প্রতিবেদন : যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে বৃহস্পতিবার রাতে ভারতের ৩৬ জায়গায় অন্তত ৩০০ থেকে ৪০০ বার হামলার চেষ্টা করেছে পাকিস্তান। কিন্তু ভারতীয় সেনাবাহিনী বারবারই সেই অপচেষ্টা প্রতিহত করেছে। সাধারণ নাগরিকদের লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে পাকিস্তান। বৃহস্পতিবার রাতে পাকিস্তানি সেনার আচরণ ছিল প্ররোচনামূলক। তবে ভারতের প্রত্যাঘাতে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে পাকিস্তানি সেনার। শুক্রবার স্পষ্ট ভাষায় একথা জানিয়ে দিল ভারতের বিদেশমন্ত্রক এবং ভারতীয় সেনা। এদিন, দিল্লিতে আয়োজিত এক সাংবাদিক বৈঠকে বিদেশসচিব বিক্রম মিশ্রি বলেন, পাকিস্তানের নোংরা কৌশল বেআব্রু হয়ে গিয়েছে। সাধারণ নাগরিকদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে তারা। শুক্রবার রাত অবধি পরিস্থিতি পর্যালোচনায় প্রধানমন্ত্রীর বাড়িতে বৈঠক হয়।
এদিকে, জম্মু-কাশ্মীরের সাম্বায় বিএসএফ গুলি করে মারল ৭ জইশ জঙ্গিকে। সাম্বা সেক্টরের আন্তর্জাতিক সীমান্ত দিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছিল ওই জঙ্গিরা। তাদের চ্যালেঞ্জ জানায় বিএসএফ। দফায় দফায় গুলি চালান জওয়ানরা। নিয়ন্ত্রণরেখায় ৫০টি পাক ড্রোন ধ্বংস করে দিয়েছে ভারতীয় বাহিনী। হোসিয়ারপুর আর ভাতিন্ডায় পাওয়া গিয়েছে পাক মিসাইল। শুক্রবার উদ্ভূত পরিস্থিতি এবং নিরাপত্তাব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে দফায় দফায় আলাদা বৈঠক করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। প্রতিরক্ষামন্ত্রী বৈঠক করেন সেনাপ্রধান এবং ৩ বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে ছিলেন বিএসএফ, সিআইএসএফ এবং গোয়েন্দাপ্রধানেরা। এদিনই সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে অফিসিয়াল ভিডিও প্রকাশ করা হল অপারেশন সিঁদুরের।
আরও পড়ুন-কান্দাহার-কার্গিল বা ২৬/১১-র মতো প্রিম্যাচিওর রিপোর্টিং নয়
জোর ধাক্কা পাকিস্তানকে : বৃহস্পতিবার রাতে ব্ল্যাক-আউটের মধ্যেই জম্মুতে ড্রোন হামলা চালায় পাকিস্তান। কিন্তু ভারতীয় সেনার তৎপরতায় লক্ষ্যপূরণ হয়নি তাদের। ব্যর্থ হয় পাক-অপচেষ্টা। তবে উরিতে প্রাণ হারান এক মহিলা। বেশকিছু ঘরবাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয় পাক হামলায়। শুক্রবার ভোরে ফের হামলার চেষ্টা করতে গিয়ে জোর ধাক্কা খায় পাকিস্তান। তবে পুঞ্চ, রাজৌরি ও জম্মুর আন্তর্জাতিক সীমান্তে আবার গুলিবর্ষণ করে পাকিস্তান। গোলা ছুঁড়েছে সাধারণ মানুষের ঘরবাড়ি লক্ষ্য করে। মুখের উপরে জবাব দেয় ভারতও। শুক্রবার ভোর সাড়ে চারটে থেকে সাড়ে পাঁচটার মধ্যে জয়সলমেরের রামগড়ে বিএসএফ ক্যাম্পে ড্রোন হামলা চালাতে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে পাকিস্তান। ভোরে হামলার খবর পেয়েই জম্মুতে ছুটে যান জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা। তাৎপর্যপূর্ণভাবে এদিন ভোররাতে আরব সাগরে পাকিস্তানের একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে অভিযান শুরু করেছে ভারতীয় নৌবাহিনী।
আইএমএফ সাহায্য বন্ধ করুক : পাকিস্তানকে অর্থসাহায্য বন্ধ করে দিতে আইএমএফের প্রেসিডেন্টের কাছে আবেদন জানাবে ভারত। শুক্রবার বিকেলে এক সাংবাদিক সম্মেলনে একথা জানিয়েছেন বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি। এদিন তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, সাংবাদিক ড্যানিয়েল পার্লকে হত্যার জন্য দায়ী জইশ-ই-মহম্মদ। বিদেশ সচিব খোলাখুলি অভিযোগ করেছেন, সমস্ত পরিস্থিতিকে সাম্প্রদায়িক রঙ দিচ্ছে পাকিস্তান। নষ্ট করার চক্রান্ত করছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। ভারতের ধর্মস্থানে আঘাত করছে। গুরুদ্বার, কনভেন্ট, মন্দিরে হামলা চালাচ্ছে। প্রাণ হারিয়েছে কনভেন্ট স্কুলের ২ শিশু পড়ুয়া। গুরুতর জখম তাদের বাবা-মাও। কিন্তু ভারত পাকিস্তানের কোনও ধর্মস্থানে আঘাত করেনি। বিদেশ সচিবের অভিযোগ, সাধারণ নাগরিকদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে পাকিস্তান। এটা তাদের নোংরা কৌশল। ভারতের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে সারা বিশ্বকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। আসলে ভারতের ঐক্যই পাকিস্তানের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ।
এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে ছিলেন কর্নেল সোফিয়া কুরেশি এবং উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং। তাঁরা জানিয়েছেন, ভারতের সেনাঘাঁটিগুলিই ছিল পাকিস্তানের মূল লক্ষ্য। কাইনেটিক এবং ননকাইনেটিক পদ্ধতিতে ভারত যোগ্য জবাব দিয়েছে। তুর্কি ড্রোন ব্যবহার করেছে পাকিস্তান। ভারতীয় আকাশসীমা লঙ্ঘন করছে তারা। যাত্রীবিমানগুলোকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করছে পাকিস্তান।
পর্যালোচনায় কেন্দ্র : অন্যদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে শুক্রবার সকাল থেকেই দিল্লিতে চলছে ম্যারাথন বৈঠক। বিএসএফ এবং সিআইএসএফের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানের সঙ্গেও বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। স্বরাষ্ট্র দফতরের পদস্থ কর্তাদের সঙ্গে শাহর বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। আলোচনার বিষয়বস্তু মূলত বিমানবন্দর এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোর নিরাপত্তা। এদিন সকালেই সেনাপ্রধান উপেন্দ্র দ্বিবেদী এবং ৩ বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। দুই মন্ত্রীর বৈঠকেই বিশেষ গুরুত্ব পায় সীমান্ত-সুরক্ষা। প্রতিটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মুখ্যসচিব ও প্রশাসকদের কাছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, সতর্কতামূলক ব্যবস্থার প্রয়োজনে নাগরিক প্রতিরক্ষা বিধিমালার অধীনে জরুরি ক্ষমতা প্রয়োগ করতে।
নিষেধাজ্ঞা সমুদ্রতটে : এদিকে, দিল্লির লালকেল্লা এবং কুতুবমিনারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। মুম্বইয়ের সমুদ্রতটে যেতে নিষেধ করা হয়েছে সাধারণ মানুষকে।