প্রতিবেদন : দলে জোড়াফুল প্রতীকই শেষ কথা। এর বাইরে অন্য কোনও বেফাঁস মন্তব্য ও কার্যকলাপ যে বরদাস্ত করবেন না এদিন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) ফের তা স্পষ্ট করে দিলেন। ইন্ডোরের মঞ্চ থেকে তাঁর হুঁশিয়ারি, আজকাল দেখছি অনেকে বলছে, আমি তৃণমূল বুঝি না, ওই দাদা বুঝি। মনে রাখবেন আপনার কেউ নেতা হলে সে হল জোড়াফুল। প্রতীক না থাকলে আপনি কাউন্সিলরও থাকবেন না। নেত্রীর সংযোজন সোশ্যাল মিডিয়া খুঁটিয়ে দেখি। সবই চোখে পড়ে। এরপরই ২০২৬-এর নির্বাচনের আগে দলকে আরও সংঘবদ্ধ হয়ে মাঠে নামার নির্দেশ দেন নেত্রী।
আরও পড়ুন-মুকুল-শুভেন্দুকে আমিই সেদিন চিহ্নিত করেছিলাম
বৃহস্পতিবার নেতাজি ইনডোরের দলীয় সভা থেকে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, দলে যারা ভাল কাজ করবে তাদের তিনি প্রমোশন দেবেন। আর খারাপ কাজ করলে কোনও রকম দয়ামায়া দেখাবেন না। নেত্রীর কথায়, যারা ভাল কাজ করছে তাদের পদোন্নতি করব। যারা শুধু বিবৃতি দেন, দলের সমালোচনা করেন না তাদের জন্য আমাদের কোনও দয়ামায়া নেই। সেই কর্মীর প্রতি আমার দয়ামায়া যে বুক দিয়ে দলকে আগলে রাখে। কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ— বাংলার প্রতিটি জায়গায় দলের নেতাদের বিশেষ করে জেলা সভাপতিদের জন্য নেত্রীর নির্দেশ, সকলকে ডেকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করুন। সারা বছর তো ডাকেন না। এসব করলে চলবে না। ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলে সকলকে নিয়ে চলতে হবে। যারা পারবে না তাদের বদলে দেব। এই প্রসঙ্গে বিশেষ করে বিজেপির ভুতুড়ে ভোটার তালিকা চক্রান্তের কথা উল্লেখ করে নেত্রী বলেন, জেলা সভাপতিদের বলব, অবিলম্বে সকলকে মাঠে নামান। আমি রিপোর্ট নেব। এ-বিষয়ে সব জেলার ৩৬ জনের কমিটি করে দিয়ে নেত্রী বলেন, বীরভূমের ক্ষেত্রে কোর কমিটি নিজেরা বসে এই কাজটা করবে। দলকে রিপোর্ট দেবে। এরপরই সভায় উপস্থিত বীরভূম জেলা সভাপতি ও কোর কমিটির অন্যতম সদস্য অনুব্রত মণ্ডলকে উদ্দেশ্য করে নেত্রীর নির্দেশ, তোমার জেলায় কাজলকে (জেলা সভাধিপতি কাজল শেখ) ডেকে নেবে। ও কনফিডেন্স নিয়ে কাজ করবে।
আরও পড়ুন-ছাব্বিশের ভোটের আগে ৪ শপথ, বিজেপি-সহ বিরোধীদের জামানত জব্দ করার বার্তা তৃণমূল সুপ্রিমোর
বিজেপিকে গৈরিক কমরেড আখ্যা দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তীব্র কটাক্ষ করে বলেন, বাংলার সংস্কৃতি আজ বিপন্ন হতে চলেছে। বিজেপিকে তুলোধোনা করে নেত্রী বলেন, এরা বিবেকানন্দের হিন্দু ধর্মকে ভুলিয়ে দিচ্ছে। বহিরাগত হিন্দু ধর্মকে আনছে। মিথ্যে কথা বলছে বিজেপি। তাঁর সংযোজন, পঞ্চানন বর্মার জন্মদিন মনে রাখবে না এরা রাজবংশী ভোট চাইবে? আমরা সর্বধর্ম ভালবাসি। নেত্রীর কটাক্ষ, বিজেপি হল গেরুয়া কমরেড। কালীপুজো, সরস্বতীপুজো, দুর্গাপুজোয় ক’দিন ছুটি দেন আপনারা গৈরিক কমরেড? ছটপুজোতে ক’দিন ছুটি দেন? কর্পোরেশনে এক অফিসার বদমায়েশি করেছিল সে সাসপেন্ড হয়ে গেছে। এদিন মঞ্চ থেকে বিজেপিকে তুলোধনা করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বিজেপি দেশে যা খুশি তাই করছে। গণতন্ত্রের আজ কী দুরবস্থা! দেখবেন, নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে ততই এজেন্সির দাপট বাড়বে। তাঁর সংযোজন, সব মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে।
নির্বাচন আসলেই মনে পড়ে তৃণমূলের কাকে চার্জশিট দিতে হবে। কাকে জেলে ভরতে হবে। জেলে তো ভরেছেন! আর কত ভরবেন? লজ্জা করে না আরজি করের কেস সলভ করতে পারেন না! কটাক্ষ নেত্রীর।
নিজেকে একজন কর্মী হিসেবেই তুলে ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, অনেককেই আজ এখানে জায়গা দিতে পারিনি। তাঁরা বাইরে আছেন। বাকিরা টিভি ও সোশ্যাল মিডিয়াতে দেখছেন। ক্ষুদিরামেও ব্যবস্থা করা হয়েছে। লোকসভা নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে বলেন, কারচুপি করে আমাদের ৫টি আসনে হারানো হয়েছে। এরপরই কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ২০২৬-এর নির্বাচনের আগে এই জায়গাগুলিতে নজর দিতে হবে। আর বিজেপি যেসব জায়গায় হেরেছে সেখানে ওরা কারচুপির চেষ্টা করবে। ওদের রুখে দিতে হবে।