পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদে যুক্ত

শাহবাজ শরিফ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর এই বয়ানে ভারতের দীর্ঘদিনের অভিযোগই আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেল বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল।

Must read

প্রতিবেদন: চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তি। তিন দশক ধরে পশ্চিমি দুনিয়ার হয়ে সন্ত্রাসবাদে যুক্ত পাকিস্তান। পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডে যখন জঙ্গিদের পাক মদতের দিকে স্পষ্ট আঙুল উঠছে এবং শাহবাজ শরিফ সরকার প্রাণপণে দায় অস্বীকারের চেষ্টা করছে, তখন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ প্রকাশ্যে স্বীকার করলেন, তাঁর দেশ গত তিন দশক ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমি বিশ্বের হয়ে সন্ত্রাসবাদীদের প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দিয়ে এসেছে। তবে এই স্বীকারোক্তির পরেই অবশ্য তিনি তাঁর দেশের জঙ্গিযোগের দায় চাপিয়েছেন অন্যান্য দেশের ঘাড়ে। পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সাফাই, মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও অন্যান্য পশ্চিমি শক্তি পাকিস্তানকে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ ও সমর্থন দিতে বাধ্য করেছে। শাহবাজ শরিফ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর এই বয়ানে ভারতের দীর্ঘদিনের অভিযোগই আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেল বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। বিশেষত, এই মন্তব্য এসেছে এমন এক সময়ে যখন ভারতের কাশ্মীর উপত্যকার পহেলগাঁওতে পাক জঙ্গিদের হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হয়েছেন এবং নয়াদিল্লি সেই হামলার জন্য ইসলামাবাদকে পরোক্ষভাবে দায়ী করে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে পাকমন্ত্রীর স্বীকৃতি গোটা ঘটনায় নতুন তাৎপর্য যোগ করল।

আরও পড়ুন-যোগীরাজ্যে ধর্ষণ কিশোরীকে হরিয়ানায় ধ.র্ষিতা মা, খু.ন মেয়ে

স্কাই নিউজের ব্রিটিশ-আফগান সাংবাদিক ইয়ালদা হাকিমের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেন, আমরা তিন দশক ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন-সহ পশ্চিমি শক্তির হয়ে এই নোংরা কাজ করতে বাধ্য হয়েছি। সেইসঙ্গে পাকমন্ত্রী আরও বলেন, এটি একটি ‍‘ভুল’ ছিল এবং পাকিস্তান এই পদক্ষেপের জন্য চরম মূল্য দিয়েছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য, যদি আমরা সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কিংবা ৯/১১-র পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আফগান অভিযানে যোগ না দিতাম, তাহলে আজ পাকিস্তানের রেকর্ড অন্যরকম হত। উল্লেখ্য, আশির দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশে পাকিস্তান আফগান মুজাহিদদের সহায়তা করে, যারা পরে তালিবান ও আল-কায়েদায় রূপান্তরিত হয়। ২০০১ সালে নিউইয়র্কে ৯/১১ হামলার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আফগান আগ্রাসনেও পাকিস্তান সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিল। সাক্ষাৎকারে খাজা আসিফ ভারতের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তুলে বলেন, পহেলগাঁওয়ের হামলাটি ভারত নিজেরাই মঞ্চস্থ করেছে, যাতে এই অঞ্চলে, বিশেষত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সংকট তৈরি করা যায়। এর পাশাপাশি আজব দাবি করেন আসিফ। বলেন, লস্কর-ই-তৈবা নামের কোনও জঙ্গিগোষ্ঠী আর নেই এবং তিনি দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ)-এর নামই শোনেননি। অথচ লস্করের ছায়া সংগঠন এই টিআরএফই পহেলগাঁও হামলার দায় স্বীকার করেছে। পাকমন্ত্রী বলেন, লস্কর একটি পুরনো নাম, সেটা এখন অস্তিত্বহীন। আমাদের সরকার এই হামলার নিন্দা করে। কারণ পাকিস্তান নিজেই দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসবাদের শিকার। সাক্ষাৎকারে খাজা আসিফ ভারতীয় প্রতিশোধের সম্ভাবনার প্রেক্ষিতে বলেন, যদি সর্বাত্মক আক্রমণ হয়, তাহলে তা সর্বাত্মক যুদ্ধেই পরিণত হবে। দুটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের সংঘর্ষ যে কোনও সময় ভয়ঙ্কর পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
কূটনৈতিক মহলের পর্যবেক্ষণ, জঙ্গিযোগ নিয়ে পাকিস্তানের একজন শীর্ষপদস্থ দায়িত্বশীল মন্ত্রীর এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক পরিসরে পাকিস্তানের অবস্থানকেই আরও দুর্বল করে তুলতে পারে। একই সঙ্গে, সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে ভারতের যুক্তিকেই আরও জোরালো করবে।

Latest article