প্রতিবেদন : হাল ছেড়ো না, লেগে থাকো— এই মর্মকথাটিকে অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চলেছেন তিনি। কাজ করে চলেছেন, কিন্তু ফলের আশা করছেন না। গত চার দশকে দেশের বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমেছেন ২৩৮ বার। টেলিফোন, আংটি, টুপি, মাছ-সহ লড়েছেন একগুচ্ছ প্রতীকে। কখনও প্রতিপক্ষ ছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী, কখনও মনমোহন সিং, আবার কখনও রাহুল গান্ধী কিংবা নরেন্দ্র মোদি। হেরেছেন প্রত্যেকবারই। তবুও ক্ষান্ত হননি তামিলনাড়ুর ৬৫ বছরের বৃদ্ধ টায়ার ব্যবসায়ী কে পদ্মরাজন। ফের প্রার্থী হয়েছেন লোকসভা নির্বাচনে। তামিলনাড়ুর ধর্মপুরী কেন্দ্র থেকেই তিনি লড়বেন এবারের দিল্লি দখলের লড়াইয়ে। তবে জেতার জন্য নয়।
আরও পড়ুন-রণকৌশল জানতেই মোবাইল হাতড়াচ্ছে ইডি
পদ্মরাজনের কথায়, সব প্রার্থীই জিততে চান। তবে আমি নই। ১৯৮৮ সালে প্রথমবার তামিলনাড়ুর মেট্টুর কেন্দ্র নির্বাচনী লড়াইয়ে নামেন পদ্মরাজন। তারপর পঞ্চায়েত থেকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পর্যন্ত, দেশের বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হয়েছেন সবরকম ভোটেই। বলাই বাহুল্য, হেরে গিয়েছেন প্রত্যেকবারই। ভারতের সবচেয়ে ব্যর্থ প্রার্থী হিসেবে পদ্মরাজনের নাম উঠেছে লিমকা বুক অফ রেকর্ডস-এও। লোকে মজা করে নাম দিয়েছে, ভোটের রাজা। কিন্তু তাতেও দমে যাননি কখনওই। কারণ, হারের কথা ভাবেন না পদ্মরাজন। তাঁর উদ্দেশ্য অনেক বড়। তাঁর মতে, হারই ভাল। এই সহজ সত্যিটা মন বুঝে গেলে আর চাপ থাকে না। ভোটে লড়ার মনোবাঞ্ছা নিয়েও যাঁরা পিছিয়ে আসেন, তিনি তাঁদের পথ দেখাতে চান। প্রমাণ করতে চান, গণতন্ত্রে যে কেউ চাইলেই প্রার্থী হতে পারেন। কারণ তাঁর মতে, বর্তমানে ভোটাধিকারের প্রয়োগ দেশে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি, প্রতিবারই ভোটে দাঁড়িয়ে সমাজকে বিশেষ বার্তা দেন তিনি। এবারের নির্বাচনে যেমন টায়ার প্রতীকে লড়ে তাঁর বার্তা, ইঞ্জিনের জোরে নয়, চাকায় ভর করেই আসল এগিয়ে চলা। ব্যবসার পাশাপাশি স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যমেও যুক্ত। সঙ্গে আবার হোমিওপ্যাথি চর্চা। তাও বারবার ভোটে দাঁড়িয়ে তিনি পরবর্তী প্রজন্মকে বার্তা দিতে চান, এভাবেই পরাজয়কে হারিয়ে আবার উঠে দাঁড়াতে হয়। তবে এর জন্য তাঁকে হারাতেও হয়েছে অনেক কিছুই। ২৩৮ বার ভোটে দাঁড়িয়ে জিততে না পারায় প্রতিবারই নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা রাখা তাঁর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।