সৌম্য সিংহ: জীবন আর মৃত্যুর মাঝের সীমারেখাটা সত্যিই খুব অস্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে প্রতিটি মুহূর্তই যেন হয়ে উঠছিল অনন্তকাল। রোপওয়েতে জয় রাইডিংয়ের এমন ভয়ঙ্কর পরিণতির শিকার হয়ে অনেকে হারিয়ে ফেলেছিলেন জীবনের অনুভূতিটাই। মৃত্যুপথযাত্রী সেই অসহায় মানুষগুলোকেই নিজেদের জীবনকে বাজি রেখে ফিরিয়ে আনলেন সামরিক এবং আধাসামরিক বাহিনী এবং জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর জওয়ানরা।
আরও পড়ুন-এক হাজার কোটির বেশি বিনিয়োগ, কর্মসংস্থানও
দেওঘর থেকে ত্রিকূট পাহাড়, এই ২২ কিমি দূরত্বজুড়ে রবিবার বিকেল থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রায় ৪৬ ঘণ্টার দুঃসাহসিক উদ্ধার অপারেশনে তাঁদের নিখুঁত মুন্সিয়ানা দেখে কখনও মনে হয়েছে উড়ন্ত বাজপাখি। আবার কখনও মনে হয়েছে প্রকৃতিকে সাক্ষী রেখে নীল আকাশ আর ধূসর পাহাড়ের মাঝে চলছে বায়ুসেনার ট্র্যাপিজের খেলা। কী অসাধারণ প্রত্যয়, ইচ্ছাশক্তি আর মনের জোর। উদ্ধারের আগে তাঁরা মোটিভেটও করেছেন জীবনের আশা ছেড়ে দেওয়া আটকে পড়া রোপওয়ে আরোহীদের। মঙ্গলবার শেষ হল উদ্ধার-কাজ। পাহাড়-জঙ্গলে প্রায় ৪০ ঘণ্টা শূন্যে ঝুলে থাকা ১৫ জন পর্যটকের মধ্যে ১৪ জনকেই উদ্ধার করেছে বায়ুসেনার হেলিকপ্টার। জওয়ানরা বাবা-মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়েছেন শিশুসন্তানকে।
আরও পড়ুন-পারলেন না ভোট দিতে
তাঁদেরই সাহায্যে শাড়ি পরিহিত মহিলা হেলিকপ্টারের দড়ি ধরে ঝুলে নামতে পেরেছেন নিরাপদ জায়গায়। ঘন গাছপালা আর রুক্ষ পাথরের ফাঁক গলে হেলিকপ্টারে তুলে নেওয়া হয়েছে বিপন্ন যুবতীকে। সবমিলিয়ে রবিবারের দুর্ঘটনাকবলিত ১০টি কেবল কারের মোট ৪৭ জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। সোমবার হেলিকপ্টারে উদ্ধার অপারেশন চালানোর সময় প্রাণ হারান একজন। মঙ্গলবার ভোরেও উদ্ধার করতে গিয়ে পড়ে গিয়ে প্রাণ হারান শোভাদেবী নামে ৬০ বছরের এক মহিলা। সম্ভবত অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করতে গিয়েই এই ঘটনা। নিচে পড়ে যাওয়ার পরে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও বাঁচানো যায়নি তাঁকে। সবমিলিয়ে মৃতের সংখ্যা তিন।