নারীর ক্ষমতায়নে জননেত্রীর দেখানো পথেই সার্বিক সাফল্য

অর্থনৈতিক সক্ষমতা নারী ক্ষমতায়নের অন্যতম দিক। তাঁদের স্বাবলম্বী করতে তথা আত্মনির্ভরতার জন্য স্বল্প পরিমাণ হলেও অর্থ প্রদানের প্রকল্প যথেষ্ট তাৎপর্যমণ্ডিত। দ্বিতীয় পর্বে লিখছেন অধ্যাপক ড. প্রদীপ্ত মুখোপাধ্যায়

Must read

(গতকালের পর)
২৮ আগস্ট তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা দিবসে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন যে আগামী দিনে বাংলার ছাত্র ভোটে ৫৫% আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হবে। এ বক্তব্য মুখ্যমন্ত্রী সর্বান্তকরণে সমর্থন করেন। স্বাভাবিকভাবেই এই ব্যবস্থা সব দলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে। আর অন্যদিকে ১৯৯৬ সালে পার্লামেন্টে ও বিধানসভায় মহিলাদের জন্য ৩৩% আসন সংরক্ষণের বিল সংসদে আনা হয়। এরপর ১৯৯৮, ১৯৯৯ ও ২০০৮ সালে ওই একই বিষয়ে পুনরায় বিল আনা হয়। নানান টালবাহানার পর ২০২৩ সালে সংবিধানের ১০৬তম সংশোধনের মাধ্যমে সংসদে ও বিধানসভাগুলিতে নারীদের জন্য ৩৩% আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা হয়। কিন্তু ২০১১ এর পর আজ অবধি জনগণনা সম্পন্ন হয়নি। তাই প্রশ্ন ওঠে উক্ত সংশোধনী বিল আইনে পরিণত হলেও, স্বাধীনতার সাত দশক পরে, বাস্তবে তা কবে কার্যকর হবে? কিন্তু একথা বলাই যায় নারী ক্ষমতায়নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বাংলা নতুন পথ দেখাচ্ছে। কারণ, স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের মাধ্যমেই সংসদীয় ব্যবস্থার ভিত্তি মজবুত হয়। আর তিনি সেখানেই মহিলাদের জন্য বৃহত্তর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছেন।

আরও পড়ুন-নবরাত্রির পুজো দিয়ে টি ২০-র প্রস্তুতি গম্ভীরের

২০১১ সালে সরকারে এসে এই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কন্যাশ্রীর মতো যুগান্তকারী প্রকল্প গ্রহণ করেন। যার যোগ্য সহায়ক প্রকল্প হিসেবে সবুজসাথীও শুরু হয়। কন্যাশ্রী শুধুমাত্র স্কুল কলেজ ছাত্রীদের হাতে সরাসরি টাকা পৌঁছানোর মতো সাদামাটা প্রকল্প নয়। এটি নারী শিক্ষার প্রসার, স্কুলছুট রোধ, তথা নারীর ক্ষমতায়নের অন্যতম ভিত্তি। অনেক গবেষক মনে করেন, এমনকী এই প্রবন্ধের লেখক দীর্ঘ ১৪ বছর একটি মহিলা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যাপনার সুবাদে অনুধাবন করেছেন যে, কন্যাশ্রীর ফলে সাধারণ গরিব পরিবারের অভিভাবকগণ আজ আর মেয়েদের দ্রুত বিয়ে দেওয়ার জন্য ব্যস্ত হন না। বরং এই প্রকল্প বাল্যবিবাহ রোধে দুর্দান্ত ভূমিকা নিয়েছে। আর যখনই বাল্যবিবাহ কমছে স্বাভাবিকভাবে মেয়েদের শারীরিক সক্ষমতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে গর্ভধারণ ক্ষমতা বাড়ছে এবং তার ফল হিসেবে শিশু মৃত্যুর হারও কমছে। দিকে দিকে কন্যাশ্রী ক্লাব শুরু হয়েছে। মেয়েরা বলছে আগে পড়াশোনা শেষ করে নিজের পায়ে দাঁড়াব তারপর বিয়ে। আমাদের দিদি মেয়েদের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সুবিধা বৃদ্ধির জন্য কন্যাশ্রী প্রকল্পকে ধীরে ধীরে বিশ্ববিদ্যালয় স্তর অবধি পৌঁছে দিয়েছেন। এই কারণেই ২০১১ সালের পর থেকে উচ্চশিক্ষায় নারীদের ভর্তির হার তথা গ্রস এনরোলমেন্ট রেশিও বেড়েছে এবং স্কুল শিক্ষায় স্কুলছুটের হার কমেছে। উল্লেখ্য, ২০২৩-’২৪ অর্থবর্ষে ২০.৬৯ লক্ষ ছাত্রী কন্যাশ্রীর বার্ষিক মেধাবৃত্তি পেয়েছে এবং আজ অবধি ৮৫.৫৩ লক্ষ ছাত্রী কন্যাশ্রীর সুবিধা পেয়েছে। এছাড়া ২০২৩-২৪ সালে ৪.২০ লক্ষ ছাত্র এককালীন অর্থ সাহায্য পেয়েছে। এবং সব মিলিয়ে এই খাতে ২০২৩-’২৪ সালে ১৫৫১ কোটি টাকা (প্রায়) মমতাবাদী সরকার খরচ করেছে। ঠিক একইভাবে সবুজ সাথীর মাধ্যমে যে সাইকেল ছাত্রীরা পায় তাতে প্রাত্যহিক যাতায়াত খরচ কমিয়ে তথা যাতায়াতের সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে স্কুলছুটের হার কমেছে ও ভর্তির হার বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই সরকারের আমলেই পূর্ব ভারতের প্রথম মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা হয়, ডায়মন্ড হারবারে।

আরও পড়ুন-বন্যা ত্রাণে ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ দিলেন গুপ্তিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা

নারী সম্মান ও ক্ষমতায়নে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মহিলাদের মাথায় রেখে স্বাস্থ্য সাথী কার্ড চালু করেছেন যাতে বিনামূল্যে রোগী পরিষেবা দেওয়া যায় মায়েদের স্ত্রীদের নামে স্বাস্থ্য সাথী কার্ড তৈরি হয় এবং পরিবারের পুরুষদের সেখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বর্তমানে প্রায় ২.৪ কোটি মানুষ স্বাস্থ্যসাথী কার্ড-এর আওতায় এসেছেন এবং ২০১৪ সালের জুলাই মাস অবধি প্রায় ৭৭ লক্ষ মানুষ স্বাস্থ্য সাথী কার্ড-এর মাধ্যমে পরিষেবা পেয়েছেন। ঠিক একইভাবে অর্থাৎ নারীর ক্ষমতায়নে ও সম্মানের জন্য মুখ্যমন্ত্রী রূপশ্রী প্রকল্প চালু করেন। গরিব মানুষেরা যাতে মেয়ের বিয়েতে তাঁদের অর্থনৈতিক সমস্যাকে দূর করতে এককালীন ৫০ হাজার টাকা অনুদান দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। এতে যে মেয়েটির বিয়ে হবে তার যেমন কিছু সুবিধা হয় তেমনই অর্থনৈতিক দুর্বলতার কারণে তাদের সম্মানহানি যাতে না হয় সেদিকটাও দেখা হয়েছে। তাই আজ অবধি ১.৯৩ লাখ মানুষ রূপশ্রী প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছে এবং প্রায় ৫৩০ কোটি টাকা রূপশ্রী খাতে ব্যয় হয়েছে।
তৃণমূল কংগ্রেস সরকার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প চালু করেছে। যা এক কালজয়ী প্রকল্প। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ তথা নোবেল জয়ী অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় তৎসহ অমর্ত্য সেন এমনকী বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু মানুষের হাতে সরাসরি অর্থ প্রেরণকে অর্থনীতির সচলতার একটা অন্যতম দিক হিসেবে বিচার করেন। তৃণমূল কংগ্রেস তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কথা দিয়ে কথা রাখেন। তিনি ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে কথা দিয়েছিলেন ক্ষমতায় আসীন হলেই নতুন সরকার মায়েদের সম্মান রক্ষার্থে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার চালু করবে এবং সরকারে আসীন হওয়ার পরেই তিনি সাধারণ মহিলাদের জন্য ৫০০ টাকা মাসিক এবং তফসিলি জাতি-উপজাতি মহিলাদের জন্য ৭০০ টাকা মাসিক ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করেন। এবং ২০২৪ সালে তা যথাক্রমে ১০০০ টাকা ও ১২০০ টাকা করা হয়। ২০২৩-’২৪ অর্থবর্ষে ১.৯৮ লক্ষ মহিলা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার-এর আওতাভুক্ত হন এবং তার জন্য ১০১০১ কোটি টাকা প্রায় খরচ হয়েছে। এ ছাড়াও সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী ও দুয়ারে সরকারের মাধ্যমে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে ২০২৪ সালের মার্চ অবধি আরও ১৩ লক্ষ আবেদন জমা পড়ে ও মঞ্জুর হয়। অর্থাৎ বর্তমানে প্রায় ২ কোটি ১১ লক্ষ মহিলা লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের আওতাভুক্ত। এ-প্রকল্পের কতখানি গুরুত্ব তা সাধারণ গরিব ঘরের মায়েদের সঙ্গে কথা বললেই বোঝা যায়। অর্থনৈতিক সক্ষমতা নারী ক্ষমতায়নের অন্যতম দিক। তাঁদের স্বাবলম্বী করতে তথা আত্মনির্ভরতার জন্য স্বল্প পরিমাণে হলেও এহেনও অর্থ প্রদানের প্রকল্প যথেষ্ট তাৎপর্যমণ্ডিত। তাই তো মধ্যপ্রদেশে ভোটের আগে সেখানকার বিজেপি সরকার লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের অনুকরণে লাডলি বাহেন প্রকল্প শুরু করেছে।
(এরপর আগামিকাল)

Latest article