আবার সে এসেছে ফিরিয়া। এক বছর আগে বিজেপির সাংসদ জন বার্লা দাবি করেছিলেন উত্তরবঙ্গকে একটি আলাদা রাজ্য অথবা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসাবে ঘোষণা করবার। সেই দাবির বর্ষপূর্তি উৎসব সূচনা করেছেন বিজেপির বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা। তিনিও এই বিগত মার্চ মাসের মাঝামাঝি বিধানসভায় দাবি তুলেছেন বিচ্ছিন্ন উত্তরবঙ্গের। আর এখন, রাজ্যে যখন মা-মাটি- মানুষের সরকারের তৃতীয়বার জনাশিসে অভিষিক্ত হওয়ার বর্ষপূর্তির উৎসবের আনন্দ-উদ্ভাস, ঠিক তখনই আবার বিজেপি নামক যাত্রাপার্টির এক-একজন বিদূষক হঠাৎ করে পাগলা জগাইয়ের মতো খেপে উঠে উত্তরবঙ্গকে আলাদা দেখতে চাইছেন বা কথায়-কথায় সিবিআই-এর অনুপ্রবেশ চাইছেন, তা যে রাজ্যকে একটু এলোমেলো করে দেবার চেষ্টা সে তো পাড়ার উনিশটিবার ম্যাট্রিকে ঘায়েল হওয়া হাবলাদাও বোঝে। এ-ও বোঝে এর নেপথ্যে রয়েছেন ওই যাত্রাপার্টির অধিকারী মশাই। কিন্তু যা চট করে ধরা পড়ছে না তা হল এই যে, এই অধিকারী মশাই কার হাতের তামাক খাচ্ছেন?
আরও পড়ুন-উচ্চমাধ্যমিক-পরবর্তী পর্যায়ে জীবনের দিক-নির্দেশনা
তা বুঝতে একটু পিছনে তাকানো যাক।
১৯০৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি অস্থায়ী ভারতসচিব লর্ড ব্রডরিককে একটি চিঠিতে লর্ড কার্জন লিখছেন, ‘বাঙালিরা নিজেদের এক মহাজাতি মনে করে এবং এক বাঙালিবাবুকে লাটসাহেবের (পড়ুন প্রধানমন্ত্রীর) গদিতে বসাতে চায়। …বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাব তাদের এই স্বপ্নের সফল রূপায়ণে বাধা দেবে। আমরা যদি তাদের আপত্তির কাছে নতি স্বীকার করি, তবে ভবিষ্যতে কোনও দিনও বাংলা ভাগ করতে পারব না এবং আপনারা ভারতের পূর্বদিকে এমন এক শক্তিকে জোরদার করবেন যা এখনই প্রবল এবং ভবিষ্যতে ক্রমবর্ধমান বিপদের উৎস হয়ে থাকবে।’ একই সুরে ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র সচিব হার্বার্ট রিজলে আরও স্পষ্ট করে বলেন, ‘…আমাদের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য ব্রিটিশ শাসন (পড়ুন মোদি-বিজেপি শাসন) বিরোধী এক সুসংহত শক্তিকে টুকরো করে দুর্বল করে দেওয়া।’ এই লক্ষ্যে কার্জন পূর্ববঙ্গ গিয়েছিলেন, ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক জনসভায় বঙ্গভঙ্গ-পরবর্তী বাংলার এক রঙিন চিত্র উপস্থাপনা করলেন। তারপর কলকাতায় ফিরে এসে ঘোষণা করলেন পূর্ববঙ্গের মানুষ বঙ্গভঙ্গের পক্ষে, অতএব, আর বিলম্ব নয়; স্থির হল ঢাকা, চট্টগ্রাম বিভাগ এবং দার্জিলিং বাদ দিয়ে উত্তরবঙ্গকে আসামের সঙ্গে যুক্ত করে একটি নতুন প্রদেশ গঠন করা হবে। অর্থাৎ সরাসরি অখণ্ড বাংলাকে দ্বিখণ্ডিত করবার পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়ে গেল।
আরও পড়ুন-শিক্ষাবিদদের মতামত নিয়ে হবে