সংবাদদাতা, আলিপুরদুয়ার : ডুয়ার্সকে বলা হয় মিনি ভারতবর্ষ। সেই মিনি ভারতের একপ্রান্তে ভুটান পাহাড়ের কোলে বাস করে পৃথিবীর প্রাচীনতম জনজাতি টোটো। তাদের নামেই গ্রামের নাম টোটোপাড়া। এই প্রাচীনতম জনজাতির ভাষাকে রক্ষা করতে এগিয়ে এসেছিলেন সেই জনজাতিরই এক দূরদর্শী মানুষ, রাজ্য সরকারের অনগ্রসর কল্যাণ দফতরের কর্মী তথা কবি ও সাহিত্যিক ধোনিরাম টোটো। টোটো হরফ ও অক্ষর তৈরির ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্যে এবছর পদ্মশ্রী পুরস্কার পেলেন টোটো সাহিত্যিক ধনিরাম টোটো।
আরও পড়ুন-শীত উধাও, গরমেই সরস্বতীর আরাধনা
আলিপুরদুয়ার জেলার সীমান্তঘেঁষা ভুটানের তাদিং পাহাড়ের কোলের ওই আপনভোলা মানুষটি প্রকৃতির সাধক। শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়ে এই মানুষটি একদিন স্বপ্ন দেখেছিলেন যে, যদি পৃথিবীর সব জনজাতির পৃথক অক্ষর ও ভাষা থাকতে পারে, টোটোদের কেন থাকবে না? এটাই হয়তো একদিন টোটোদের অস্তিত্বের জানান দেবে সারা বিশ্বে। এই ভাবনা থেকেই তিনি সাফল্যের সঙ্গে তৈরি করেন তাদের নিজেদের ভাষার বর্ণমালা। এক অস্ট্রেলিয়ান সাহেবের সহায়তা নিয়ে ৩৭ শব্দের অক্ষর রাশি তৈরি করেছেন। সঙ্গে টোটো সাহিত্যে প্রচুর কবিতা, উপন্যাস ও রম্যরচনা সৃষ্টি করে টোটো সমাজে নিজেকে খানিক অন্য উপমায় প্রতিস্থাপন করেছেন আত্মভোলা গোছের মানুষটি। সব সময় চেয়ে এসেছেন পৃথিবীর একমাত্র প্রিমিটিভ ট্রাইবদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে।
আরও পড়ুন-রাজ্যপালের হাতেখড়ি অনুষ্ঠান বয়কট বিরোধী দলনেতার, নিন্দায় সরব কুণাল ঘোষ
এই প্রবীণ লেখক আজও উপন্যাস লেখায় বাস্ত। তাঁর বিশ্বাস, টোটো জনজাতির রাখাল ছেলে ও একটি ভুটানি মেয়ের মধ্যে গড়ে ওঠা প্রেমের ওপর লেখা তাঁর আগামী উপন্যাস কালজয়ী হবে। তবে পদ্মশ্রী পাওয়ার খবর জেনে ফিরে গিয়েছেন যৌবনে। বলেন, আমি শিরোপা চাইনি কখনও। শুধু চেয়েছি, টোটো সমাজ স্বীকৃতি পাক। সরকার টোটোদের সংরক্ষণে পদক্ষেপ গ্রহণ করুক। এই জনজাতির শিক্ষিত যুবকদের কর্মসংস্থানে নজর দিক সরকার। জীবনের প্রান্তবেলায় এসে এই পুরস্কার আদতে টোটো সমাজেরই জয়।