আকাশবাণী থেকে গাড়ি ঘুরল বাঁদিকে
কৃষক আন্দোলন এবং তার সাফল্য নিয়ে আজ আলোচনা দেশ জুড়ে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে কৃষকের জমিরক্ষার লড়াই কয়েক বছর আগে দিশা দেখিয়েছিল দেশকে, বদল হয়েছিল ১৮৯৪ জমি অধিগ্রহণ আইনের। কেমন ছিল সেই দিনগুলি, লিখছেন বিতনু চট্টোপাধ্যায়
জমি আন্দোলনে নেত্রী…
আরও পড়ুন-দিল্লিতে সাংসদদের তলব
পুলিশের হাতে হেনস্থার ঘটনা সেদিনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনে প্রথম নয়। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বারবারই আন্দোলন করতে রাস্তায় নেমে কখনও তৎকালীন শাসক দল সিপিএম, কখনও বা পুলিশের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। কখনও মহাকরণের ভেতরে, কখনও হাজরা মোড় তো কখনও সোনারপুরে। কিন্তু দমে যাননি। মাত্র দু’মাস আগেই তো এর থেকেও খারাপ পরিস্থিতির অভিজ্ঞতা হয়েছে তাঁর। সেটা ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০০৬।
আরও পড়ুন-বিশ্বকাপের জ্বালা জুড়িয়ে হোয়াইটওয়াশ
সেদিনই সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া খাতায়-কলমে শুরু করে বামফ্রন্ট সরকার। শুরু হয় ক্ষতিপূরণের চেক বিলি। আর তারই প্রতিবাদে সন্ধের মুখে বাড়ি থেকে বেরিয়ে সিঙ্গুরে বিডিও অফিসে পৌঁছোন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী। বিডিও অফিসের বাইরে তখন আন্দোলনকারী মানুষের জটলা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পৌঁছেছেন শুনেই ভিড় বাড়তে শুরু করে বিডিও অফিসের বাইরে। রাত বাড়ছে, কিন্তু মানুষের পরোয়া নেই, শয়ে-শয়ে পুরুষ, বাচ্চা কোলে মহিলার ভিড়ে সিঙ্গুর বিডিও অফিসে তখন জনস্রোত। জোর করে একজনেরও জমি নেওয়া যাবে না— এই দাবিতে বিডিও অফিসের ভেতরে ধরনায় তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী।
আরও পড়ুন-পা মাটিতে রাখতে হবে : দ্রাবিড়
পুলিশ ভেবেছিল, রাত বাড়লে ভিড় কমে যাবে। কিন্তু কোথায় কী? শেষে রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ শুরু হল পুলিশি অভিযান। বিডিও অফিসের বাইরের আলো নিভে গেল হঠাৎ। হেলমেট পরা প্রচুর পুলিশ লাঠি হাতে ঝাঁপিয়ে পড়ল আন্দোলনকারীদের ওপর। মিনিট দশেক চলল লাঠিচার্জ। ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল সাধারণ মানুষ। তারপর পুলিশ ঢুকল বিডিও অফিসে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে টেনে-হিঁচড়ে বের করে আনল অফিসের ভেতর থেকে। টানতে টানতে তোলা হল পুলিশের গাড়িতে। গাড়ির পিছনের সিটে একা তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রীকে চেপে ধরে রাখলেন পুলিশ কর্মীরা। মুহূর্তের মধ্যে পুলিশের গাড়ি দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে রওনা দিল কলকাতার দিকে।
আরও পড়ুন-বিপ্লবকে চ্যালেঞ্জ করে আজ ত্রিপুরায় অভিষেক
পরদিন ভোরে মেয়ো রোডে গান্ধী মূর্তির নিচে অবস্থানে বসলেন সারা রাত জাগা, পুলিশের মারে বিধ্বস্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শপথ নিলেন কৃষকের জমিরক্ষার আন্দোলন চলবে। তা থেকে পিছু হঠার প্রশ্নই নেই। দু’মাস আগে ২৫ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে সিঙ্গুর থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চরম হেনস্থা করে কলকাতায় পাঠিয়ে দিয়েছিল পুলিশ। আর সেদিন তো ঢুকতেই দিল না হুগলি জেলায়। দ্বিতীয় হুগলি সেতুর ওপর ছটফট করতে করতে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী ফোন করলেন। ‘পার্থদা আপনারা কোথায়? আমাকে সিঙ্গুরে যেতেই দেয়নি। প্রচণ্ড মারধর করেছে। কী ভেবেছে এরা? একটা জায়গায় এত মানুষ লড়াই করছে। আমাকে যেতে দেবে না?’ টানা বলে চলেছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী।
আরও পড়ুন-বুধবার মন্ত্রিসভার বৈঠকেই মোদির ঘোষণায় সিলমোহর
‘নিজেদের মধ্যে কথা বলে নিন। দেখুন কী করবেন, দরকার হলে কাল বন্ধ ডাকার প্রস্তুতি নিন। এই অত্যাচার চলতে পারে না।’ বিরোধী দলনেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ফোনে নির্দেশ দিয়ে গাড়িতে উঠে বসলেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী। ক্ষোভে ফুঁসছেন। ফের চলতে শুরু করল তাঁর গাড়ি। ফোর্ট উইলিয়াম পেরিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রীর গাড়ি ততক্ষণে রেড রোডে ঢুকে পড়েছে।
আকাশবাণীকে বাঁহাতে রেখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গাড়ি ঘুরে গেল বাঁদিকে। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাঁর কনভয় ঢুকে গেল বিধানসভার ভেতরে। নেত্রী আক্রান্ত, এই খবরে ততক্ষণে ধুন্ধুমার বিধানসভা লবি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোজা ঢুকে গেলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘরে। তীব্র অসুস্থ বোধ করছেন পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে। ঠিক সেই মুহূর্তে, বিধানসভার অন্য প্রান্তে নিজের ঘরে বসে মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ঘোষণা করলেন, ‘আজ সিঙ্গুর এবং সংলগ্ন এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। (চলবে) (২)