের সংরক্ষিত (রিজার্ভ) তেল বাজারে ছেড়ে দেয়। চিন সেটাই করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিস্ট্যাড এনার্জির সিনিয়র বাজার বিশ্লেষক বিজোরনার টনহাউজেন বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে আমেরিকা ও চিন।
আরও পড়ুন-মার্তাদের ভয় পাচ্ছেন না আশালতা-সুইটিরা
দেশ দুটি সংরক্ষিত তেল বাজারে ছাড়ায় দাম কমতে শুরু করেছে। বিনিয়োগকারীরা এখন আশা করছেন, ডিসেম্বরে ২০ থেকে ৩০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল আসতে পারে। এটা হতে পারে আমেরিকা ও চিন থেকে কিংবা আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার বৃহত্তর সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমে। যদিও সংরক্ষিত তেল ছাড়ে দীর্ঘকালীন পরিবর্তন নাও হতে পারে। ইউরোপে করোনা মহামারীর চতুর্থ ঢেউ শুরু হওয়ায় নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমার এটিও আরেকটি কারণ বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকদের একাংশ।
আরও পড়ুন-‘আমাদের মারলে মারুক, মানুষ বিচার করুন’ টুইটারে আর্জি কুণাল ঘোষের
কয়েকদিন আগে জো বাইডেন ও শি জিনপিংয়ের ভার্চুয়াল বৈঠকে বিশ্বে জ্বালানি তেল সরবরাহের বিষয়ে আলোচনা হয়। বিশেষ করে বাইডেন সংরক্ষিত তেল বাজারে ছাড়তে চিনের প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ জানান। এর পরই দেশ দুটির সমন্বিত পদক্ষেপের পর কয়েক লাখ ব্যারেল তেল বাজারে আসে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে কেবল চিনকেই সংরক্ষিত তেলের ব্যবহার বাড়াতে বলেছে তা নয়, একই অনুরোধ করা হয়েছে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারতের মতো বৃহৎ তেল ব্যবহারকারী দেশগুলোকেও।
আরও পড়ুন-পদ্ম ছেড়ে তৃণমূলে পঞ্চায়েত উপপ্রধান
তেলের দর ২০২০-র অক্টোবর থেকে বেশি বাড়তে শুরু করেছিল মূলত তেল রফতানিকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেকের সিদ্ধান্তে। তারা আগের লোকসান তুলে আনতে জ্বালানি তেলের উত্তোলন কমিয়ে দেয়। অথচ বাড়ছিল তেলের চাহিদা। আবার কোভিড সংক্রমণের সময় সরবরাহ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হওয়ায় এমনিতেই বিভিন্ন ধরনের পণ্যের দাম বাড়ছিল।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ চিন্তায় ছিল মুদ্রাস্ফীতির চাপ নিয়ে। এরকম সময়ে চাহিদা বৃদ্ধি ও জোগান কমে যাওয়ায় জ্বালানি তেলের দর ব্যারেল প্রতি ৮৫ ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ২০১৪ সালের পর তা ছিল সর্বোচ্চ দর।