ফাঁসি চাই না সঞ্জয়ের! কোর্টে দাঁড়িয়ে বিস্ময়কর বয়ান মৃত পড়ুয়ার বাবা-মা’র

অন্যদিকে, রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল আইনের ধারা তুলে ধরে বলেন, সংশোধিত আইনে রায়ের বিরোধিতায় কেন্দ্রের পাশাপাশি রাজ্যকেও আবেদনের অধিকার দেওয়া রয়েছে

Must read

প্রতিবেদন : সঞ্জয় রাইয়ের সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসি চাইলেন না নির্যাতিতার বাবা-মা। সোমবার হাইকোর্টে ডিভিশন বেঞ্চের সামনে তাঁরা জানিয়ে দেন, শিয়ালদহ কোর্ট যা রায় দিয়েছে, তাঁরাও তাতে সহমত পোষণ করছেন। এই ঘটনায় হতভম্ভ গোটা রাজ্য। যেখানে আরজি করের মতো হাই-প্রোফাইল মামলায় ঘৃণ্য অপরাধের জন্য ফাঁসির সাজাই চাইছে সকলে যাতে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা যায়, আচমকা নির্যাতিতার বাবা-মায়ের ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে ফাঁসির সাজা না চাওয়ায় কোন রহস্য লুকিয়ে আছে তা জানতে চাইছেন সকলেই। অথচ এঁরাই শিয়ালদহ কোর্টের রায়ের পর জানিয়েছিলেন, সঞ্জয়ের যাবজ্জীবনের সাজা ঘোষণায় তাঁরা খুশি নন। এর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবেন ফাঁসির সাজা চাইতে। তবে কেন হঠাৎ এই উল্টো সুর? এর পিছনে বাম ও অতিবামের সুনির্দিষ্ট রাজনীতি কাজ করছে না তো! এদিন এই প্রশ্নও উঠেছে। না হলে যেখানে ১০০ শতাংশ ক্ষেত্রে নিজের মেয়ের সঙ্গে ঘটে-যাওয়া ঘটনার প্রেক্ষিতে অপরাধীর চূড়ান্ত সাজা চাওয়াই কাম্য, সেখানে বাম-অতিবামের সঙ্গে সুরে সুর মিলিয়ে কেন তাঁরা এমন উল্টো সুর গাইছেন!
আসলে তাঁরা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্তকারীদের নোংরা রাজনীতির ফাঁদে পা দিয়ে পরিণত হয়েছেন বামপন্থীদের মুখপাত্রে। যেহেতু বামপন্থা মৃত্যুদণ্ডকে সমর্থন করে না, তাই এখন তাঁরাও বামেদের ফুসমন্তরে সেই ভাষাতেই কথা বলছেন।

আরও পড়ুন-বিজিবিএস-এর সর্বাঙ্গীন প্রস্তুতির নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর

আরজি কর-কাণ্ডের মূল অপরাধী সঞ্জয় রাইকে শিয়ালদহ আদালতের দেওয়া আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছিল রাজ্য সরকার। এরপর চাপে পড়ে একই দাবিতে হাইকোর্টের একই ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয় সিবিআইও। সোমবার দুটি মামলাই একসঙ্গে শোনা হয় বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চে। যদিও সিবিআইয়ের আইনজীবী এদিনের শুনানিতে সঞ্জয়ের ফাঁসির দাবির বদলে রাজ্যের আবেদন নাকচ করাতেই বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েন। অন্যদিকে, রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল আইনের ধারা তুলে ধরে বলেন, সংশোধিত আইনে রায়ের বিরোধিতায় কেন্দ্রের পাশাপাশি রাজ্যকেও আবেদনের অধিকার দেওয়া রয়েছে।
তবে এদিনের শুনানিতে চমকপ্রদ মোড় আসে মৃতার পরিবারের আবেদনে। আশ্চর্যজনকভাবে তাঁরা জানান, সঞ্জয় রাইয়ের ফাঁসি তাঁরা চান না। অর্থাৎ শিয়ালদহ আদালতে সঞ্জয় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর যে ফাঁসির দাবি জানিয়েছিলেন তাঁরা, সেই অবস্থান থেকেও এদিন সরে এলেন। সোমবার এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, যেখানে-যেখানে ধর্ষণ-খুনের মতো কুৎসিত অপরাধ ঘটেছে, সব জায়গায় চরম শোকাহত নির্যাতিতার পরিবার দোষীর সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসি চেয়েছেন। কিন্তু এখানে সঞ্জয়ের ফাঁসি চাইলেন না তিলোত্তমার বাবা-মা। এ তো ব্যতিক্রম! এটা কী করে সম্ভব? তাঁদের মেয়েকে ধর্ষণ করে খুন করেছে যে পিশাচ এবং দোষ প্রমাণিত হয়েছে আদালতে, বাবা-মা বলছেন তার ফাঁসি চাই না। কারা এর পিছনে রয়েছে? বাম-অতিবামেদের কথা বেরচ্ছে নির্যাতিতার বাবা-মায়ের মুখ থেকে।

আরও পড়ুন-আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের বকেয়া টাকা, রোগী না দেখার হুঁশিয়ারি ৬০০ হাসপাতালের

কুণালের সংযোজন, সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে সমস্ত তথ্য-প্রমাণ কলকাতা পুলিশ সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিয়েছে। সিবিআই সেগুলো যাচাই করেছে। সুপ্রিম কোর্ট মনিটর করেছে। সঞ্জয় অনেক সুযোগ পেয়েছে কথা বলার। আর কিছু জানলে নিশ্চয় বলে দিত। সব কিছু শোনার পরেই আদালত যাবজ্জীবনের সাজা দিয়েছে। তারপর রাজ্য সরকার সঞ্জয়ের ফাঁসি চেয়ে হাইকোর্টে গিয়েছে। সিবিআইও চাপে পড়ে সর্বোচ্চ সাজা চেয়েছে। কিন্তু মাঝখান থেকে বাবা-মা বলছেন ফাঁসি চাই না। এ তো স্পষ্ট, বাম-অতিবাম ও জুনিয়র চিকিৎসকদের একাংশের কথা প্রতিফলিত হচ্ছে তাঁদের মুখে।

Latest article