প্রতিবেদন: এবার সাইবার হামলা পাকিস্তানের। গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওতে সন্ত্রাসবাদী হামলার প্রেক্ষাপটে দ্বিপাক্ষিক উত্তেজনা যখন ক্রমশ বাড়ছে, তখন ভারতীয় প্রতিরক্ষা পরিকাঠামোর ক্ষতি করতে সাইবার আক্রমণের পথ নিল পাকিস্তান। ভারতীয় সেনাবাহিনী (Indian Army website) জানিয়েছে, পাকিস্তানি হ্যাকাররা সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক দেশের প্রতিরক্ষা সংস্থার ওয়েবসাইট হ্যাক করার চেষ্টা চালিয়েছে এবং এই প্রচেষ্টায় সেনাবাহিনীর কর্মীদের সংবেদনশীল ডেটা, এমনকী লগইন পদ্ধতিও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘এক্স’-এর একটি হ্যান্ডেল ‘Pakistan Cyber Force’ দাবি করেছে যে তারা মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ার সার্ভিসেস এবং মনোহর পারিকার ইনস্টিটিউট অফ ডিফেন্স স্টাডিজ-এর গোপন ডেটাতে প্রবেশ করেছে। পাশাপাশি, হ্যাকার গোষ্ঠীটি প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের আওতাধীন পাবলিক সেক্টর আন্ডারটেকিং, আর্মার্ড ভেহিক্যাল নিগম লিমিটেডের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটেও অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালায়। হ্যাকাররা পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা এবং আল খালিদ ট্যাঙ্ক ব্যবহার করে ওয়েবসাইট বিকৃত করে। পরবর্তী সময়ে ওয়েবসাইটটিকে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে অফলাইনে নেওয়া হয় এবং একে সুপরিকল্পিতভাবে পর্যালোচনার আওতায় আনা হয়। সেনাবাহিনী আরও জানিয়েছে, পাকিস্তান-সমর্থিত হ্যাকারদের মাধ্যমে পরিচালিত এই ধরনের সাইবার আক্রমণ চিহ্নিত করে তা রোধ করতে ভারতীয় সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ও সংস্থাগুলি এখন প্রতি মুহূর্তে তৎপরতা বাড়িয়েছেন। সাইবার স্পেসে সার্বক্ষণিক নজরদারি চালানো হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে সম্ভাব্য আক্রমণের পূর্বাভাস পাওয়া গেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কৌশল তৈরি হয়েছে। একইসঙ্গে, দেশের প্রতিরক্ষা পরিকাঠামোয় ডিজিটাল সুরক্ষা জোরদার করা হচ্ছে। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, এই পদক্ষেপগুলির মূল লক্ষ্য হল অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং ভবিষ্যতের সাইবার হুমকির বিরুদ্ধে প্রস্তুতি আরও শক্তিশালী করা। এছাড়া, সেনাবাহিনীর (Indian Army website) পূর্ববর্তী বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘Cyber Group HOAX1337’ এবং ‘National Cyber Crew’ নামক গোষ্ঠী দুটি জম্মুর আর্মি পাবলিক স্কুলের ওয়েবসাইট বিকৃত করার চেষ্টা করেছিল, যেখানে তারা সাম্প্রতিক পহেলগাঁও হামলার শহিদদের নিয়ে উপহাস করে আপত্তিকর বার্তা দেয়। শুধু তাই নয়, প্রাক্তন সেনাদের জন্য নির্ধারিত হেলথ কেয়ার প্ল্যাটফর্ম, আর্মি ইনস্টিটিউট অফ হোটেল ম্যানেজমেন্ট এবং ভারতীয় বিমান বাহিনীর প্রাক্তন সদস্যদের ওয়েবসাইটও এই আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়েছিল। এর আগেও ‘IOK হ্যাকার’ নামক একটি পাকিস্তানি গোষ্ঠী শ্রীনগর এবং রানিখেতের আর্মি পাবলিক স্কুল, আর্মি ওয়েলফেয়ার হাউজিং অর্গানাইজেশন এবং বিমানবাহিনীর প্লেসমেন্ট পোর্টাল-সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইটে হানা দেওয়ার চেষ্টা করে। তবে, সেনাবাহিনীর শক্তিশালী সাইবার নিরাপত্তা কাঠামো, রিয়েল-টাইম মনিটরিং সিস্টেম ও ডিজিটাল ফায়ারওয়াল প্রযুক্তি দিয়ে সেই আক্রমণ সফলভাবে প্রতিহত করা হয়। প্রতিরক্ষা-সম্পর্কিত ওয়েবসাইটের বাইরেও পাকিস্তান-ভিত্তিক হ্যাকাররা শিশু, প্রবীণ প্রাক্তন সৈনিক এবং সাধারণ নাগরিকদের সাথে যুক্ত ওয়েবসাইটগুলিকেও লক্ষ্যবস্তু করছে। সবমিলিয়ে পহেলগাঁও হামলার পর ভারতের বিরুদ্ধে সাইবার যুদ্ধ শুরু করতে চাইছে পাকিস্তান। আর তাদের মূল টার্গেট ভারতীয় সেনা।
আরও পড়ুন: সভাপতির পদত্যাগ নিয়ে নিষ্ফলা বৈঠক