চমকে দিল পার্থ ভৌমিকের ‘বসন্ত বিলাপ’

বাংলার জনপ্রিয় ছায়াছবি ‘বসন্ত বিলাপ’কে নাট্যরূপে মঞ্চে এনে চমকে দিলেন সাংসদ-শিল্পী পার্থ ভৌমিক (Partha Bhowmick) ও নৈহাটি নাট্য সমন্বয়।

Must read

প্রতিবেদন : বাংলার জনপ্রিয় ছায়াছবি ‘বসন্ত বিলাপ’কে নাট্যরূপে মঞ্চে এনে চমকে দিলেন সাংসদ-শিল্পী পার্থ ভৌমিক (Partha Bhowmick) ও নৈহাটি নাট্য সমন্বয়। এই ধরনের ছবি, যা গল্প, অভিনয়ে, সুপারস্টার অভিনেতাদের পারফরম্যান্সে সমৃদ্ধ, তাকে পর্দার পরিচিতি অতিক্রম করে মঞ্চে দর্শকের ভাল লাগানো ভারি কঠিন কাজ। পার্থরা সেই কাজটা করেছেন, ‘দাদার কীর্তি’ ভাল লেগেছিল, এবার ‘বসন্ত বিলাপ’ চমকে দিল।
দর্শক গল্প চেনেন, চরিত্র চেনেন; কিন্তু দক্ষ, সাবলীল, সময়োপযোগী উপস্থাপনা কোনও তুলনায় আসার সুযোগ দিল না। ভাল লেগে যাবেই।
একই পাড়ায় চার বন্ধুর সঙ্গে মহিলাদের হস্টেলের রেষারেষি, নানারকম ঝগড়া, শেষে প্রেমের প্রবেশ; গল্প, মজা, অভিনয়গুণ, শব্দ ও আবহ প্রেক্ষাপট, আলো, গানের ব্যবহার সবটাই ভারি চমৎকার। পরিস্থিতিগত সামান্য রদবদল একদম মানানসই।

আরও পড়ুন-দুর্ঘটনা এড়াতে ব্লাইন্ড স্পট মিরর

‘বসন্ত বিলাপ’ রোমান্টিক কমেডি ঘরানার। কাহিনি, চিত্রনাট্য কমেডিময়। ছবিতে তার সঙ্গে তিন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে তিন বাঘা অভিনেতা। গুপ্তর চরিত্রে রবি ঘোষ, লালু অনুপকুমার, সিধু চিন্ময় রায়। তাঁরা পারফরম্যান্সে আকাশচুম্বী। মুগ্ধ হয়ে দেখলাম রবিবাবুর চরিত্রে ভাস্কর মুখোপাধ্যায় কী অসাধারণ অভিনয়টা করে গেলেন আগাগোড়া। মঞ্চে যতক্ষণ ছিলেন, দর্শকের চোখ টেনে রাখার ক্ষমতা দেখালেন। চিন্ময়ের চরিত্রটিতে সায়ন্তন মৈত্র, অনুপকুমারের চরিত্রে বিশ্বজিৎ ঘোষ মজুমদার যোগ্য সঙ্গত দিলেন। এঁদের বিপরীতে তিন মহিলা চরিত্রে কস্তুরী চক্রবর্তী, শ্রমণা চক্রবর্তী, শ্রীময়ী রায় যথাযথ। শ্যাম চরিত্রে ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, এখানে সেই চাপ সামলে অনায়াস সাবলীলতায় ‘শ্যামদা’ পার্থ ভৌমিক। কমেডি, রোমান্স, শেষ দৃশ্যের আবেগ, একদম মাপা ঠিকঠাক অভিনয়। পার্থ থিয়েটার শুধু নয়, ছোট পর্দার ‘আবার প্রলয়’তেও যে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন, এখানে সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত। অনুরাধা চরিত্রে অপর্ণা সেনের ছায়া সামলে এখানে দেবযানী সিংহ। মঞ্চে পাওয়ারফুল অভিনেত্রী, চরিত্রটাকে একদম নিজের সঙ্গে মিশিয়ে নিয়েছেন। বাকিরাও যথাযথ। তবে আলাদা করে বলব স্টেশন মাস্টারের ভূমিকায় অতনু মিত্রের কথা, চরিত্রটি মঞ্চে সংযোজন। পরিচালনায় দেবাশিস। সহকারী নির্দেশক ঋক দেব। প্রযোজনা নিয়ন্ত্রণ অরিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়। এমন একটা নাটক, যার আসল সিনেমাটি চোখে ভাসে, সবটা অতি চেনা লাগে, অথচ সেই চেনার মধ্যেও এক নতুন ভালোলাগার আবিষ্কার, এটাই এই মঞ্চ সংস্করণের সার্থকতা।
শো-এর পরে পার্থ ভৌমিকের ব্যাখ্যা, ‘‘বাংলা থিয়েটারের শ্যামবাজার ঘরানা আর শম্ভু মিত্রের ঘরানার মাঝখান দিয়ে, খানিকটা মিশ্রণে, সময়োপযোগী একটি তৃতীয় পথ নিয়ে আমরা এখন কাজ করছি। থিয়েটারের বৈশিষ্ট্য ও গুণমান, সঙ্গে আজকের দর্শকের সুস্থ বিনোদন; সবটাই থাকছে মঞ্চ উপস্থাপনায়।”
স্বীকৃত পুরনো নাটক নতুন করে নামানো হয়, নতুন নাটক তৈরি হয়, নাটকভিত্তিক সিনেমা নতুন নয়, (এই তো এখন ব্রাত্যর ‘উইঙ্কল টুইঙ্কল’ সিনেমায় আনার কাজ শুরু করেছেন সৃজিত, আশা করি ভালই হবে); কিন্তু কালজয়ী সিনেমাকে মঞ্চে নামানোর এই কাজটা কঠিন। বড়পর্দার যে ব্যাপ্তি, শুটিং এডিটিংয়ের যে গল্প বলার পদ্ধতি দর্শকের দরবারে প্রতিষ্ঠিত, তাকে মঞ্চের পরিসরে বেঁধে উপভোগ্য উপস্থাপনা অবশ্যই বাড়তি কৃতিত্বের। প্রাক্তন বিধায়ক, প্রাক্তন মন্ত্রী, অধুনা সাংসদ, দক্ষ সংগঠক পার্থ ভৌমিক এবং তাঁর সহযোদ্ধারা সুন্দরভাবে এই কঠিন কাজটা করে যাচ্ছেন।

Latest article