পারবেন, তিনিই পারবেন

চক্রান্তের কাল রাত্রির অবসান ঘটিয়ে বাংলার মা-মাটি-মানুষের সৌভাগ্য সূর্যের উদয় নিশ্চিত করতে পারেন একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ষড়যন্ত্র যত গভীর হয় তত নিশ্চিত হয় তাঁর বিজয় কেতন ওড়া। কারণ, তিনি সৎ ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ। তিনি ইতিবাচক ও মানবিক প্রশাসক। লিখছেন ড. মইনুল হাসান

Must read

সকলেই জানেন একমাত্র তিনিই পারবেন। তিনি পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একটি মর্মান্তিক, নৃশংস ঘটনা ঘটেছে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে। আমাদের এক কন্যা ধর্ষিতা হয়েছেন এবং তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি তিলোত্তমা। আমরা সবাই এই ঘৃণ্য কাজের সঙ্গে যে বা যারা যুক্ত তাদের সর্ববৃহত শাস্তি চাই। এমন ঘটনার সঙ্গে কোনও ধরনের আপোষ হতে পারে না। বাংলার কোটি কোটি মানুষ তিলোত্তমার বিচারের জন্য রাস্তায় নেমেছেন। মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী বিচারের দাবিতে রাস্তায় নেমে মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর শ্লোগানের সঙ্গে অন্য জনগোষ্ঠীর শ্লোগানের কোনও পার্থক্য নেই।

আরও পড়ুন-বাঁকুড়ায় ভাদু উৎসবে মেতে ওঠার প্রস্তুতি তুঙ্গে

এরই মধ্যে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা সুপ্রিম কোর্ট নিয়েছেন। অনুসন্ধানের দায়িত্ব কলকাতা হাইকোর্ট দিয়েছেন সিবিআই-এর। এরই মধ্যে রাজো সরকার, তার পুলিশ বাহিনী, সাধারণ প্রশাসন আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কি কের প্রকৃত বিচার হয়। ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছায় সামান্য সময়েরে ব্যবধানে বিধানসভা ডেকে ‘অপরাজিতা’ বিল পাশ করানো হয়েছে। যাতে দোষীরা কড়া শাস্তি পায়। সেই বিল এখন সম্মানীয়া রাষ্ট্রপতি মহোদয়ার কাছে। এই সময়ে রাজেোর বিভিন্ন অংশের মানুষ, যার কোনওদিন রাজনীতি করেননি তারা বিচার চেয়ে রাস্তায় নেমেছে। আমরাও মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী প্রতিবাদ মুখর মানুষের হৃদয়ের বার্তাকে সম্মান জানিয়েছি এবং সহমমির্তা প্রকাশ করেছি। কারণ আমাদের বাডি়র মেয়ে তিলোত্তমাকে করুণভাবে প্রাণ দিতে হয়েছে।
তিলোত্তমা’র মা/বাবা, যারা নিজেদের জীবনের শ্রেষ্ঠ ধন হারিয়েছেন তাদের পাশে প্রথম থেকে পাশে থেকেছেন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।এই সময়ে কলকাতা পুলিশই একজন দুষ্কৃতিকে গ্রেফতার হয়েনি। মুখ্যমন্ত্রী সহ রাজ্যের সমস্ত শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ দাবি করছে মামলা অতিদ্রুত শেষ হোক। তিলোত্তমা বিচার পাক। আমরা তাকিয়ে আছি মহামান্য উচ্চ ন্যায়লয়ের দিকে।পশ্চিমবাংলার রাজনৈতিক দলগুলি এইসময়ে তারা তাদের রাজনৈতিক চিন্তায় উর্দ্ধে উঠতে পারেননি। তারা ঘোলাজলে মুনাফার কথা ভেবেছেন এবং সেইমত কাজ করছেন। তিলোত্তমার বিচারের চাইতে তারা রাজ্যের মানুষকে বোকা বানিয়ে, স্থিতিশীল পরিবেশকে নষ্ট করতে চায়। বিচার চাওয়ার বদলে তারা চেয়ারের দখল নিতে চান। মানুষের দরকারে তারা বারে বারে প্রত্যাখ্যাত হয়ে বেশ হতাশ হয়ে পডে়ছেন। তারই উপর ভিত্তি করে তারা এমন একটা ঘৃণ্য বিষয়কে ‘সুযোগ হিসাবে ব্যবহার করতে চান।

আরও পড়ুন-নির্ভয়া তহবিল নষ্ট মোদিরাজ্যে

আমরা সব সময় এ রাজ্যের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন সংগ্রামী মানুষের প্রতি আস্থাশীল। অচিরেই বিরোধী দলগুলো তাদের কৃতকর্মের ফল দেখতে পাবে। এই সময়ে আর জি কর কাণ্ডের সঙ্গেই জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরোতি শুরু হয়েছে। যা এক মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গিয়েছে। এই জুনিয়র ডাক্তারদের বয়স কম। সুদীর্ঘ কর্ম জীবন সামনে পডে় আছে। তাদের জীবনে কোনও দুর্বিপাক আসুক এটা আমরা কেউ চায় না। তাদের দাবি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা চলতে পারে। আলোচনা ছাড়া পৃথিবীর কোন সমস্যার সমাধান হয় না। হতে পারে না। সবচাইতে জরুরি খোলা মনে আলোচনায় বসা। যেকথা মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন। জুনিয়র ডাক্তারদের একজন সহকর্মী এই নৃশংস দুর্ভাগ্যের শিকার হয়েছেন। সুতরাং তাদের আবেগ যে বেশি থাকবে তাতে কোনও দোষ নেই। সেটাই স্বাভাবিক। তারা লালাজবাজার অভিযান করেছিলেন। ২২ ঘণ্টা অবস্থানের পর পুলিশ ব্যারিকেড সরিয়ে তাদের আলোচনায় টেবিলে বসিয়েছে। এটা তো তাদের জয়। রাজনীতির কোনও রঙ ছাড়া এমন আন্দোল বহু বহু দিন দেখেনি। বাংলার সামাজিক আন্দোলনের ইতিহাসে এটা লেখা থাকবে।
সরকার ও মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী আলোচনার দরজা বন্ধ করেননি। কারণ তিনি এই বয়স এবং ভবিষ্যত সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন। তিনি এটাও জানেন যে এই ছেলে/মেয়েগুলো রাজ্যের সম্পদ। সেই কারণে পর পর তিনদিন তার প্রধান কার্য্যালয় নবান্নে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসেছিলেন আন্দোলনকারীদের অপেক্ষায়। তাঁরা আসেননি। একবার এসেও সভাঘরে প্রবেশ করেননি। রাজ্য স্বাস্থ্য ভবনে তাঁরা অবস্থান করছেন। সংখ্যাটা অবশ্যই অনেক। আবহাওয়া খারাপ। আকাশ ভেঙে বৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের সন্তানরা ভিজেছে রাতদিন। মুখ্যমন্ত্রী আর সহ্য করতে পারেননি। কিন্তু ঘুমোননি রাত্রে। সটার্ন ধরনা মঞ্চে গিয়ে উপস্থিত হয়েছেন। এটা বোধহয় তার পক্ষেই সম্ভব। তিনি আন্দোলন থেকে উঠে আসা মানুষ। আন্দােলনের পাঠ তার জীবনের পাঠ। তাই তিনি ধর্না মঞ্চে গিয়ে বলতে পেরেছেন, আমি আপনাদের সমব্যথী। বলতে পেরেছেন, গত রাতে আপনারা যখ বৃষ্টিতে ভিজছিলেন, তখন আমিও ঘুমোতে পারিনি। আসুন আলোচনায় বসি। সময় দিন। সবার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে তা নেওয়া শুরু হয়ে গেছে। আর একবার প্রমাণিত হয়েছে রাজ্যের মানুষের স্বার্থে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অগ্রাধিকার। কোনও সমস্যা নিয়ে রাজনীতি করাটা তার ধাতে নেই। সেই পুত্র-কন্যাসম জুনিয়র ডাক্তারদের কাছে তিনি ছুটে এসেছেন। আহ্বান করছেন আসুন আলোচনায় বসি। এগিয়ে চলেছে সময়। তিনি কোনও সময় নষ্ট করলেন না। ছুটির দিন। তবুও নিজের বাড়িতে আহ্বান করলেন আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের। সারা দেশ দেখলো এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। অসীম ধৈর্য্য তার। অসম্ভব নমনীয়। নিজের পুত্রকন্যা সমদের কাজে হাত জোর করছেন। অঝোরে বৃষ্টি হচ্ছে। সবাইকে ভিজতে নিষেধ করছেন। নিজের বাড়ির গেটে তিনি দাঁড়িয়ে আছেন। সব প্রোটেকশন। সব নিরাপত্তা বেষ্টনী উধাও। তিনি বারবার আবেদন করেছেন, আলোচনা না হোক, ভিতরে এসে চা খান।

আরও পড়ুন-দিনের কবিতা

কোথায়, কবে কোন মুখ্যমন্ত্রী একাজ করেছেন? কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অন্য নেতা, আন্দোলনের বার্তা আছে তার ধমনীতে। আলোচনা হল না। জুনিয়র ডাক্তাররা সামান্য কারণ ভুল বুঝে আলোচনা বাতিল করে দিলেন। রাত্রি তখন ন’টা পেরিয়ে গেছে। কিন্তু জানি তিনিই পারবেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই পারবেন। যেমন অতীতে পেরেছেন। পথ দেখিয়েছেন বাংলাকে।

Latest article