প্রতিবেদন : একাধিক ইস্যুতে সোমবার উত্তাল করে দিলেন ইন্ডিয়া জোটের সাংসদেরা। ভিতরে ও বাইরে দু-জায়গাতেই এনডিএ সরকারকে চেপে ধরেছেন তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদেরা। সঙ্গে ছিলেন জোট শরিকেরাও। তিন নয়া কালাকানুন, কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির অপপ্রয়োগ, অরবিন্দ কেজরিওয়াল-সহ আপের নেতা-মন্ত্রীদের জেলমুক্তি— এরকম একাধিক ইস্যুতে সংসদ-চত্বরে বিক্ষোভ দেখান বিরোধীরা। তৃণমূলের কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌগত রায়, শতাব্দী রায়, ডাঃ কাকলি ঘোষ দস্তিদারদের সঙ্গে যোগ দেন রাহুল গান্ধী-সহ ইন্ডিয়া জোটের সাংসদেরা। হাতে প্ল্যাকার্ড-পোস্টার নিয়ে এনডিএ সরকার, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন সকলে। নয়া তিন কালাকানুনের (Bharatiya Nyaya Sanhita) বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ সোমবার রাজ্য জুড়ে আদালতগুলিতে কর্মবিরতি চালান আইনজীবীরা।
আরও পড়ুন-চোপড়া নিয়ে কড়া ব্যবস্থা রাজ্যের, নিগৃহীতাকে পুলিশি নিরাপত্তা প্রশাসনের
সোমবার থেকে কার্যকর হওয়া নতুন তিনটি ফৌজদারি আইনের বিরোধিতা করে তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ সাগরিকা ঘোষ নতুন আইন সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তৃণমূল সাংসদ তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে পাঠানো বার্তায় বলেছেন যে, নতুন আইনগুলিতে অস্পষ্ট শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে এবং নাগরিকদের জীবন ও স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার বিশাল সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে সরকারকে। তিনি বলেছেন, রাজদ্রোহের অপরাধ পিছনের দরজা দিয়ে প্রবেশ করানোর সুযোগ রাখা হয়েছে, যা খুবই বিপজ্জনক। বার্তায় বলা হয়েছে, সন্ত্রাসবাদকে প্রথমবারের জন্য সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে এবং এটি প্রতিদিনের ফৌজদারি অপরাধের একটি অংশ হিসেবে রাখা, এটাও খুবই বিপজ্জনক। একজন পুরুষের দ্বারা একজন মহিলার সাথে বিবাহের প্রতিশ্রুতিতে ‘প্রতারণা’কে একটি ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে ব্যক্তির গোপনীয়তায় অনুপ্রবেশ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ১ জুলাই থেকে যে নতুন আইন কার্যকর হল তাতে ১৮৬০ সালে তৈরি ‘ইন্ডিয়ান পেনাল কোড’ বা ভারতীয় দণ্ডবিধি বদলে হয়েছে ‘ভারতীয় ন্যায়সংহিতা’, (Bharatiya Nyaya Sanhita) ফৌজদারি দণ্ডবিধি বদলে হয়েছে ‘ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষাসংহিতা’ এবং ভারতীয় সাক্ষ্য আইনের বদলে হয়েছে। এই নতুন আইনে একদিকে বাদ পড়েছে ১৯টি পুরনো আইন আর যুক্ত হয়েছে ২০টি নয়া বিধি। সোমবার নতুন ফৌজদারি আইন কার্যকর হওয়ার সাথে সাথে বিরোধীরা সরকারকে আক্রমণ করে, এমপিদের বরখাস্ত করে জোরপূর্বক আইন পাশ করার অভিযোগ তোলে এবং দাবি করে যে আইনের প্রধান অংশগুলি ‘কাট, কপি এবং পেস্টের কাজ’। গত ডিসেম্বরে পার্লামেন্টে পাশ করা ভারতীয় ন্যায়সংহিতা, ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষাসংহিতা এবং ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়াম, বিরোধী নেতাদের দ্বারা সমালোচিত হয়েছে— যারা দাবি করে যে, সরকার পর্যাপ্ত আলোচনা ও বিতর্ক ছাড়াই সংসদে এই বিল পাশ করিয়েছে। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে বলেছেন, নির্বাচনে রাজনৈতিক এবং নৈতিক ধাক্কার পরে, মোদিজি এবং বিজেপি সংবিধানকে সম্মান করার ভান করছে, কিন্তু সত্য হল যে, ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার তিনটি আইন যা সোমবার থেকে কার্যকর করা হচ্ছে, জোর করে ১৪৬ জন সাংসদকে বরখাস্ত করে পাশ করানো হয়েছিল। কংগ্রেস সাংসদ ও প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম, আইন বিশেষজ্ঞ এবং আইনজীবীদের দ্বারা উত্থাপিত সমালোচনার সমাধান না করার জন্য এবং সংসদে সার্থক বিতর্ক না করার জন্য সরকারকে তিরস্কার করেন। তিনি বলেন, বিদ্যমান তিনটি আইনকে বুলডোজ করে পর্যাপ্ত আলোচনা ও বিতর্ক ছাড়াই তিনটি নতুন বিল দিয়ে প্রতিস্থাপন করার আরেকটি ঘটনা। যার প্রাথমিক প্রভাব ফৌজদারি বিচার প্রশাসনকে বিশৃঙ্খলার মধ্যে ফেলে দেবে।