প্রতিবেদন : রাজ্যে মার্কিন সংস্থার বিনিয়োগ আরও বেশি পরিমাণে চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আমেরিকান চেম্বার অফ কমার্সের প্রতিনিধিদের এক ভার্চুয়াল বৈঠকে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মার্কিন বিনিয়োগের বার্তা দিয়েছেন। চেম্বারের তরফে আমেরিকায় গিয়ে বাংলার জন্য লগ্নির বার্তা দিতে মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে৷ সূত্রের খবর, বণিকসভা আমেরিকান চেম্বার অফ কমার্স (অ্যামচ্যাম)-এর বার্ষিক সভায় পশ্চিমবঙ্গকে পৃথক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
ভার্চুয়াল মাধ্যমে ওই বৈঠকে রাজ্যের তরফে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র এবং শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সেখানে সংশ্লিষ্ট সমস্ত বিষয়ে কথা হয়েছে। বস্তুত, কয়েক হাজার সংস্থা আমেরিকান চেম্বারের সঙ্গে রয়েছে। এ দেশে আমেরিকান রাষ্ট্রদূত অ্যামচ্যামের আহ্বায়ক। রাজ্যবাসীর জন্য কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে দেশি-বিদেশি সংস্থার কল-কারখানায় বিনিয়োগ নিয়ে আসাই যে পাখির চোখ, তৃতীয়বারের জন্য সরকারে এসে তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বিভিন্ন আমেরিকান সংস্থার বিনিয়োগ টানতে প্রয়োজনে মার্কিন মুলুকে সফরের কথাও বিবেচনা করছেন মুখ্যমন্ত্রী।
আরও পড়ুন- জোকা-তারাতলা মেট্রো পরিষেবা শুরু করতে তৎপর মেট্রো কর্তৃপক্ষ
আমেরিকান চেম্বার অফ কমার্সের প্রতিনিধিদের এই ভার্চুয়াল বৈঠকে এরাজ্যে বিনিয়োগের ব্যাপারে আলোচনা হয়। তাতে অংশ নেন সে-দেশের শিল্পকর্তারা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের আমলে রাজ্যে আমেরিকান লগ্নি উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে৷ সরকারি তথ্য বলছে, ২০১০-১১ অর্থবর্ষে রাজ্যে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ যেখানে ৯.৫ কোটি ডলার ছিল, সেখানে ২০১৯-২০ সালে তা প্রায় ৬০.৮০ কোটি ডলার। রাজ্যের দাবি, এখন তথ্যপ্রযুক্তি, উৎপাদন শিল্প, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, লজিস্টিক্স-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমেরিকান বিনিয়োগ এবং তার হাত ধরে কর্মসংস্থান বাড়ছে।
এরাজ্যে ইতিমধ্যেই বিনিয়োগ করেছে বেশ কিছু মার্কিন সংস্থা। সেই তালিকায় আছে তথ্য-প্রযুক্তি সংস্থাও। কগনিজেন্ট এখানে ২০ হাজার কর্মী নিয়ে সংস্থা চালাচ্ছে। পেপসিকো এখানে যেভাবে ব্যবসা করছে, তার বার্ষিক বৃদ্ধির হার ২০ শতাংশ। ১৮ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান করেছে তারা। অ্যামাজনের মতো সংস্থা এখানে সাতটি লজিস্টিকস সেন্টার গড়ে তুলেছে। তাদের ব্যবসায় যোগ দিয়েছেন রাজ্যের ৩২ হাজার ছোট ব্যবসায়ী। এছাড়াও আইবিএম, সিসকো, জেনপ্যাক্ট-এর মতো নামজাদা সংস্থা বাংলায় লগ্নি করেছে। সরকারি সূত্র জানাচ্ছে, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণে পেপসি তিনটি প্ল্যান্ট করেছে সরকারি শিল্পতালুকে। প্রতি বছর ২০% করে কাজের পরিধি বাড়াচ্ছে তারা। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে ১৮ হাজার কর্মসংস্থান হয়েছে।
আরও পড়ুন- “ভবানীপুর দিদিকে চায়”, উপনির্বাচন ঘোষণা হতেই হোর্ডিং-ব্যানারে ছেয়ে গেল এলাকা
কোকাকোলার একটি নরম পানীয়ও এখন এ রাজ্যে তৈরি হচ্ছে। তাতে বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ১,০০০ কোটি টাকা। সব ক’টি লজিস্টিক্স কেন্দ্র মিলিয়ে প্রায় ২৫ হাজার কর্মসংস্থান হয়েছে বলে রাজ্যের দাবি। ওয়ালমার্টের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ফ্লিপকার্টও রাজ্যে তাদের কর্মকাণ্ড বাড়াচ্ছে। এই সংখ্যা যাতে আরও বাড়ে, তার জন্য সবরকমের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ ওদিকে, মার্কিন লগ্নিকারীদের বক্তব্য, বাংলাকে কেন্দ্র করে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্য এবং বাংলাদেশ, নেপালের মতো দেশেও আমেরিকান সংস্থাগুলি কাজ চালাচ্ছে। ফলে ভৌগোলিক দিক থেকেও এ-রাজ্যের অবস্থান তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
আমেরিকান চেম্বার অফ কমার্সের সভায় অংশ নেন শিল্প ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও। তিনি বলেছেন, রাজ্য সরকারের প্রাথমিক দায়িত্ব রাজ্যে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া। তাই এখানে শিল্পনির্মাণের কাজে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। শিল্প গড়ে তুলতে যে পরিবেশের দরকার, তা ইতিমধ্যেই গড়েছে রাজ্য। যোগাযোগ ব্যবস্থা, পরিকাঠামো, পরিবহণ ব্যবস্থা এমনভাবে গড়া হয়েছে, যা শিল্পমহলকে সাহায্য করবে। পার্থবাবু বলেছেন, বাংলায় লগ্নি করার এটাই সঠিক সময়।