চন্দনা মুখোপাধ্যায়, কাটোয়া: যাত্রাপালা রচনায় অবদানের জন্য বন্দিত ভৈরব গঙ্গোপাধ্যায়। মন্তেশ্বরের মূলগ্রামের বাসিন্দা এই প্রখ্যাত পালাকারের পুজোটি আজও সাড়ম্বর আয়োজিত হয়। পুজোটি আসলে গ্রামের রায়চৌধুরি পরিবারের। দৌহিত্র সূত্রে পুজোটি চালিয়ে আসছেন ভৈরববাবুর পরিবার-সহ তিনটি পরিবার। পুজো এবার ৩৩০ বছরে। এই দুর্গাপুজোর রীতি-আচারে ব্যতিক্রমের ছোঁয়া। সাধারণভাবে দুর্গাপুজো যেখানে চারদিনের, এই পুজোটি চলে পক্ষকাল ধরে। ১৫ দিনের পুজোটি শুরু হয়ে গিয়েছে বোধনের দিন থেকে। সেই দিন থেকেই চলে তিনবেলা ভোগ-আরতি। শুরুতে ঘটপুজো, তারপর মূর্তিপুজো। সপ্তমী তিথিতে হোম হয়। বেলকাঠের সেই আগুন আর নেভে না। নবমী পর্যন্ত জ্বলে টানা তিনদিন। পোড়ানো হয় ১ হাজার ৮টি বেলপাতা। দশমীতে কুমারীপুজো। অষ্টমীর মহাক্ষণ নির্ণয়ে জলঘড়ির ব্যবহার করা হয়। বলি দেওয়া হয় চালকুমড়ো, আখ ও ছাগ ।
আরও পড়ুন-উলুবেড়িয়া আশা ভবনে পুজোভাবনা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার
ব্যতিক্রমী এই পুজোটি একসময়ে নিজেই করতেন প্রখ্যাত যাত্রা পালাকার ভৈরব গঙ্গোপাধ্যায়। জানালেন, তাঁর সুযোগ্য পুত্র মেঘদূত গঙ্গোপাধ্যায়। জানা গেল, পুজোটির প্রতিষ্ঠা করেন এলাকার জমিদার মহেশ রায়চৌধুরি। তাঁর পুত্রসন্তান ছিল না। ছিল তিন কন্যাসন্তান। তিনজনের বিয়ে হয় এলাকার গঙ্গোপাধ্যায়, মুখোপাধ্যায় ও বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারে। এই তিন পরিবারই আজও বংশপরস্পরায় পুজো চালিয়ে আসছে। একসময়ে পালাকার ভৈরববাবুর মন্দ্রমধুর কন্ঠে চণ্ডীপাঠ শুনতে এলাকাবাসী ভিড় জমাতেন। ভৈরববাবুর ‘প্রস্থানে’র সঙ্গে সঙ্গেই চণ্ডীপাঠের ইতি পড়েছে। তবুও পুজোর ক’দিন এলাকার মানুষজন এই পুজোটিকে ঘিরে আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে ওঠেন।