দেশের স্বঘোষিত চৌকিদার নরেন্দ্র মোদি, আপনার ঝোলা উঠিয়ে পালানোর আগে ‘আচ্ছে দিনে’র সব হিসেব বুঝে নেবে INDIA, ইভিএমের মাধ্যমে, অপেক্ষা শুধু এখন সেই মাহেন্দ্রক্ষণের।
আরও পড়ুন-ক্যান্ডিতে আজ নেপাল-ম্যাচে বুমরা নেই
আপনার সাড়ে নয় বছরের ‘আচ্ছে দিন’ বাকি সারা জীবনের জন্য অন্ধকার নিয়ে এসেছে ভারতবাসীর কপালে! কৃষক, দলিত, সংখ্যালঘু, ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ী, শ্রমিক, ছাত্র যুব, মধ্যবিত্ত, দরিদ্র, সাংবাদিক, সামাজিক কর্মী, কেউ ভাল নেই আপনার ‘রাম রাজত্বে’। ভাল আছে শুধু ১ শতাংশ এলিট শ্রেণির ভারতীয় যাদের হাতে ভারতবর্ষের ৮০ শতাংশ সম্পদ আপনি গত সাড়ে নয় বছরে তুলে দিয়েছেন পরম স্নেহভরে। ২০১৬ সালে যাদের হাতে ছিল ভারতবর্ষের ৫৮ শতাংশ সম্পদ, তারা মাত্র সাত বছরে আমাদের মতো সাধারণ ভারতবাসীর টাকা লুট করে আরও ২২ শতাংশ সম্পদ হস্তগত করেছ, গরিব হয়েছে সর্বহারা, মধ্যবিত্ত হয়েছে গরিব, আর অমিত শাহর ছেলে জয় শাহ হয়েছেন জাদুকর ক্রোড়পতি! কী জবাব দেবেন মোদি সাহেব? জবাব দেওয়ার ক্ষমতা আপনার আছে? আপনার অভিশপ্ত ‘রামরাজত্বের’ পড়ন্ত বেলায় মানুষের মনে আপনার বিরুদ্ধে যে চরম অসন্তোষ জন্ম দিয়েছে তার রোষানল থেকে মুক্তি সম্ভব কিনা জানা নেই, তবে আপনার বিবেক যদি সামান্যতম জাগ্রত এখনও থেকে থাকে তাহলে দেশবাসীর মনে উঠে আসা এই জ্বলন্ত প্রশ্নগুলি থেকে আপনার নিস্তার নেই…
আরও পড়ুন-জন্মাষ্টমীর আগেই সেজে উঠেছে চাকলা ও কচুয়া ধাম
চলতি বছরে জানুয়ারি থেকে এপ্রিল এই চার মাসে ৮৩০ জন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন শুধু মহারাষ্ট্রে, অভাবের তাড়নায়, ভাবা যায়! প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাতজন! সত্যি ভাবা যায় না, আপনি ভাবেনও নি, জ্বলন্ত মণিপুরকে লাশের ধ্বংসস্তূপে পরিণত করতে দিয়ে আপনি মনের সুখে একের পর এক বিদেশ ভ্রমণ করেছেন আর বাম হাত দিয়ে ডান হাতে তালি বাজিয়ে প্রবাসী ভারতীয়দের কাছে দেশের মিথ্যা ছবি তুলে ধরে বাহবা কুড়িয়েছেন! আপনি বিদেশে বসে মহারাষ্ট্রের বুক চিরে বুলেট ট্রেন চালানোর ‘গল্প’ শোনাচ্ছেন প্রবাসী ভারতীয়দের আর দিল্লির বুকে আপনার বাসভবনের অদূরে মহারাষ্ট্রের আত্মঘাতী কৃষকদের অনাথ শিশু সন্তানরা আপনার বিরুদ্ধে তাদের ঘৃণা উগরে দিচ্ছেন! আপনি নির্বিকার! গত দশ বছরে আপনার রাজত্বে প্রতিবছর গড়ে দশ হাজারেরও বেশি আত্মঘাতী কৃষকের লাশ আপনার মিথ্যাচারকে বিদ্রুপ করছে মোদিজি! এই বিদ্রুপকে উপেক্ষা করবেন মোদিজি? ভেবেছেন একবার? আপনার হাতে সময় বড্ড কম, INDIA কোমর কষে হিসেব বুঝে নিতে প্রস্তুত।
আরও পড়ুন-কক্ষপথ বদল সফল, গতি বাড়াল আদিত্য
আপনার ‘রামরাজত্বের’ শুরু থেকেই এদেশের দলিতদের ওপর অত্যাচারের ঘটনা মাত্রা ছাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে, গোবলীয় উগ্র উচ্চবর্ণের হিন্দুদের দাপটে দলিত সমাজ প্রায় একঘরে, দেশের দলিত সমাজকে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে যে তাদের শখ, ইচ্ছা, ভাললাগা, ভালবাসা, পোশাক, আচার— উচ্চবর্ণের মানুষদের করুণার ওপর নির্ভরশীল! আপনার ‘রাম রাজত্বে’ হিন্দু সমাজে আবার নতুন করে বর্ণভেদ প্রবল ভাবে ফিরে এসেছে! আপনি বিদেশ ভ্রমণে আর নিত্যনতুন বাহারি পোশাক পরিচ্ছদ -চর্চায় নিজেকে ব্যস্ত রেখে শখ আহ্লাদ মেটাচ্ছেন! আপনার আমলে দলিতদের ওপর আক্রমণের ঘটনা অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে, সবচেয়ে বেশি দলিত অত্যাচারিত হয় আপনার দলের শাসনে থাকা উত্তরপ্রদেশে।
আরও পড়ুন-ফের যোগীরাজ্য, ধর্ষণের পর জ্বালিয়ে খুন তরুণী
নারীরা সবচেয়ে বেশি ধর্ষণের শিকার আজকের আধুনিক ভারতে উচ্চবর্ণের হিন্দুদের দ্বারা! গত নয় বছরে নৃশংস অত্যাচারের ঘটনায় দেশের দলিতসমাজ আপনার রাজত্বে নিজেদের অচ্ছুত, পরাধীন, অত্যাচারিত ভাবছেন… একরাশ ঘৃণা সঙ্গে করে তারা আজ INDIA-র ছত্রচ্ছায়ায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে আপনার বিরুদ্ধে পথে নেমেছে প্রতিবাদের মশাল কাঁধে নিয়ে, পারবেন তো সামাল দিতে মোদিজি? আদানি- আম্বানিদের বৈভবের সান্নিধ্যে অভ্যস্ত আপনার নাজুক শরীর-মন সহ্য করতে পারবে তো দলিত সমাজের ক্ষোভের আগুনের লেলিহান শিখা? আপনার দরজায় কড়া নাড়ছে INDIA-র কোটি কোটি দলিত, না, তারা আর বিচার চায় না আপনার কাছে, তারা আপনার এই দুঃশাসনের শেষ চায়… কোন জুমলায় INDIA-র ক্ষোভ প্রশমিত করবেন মোদিজি?
আরও পড়ুন-মোদিরাজ্যের ছায়া উত্তরপ্রদেশেও! মর্মান্তিক পরিণতি বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকের
বছরে দু’কোটি কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আপনি… দেশের বেকার যুবক-যুবতীরা স্বপ্ন দেখেছিল আপনার ‘আচ্ছে দিনের’ গল্পে। ক্ষমতায় এসেই আপনি কী করলেন— সমস্ত দফতরে নিয়োগ বন্ধ করে দিলেন। গোদের ওপর বিষফোড়ার যন্ত্রণা দিলেন ডি-মানিটাইজেশন করে। সার দেশে পঞ্চাশ লক্ষ বেকার বৃদ্ধি পেল। স্বনির্ভর হবেন INDIA-র বেকাররা? আপনার ব্যাঙ্ক বেকারদের লোন দেওয়া প্রায় বন্ধ করে দিল। এনপিএ বৃদ্ধি পেয়েছে তাই। কেনও এনপিএ বৃদ্ধি পেল ব্যাঙ্কগুলির? না ললিত, নীরব মোদিরা নরেন মোদির চৌকিদারির সুযোগে দেশের মানুষের টাকা লুট করে পালিয়ে গেছে! যে সামান্য কিছু নিয়োগ হচ্ছিল তাও বন্ধ। এখন চার বছর সব নিয়োগ আটকে রেলের নিয়োগকে সামনে রেখে দুই হাজার চব্বিশ পার করার ধান্দা! দিল্লির রাজপথে কয়েক লক্ষ বেকার যুবক-যুবতী আপনার বিরুদ্ধে পথে নেমেছে, ভাবুন যেই যুবক যুবতীরা আপনার থ্রিডি প্রচারে মোহিত হয়ে গত সাড়ে নয় বছরে আপনার সব ফেকুগিরিকে অন্ধভাবে সমর্থন করে এসেছে, তারা আজ উল্টোসুরে আপনার বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃণা বর্ষণ করছে।
আরও পড়ুন-প্রয়াত হিথ স্ট্রিক, সোশ্যাল মিডিয়ায় শোকার্ত স্ত্রী
দেশের সংখ্যালঘু সমাজ আজ ক্লান্ত, হতাশ। ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা এবং ক্ষমতা দখলের রাজনীতিতে ধর্মের অনুপ্রবেশ বৃদ্ধি পেয়েছে ‘রাম রাজত্বে’। সাম্প্রদায়িক ও জাতিগত দাঙ্গায় ভারতবর্ষ জ্বলছে আর আপনি যোগে মগ্ন। সংখ্যালঘুরা সমাজের মূল স্রোত থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন আপনার রাজধর্ম পালনে অনীহা দেখে। আপনি তাদের বিশ্বাস করাতে ব্যর্থ হয়েছেন যে আপনি এই দেশের ১৩০ কোটি ভারতবাসীর প্রধানমন্ত্রী, চৌকিদার। আপনি রাজধর্ম পালন করে সংখ্যালঘু ভারতীয়দের মনে আস্থা অর্জন করতে অপারগ। পারবেন তো সংখ্যালঘু ভারতীয়দের অবিশ্বাসের আবহে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতীয়দের মন ছুঁতে?
আরও পড়ুন-‘পাকিস্তান চলে যাও’ সাম্প্রদায়িক মন্তব্যে অভিযুক্ত কর্ণাটকের শিক্ষিকা
পেট্রোল, ডিজেল ও রান্নার গ্যাসের দাম গত ৯ বছরে সর্বকালীন রেকর্ড ভেঙে অস্বভাবিকহারে বৃদ্ধি পেয়ে আকাশ ছুঁয়েছিল। মানুষ মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন সেই চরম মূল্যবৃদ্ধি। ভোটের মুখে সামান্য দাম কমিয়ে যতই মলম লাগানোর চেষ্টা করা হোক সাধারণ মানুষ সেই ক্ষতের জ্বালা ভুলবে না। ইপিএফে সুদ কম করা হচ্ছে। সেভিংসে সুদের হার কমানো হচ্ছে। জিএসটির করের বোঝা, এফআরডিআই চালু করার উদ্যোগ। INDIA-র মানুষের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। মোদিজি সর্বত্র সাধারণ মানুষের হাহাকার। ধর্মের আফিমে কিছু অমানুষকে মত্ত রেখে দেশের বাকি মানুষদের ওপর ছড়ি ঘোরানোর কৌশল বিক্ষিপ্তভাবে কাজে লাগলেও সাধারণ মানুষকে সম্মিলিতভাবে আর বোকা বানানো যাবে না। আমাদের পকেট কেটে নীরবে ললিত মোদিদের পকেট ভরিয়ে আখের গোছানোর দিন শেষ মোদিজি। হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা আর দেশের সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তান ও চিনের জঙ্গি-সহায়তা রুখতে ব্যর্থ হয়ে উগ্র জাতীয়তাবাদের মোড়কে দেশপ্রেমকে ক্ষমতা দখলের পুঁজি করা… এই উভয় কৌশলে ১৩০ কোটি ভারতবাসীকে বোকা বানানোর চেষ্টা করে কোনও লাভ আছে মোদিজি? পেটে লাথ-খাওয়া ভারতবাসী আর কোন ভরসায় আপনার হাতের লাড্ডু খাবেন বলতে পারেন মোদিজি?
আরও পড়ুন-তেলেঙ্গানায় ব্যাঙ্ক লুঠ করতে ব্যর্থ, লিখে গেল ‘ভাল’ নিরাপত্তা
ভাবুন মোদিজি…ভাবতে থাকুন…INDIA প্রস্তুত সব হিসেব বুঝে নিতে। আগামী লোকসভা নির্বাচনে INDIA-র কাছে আপনার পরাজয় স্বীকারের পর INDIAবাসী আপনাকে বিদেশে স্থানান্তরিত করে আপনার বিদেশ ভ্রমণের শখ মিটিয়ে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত।