পঞ্চায়েত ভোটে ৬৫ হাজার প্রার্থীর খোঁজে এজেন্সি নামাল বিজেপি

নিশ্চিত মাত্র ১৪,৪২৮ জন, ৭,০৭৯ জনের মৌখিক সম্মতি

Must read

মণীশ কীর্তনিয়া: তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) কথাই সত্যি হতে চলেছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের (Panchayat Election- BJP) জন্য প্রার্থী খুঁজে পাচ্ছে না বিজেপি। বিজেপির হয়ে প্রার্থী হতে চাইছেন না দলের নেতা-কর্মীরাই। কারণ নিজেদের দলের নেতা-কর্মীরাই বিশ্বাস করেন না শুভেন্দু-সুকান্ত-দিলীপ ঘোষদের (Dilip Ghosh)। তাই গাছে তুলে মই কেড়ে নেওয়া কেন্দ্রীয় বাহিনীর ঘেরাটোপে থাকা নেতাদের কথায় সংগঠনহীন ছন্নছাড়া বিজেপির হয়ে প্রার্থী হতে রাজি নন কেউ। প্রার্থী খুঁজতে মাঠে নেমে বঙ্গ-বিজেপির নেতা-নেত্রীরা হাড়েমজ্জায় টের পেয়েছেন, সংগঠন মজবুত না করে শুধু রাজভবন ও এজেন্সি-নির্ভর রাজনীতি করা শুভেন্দু-সুকান্তদের কথায় পঞ্চায়েতে প্রার্থী হয়ে মান-সম্মান খোয়াতে রাজি নন কেউ। তাদের যুক্তি, যেখানে বেশিরভাগ জেলায় এখনও বুথ কমিটিই তৈরি করা যায়নি, বহু জায়গায় পার্টি অফিস খোলার লোক নেই, বিজেপির যারা সাংসদ-বিধায়ক তাঁদের কোনওদিন এলাকায় দেখেনি কেউ। এই অবস্থায় প্রার্থী হলেও প্রচারে সঙ্গে কে বা কারা যাবে? দেওয়াল লিখবে কারা? দেওয়াল খুঁজবে কারা? বুথে বসবে কারা? পোলিং এজেন্ট কোথায় পাওয়া যাবে? মানুষের দরজায় গেলে শুনতে হবে, আপনাদের নেতারা বাংলার টাকা আটকানোর জন্য দিল্লিতে বলেছে। ১০০ দিনের কাজের টাকা বিজেপি নেতাদের কথায় আটকে রয়েছে। বাংলা আবাস যোজনার টাকাও দিচ্ছে না কেন্দ্র। এসবের উত্তরে কী বলব বাংলার জনগণকে? এইসব প্রশ্নের উত্তরে কোনও জবাব দিতে পারেননি দলের নেতারা। উত্তর নেই প্রার্থী খুঁজতে নামা বেসরকারি সংস্থার কাছেও। ফলে কে আর ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াতে যায়! বঙ্গ-বিজেপির নেতাদের কথায় নেচে চুনকালি মাখতে রাজি হচ্ছেন না কেউ। সম্প্রতি বঙ্গ সফরে আসা বিজেপির সভাপতি জে পি নাড্ডার রোষের মুখে পড়তে হয়েছে শুভেন্দু-সুকান্ত-দিলীপদের। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে প্রার্থী করার জন্য হাতে-পায়ে ধরা শুরু হয়েছে। জেলাপরিষদে প্রার্থী হওয়ার জন্য বিজেপির সাংসদ-বিধায়কদেরও বলা হয়েছে। কিন্তু হুঁ-হ্যাঁ করা ছাড়া কেউই বিশেষ আগ্রহ দেখাননি।

আরও পড়ুন: কেন্দ্রের আর্থিক অসহযোগিতার বিরুদ্ধে তোপ চন্দ্রিমার, বাজেট ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে রাজ্য

রাজ্যে শুধু পঞ্চায়েতের (Panchayat Election- BJP) জন্যই দরকার ৭০ হাজার প্রার্থী। এরপর রয়েছে জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েত সমিতি৷ সব মিলিয়ে সংখ্যাটা ৮০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে। বেশ কিছু জেলায় বুথের সংখ্যা বাড়ায় স্বাভাবিক ভাবেই প্রার্থীর সংখ্যাও বাড়বে। সেটা ৮৫ হাজারও হতে পারে। কিন্তু প্রার্থী খুঁজতে গিয়ে বিজেপির অন্দরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত গোটা রাজ্যে ১৪ হাজার ৪২৮-এর বেশি প্রার্থী জোগাড় করতে পারেনি বিজেপি। আরও ৭ হাজার ৭৯ জন প্রার্থী নিয়ে কথা চলছে। আপাতত তাদের মৌখিক সম্মতি দিয়েছে। কিন্তু আলোচনার পর্যায়ে থাকায় এর মধ্যে থেকে কতজনকে রাজি করানো যাবে তা নিয়ে নিশ্চিত নয় বিজেপি নেতৃত্বই। ফলে সেখানেও প্রশ্ন চিহ্ন রয়েছে। এই খবর পাওয়ার পর মাথায় বাজ পড়েছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের। সম্প্রতি ঘনঘন কলকাতায় এসে বঙ্গ-বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করে গিয়েছেন কয়েকজন অবজার্ভার৷ জেলা থেকেও তাদের কাছে রিপোর্ট পৌঁছেছে। সবটা জানার পর শীর্ষস্তরের নির্দেশ অনুযায়ী এখন বেসরকারি সংস্থাকে কাজে লাগিয়ে পঞ্চায়েতের প্রার্থী খুঁজে বের করতে উঠে-পড়ে লেগেছে বঙ্গ-বিজেপি। তৃণমূল কংগ্রেসকে অনুসরণ করে বেসরকারি সংস্থাকে নামিয়েও কতটা ফল মিলবে তা নিয়ে দলের অন্দরেই বড়সড় প্রশ্ন চিহ্ন রয়েছে। বেসরকারি সংস্থাকে ময়দানে নামালেও আইপ্যাকের মতো কতটা দক্ষতা তারা দেখাতে পারবে কিংবা তাদের কথায় ক’জন প্রার্থী হতে রাজি হবে সেটাও বড় প্রশ্ন। এর সঙ্গে রয়েছে নিজেদের লবির লড়াই। সেখানে সম্পূর্ণ বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে নির্বাচিত প্রার্থীদের কতটা পছন্দ হবে বিভিন্ন মণ্ডলের, সেটাও একটা বাস্তব সমস্যা। সব মিলিয়ে আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগেই লেজেগোবরে অবস্থা বিজেপির। ফলে পঞ্চায়েতে জেতা তো দূর অস্ত্, শুধু টিভিতে বয়ানবাজি ছাড়া বিশেষ কিছু করার নেই বঙ্গ-বিজেপি মাতব্বরদের।

Latest article