প্রতিবেদন : পৌষমেলা বন্ধের সিদ্ধান্ত মানুষ মেনে নেননি। মানুষের দাবি মেনে তাই ফের শুরু হল চিরাচরিত ঐতিহ্যের পৌষমেলা। রবিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভার্চুয়াল উদ্বোধনের পর শান্তিনিকেতন জুড়ে খুশির হাওয়া। এদিন ভার্চুয়াল উদ্বোধনে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে কড়া বার্তা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিশ্বভারতী যা পারেনি, তা করে দেখাল বাংলার সরকার। কড়া বার্তায় মুখ্যমন্ত্রী বুঝিয়ে দিলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কিংবা কবিগুরুর সৃষ্টি নিয়ে কোনওরকম ছেলেখেলা বরদাস্ত নয়। তাঁর সাফ কথা, চাই না রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই জায়গা কেউ কলুষিত করুক। কোনও স্বৈরাচারী মনোভাব নিয়ে বিশ্বভারতী চালালে হবে না। আশ্রমিক থেকে পড়ুয়া, সকলকেই সম্মান দিতে হবে।
আরও পড়ুন-বাতিল কমিটি, কুস্তিগিরদের কাছে হেরে গিয়ে মুখ পুড়ল ক্রীড়ামন্ত্রকের
রবিবাসরীয় সকালে পৌষমেলার সূচনা লগ্ন থেকেই শান্তিনিকেতনের বাতাসে ভাসছে সানাইয়ের সুর। নিয়ম মেনে ছাতিমতলায় হয়েছে উপাসনা। কবিগুরুর প্রাণের আরাম- স্থলে ধ্বনিত হয়েছে ‘মোরে ডাকি লয়ে যাও মুক্ত দ্বারে’। ঐতিহ্য ফিরে এসেছে শান্তিনিকেতনে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে রাজ্য সরকার বীরভূম জেলা প্রশাসনকে দিয়ে ‘বিকল্প’ পৌষমেলার আয়োজন করছে। তার সূচনা হল মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে। ভার্চুয়ালি উদ্বোধনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘গ্রাম ছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ, আমার মন ভোলায় রে…’ গানটি আজও আমাদের কাছে সমাদৃত এবং বিশ্বজনীন। কবিগুরুর সেই অবদান মাথায় নিয়ে ভালবাসা আর সতর্কতার সঙ্গে মেলা পরিচালনা করার কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
আরও পড়ুন-চ.ক্রান্ত-গুজব উড়িয়ে নিশ্চিন্তের টেট
শান্তিনিকেতনের পৌষমেলার ঐতিহ্য গোটা বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে। বিগত কয়েক বছর ধরে পৌষমেলা আয়োজিত হচ্ছিল না। প্রাক্তন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর মেয়াদ শেষ হতেই স্বল্প সময়ের মধ্যেই পৌষমেলা আয়োজন নিয়ে নতুন করে তোড়জোড় শুরু হয়। তিন বছর পর এই পৌষমেলা ঘিরে এবার আগ্রহ চোখে পড়ার মতো। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব নিতে অপারগ জানিয়ে দিলে এগিয়ে আসে রাজ্য সরকার। সেই বিকল্প পৌষমেলার সূচনায় উপস্থিত ছিলেন বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সঞ্জয়কুমার মল্লিক। সকাল সাড়ে সাতটায় উপাসনায় অংশ নেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে মেলার উদ্বোধন করার পর প্রদীপ প্রজ্বলন করেন দুই প্রবীণ আশ্রমিক ও বিশ্বভারতীর প্রাক্তন অধ্যাপক সুনীতিকুমার পাঠক ও কল্পিকা মুখোপাধ্যায়। ছাতিমতলা থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘উদয়ন’ বাড়ি পর্যন্ত বিশেষ পদযাত্রার আয়োজন করা হয়।
আরও পড়ুন-স্বামীজিকে অসম্মান, ফাঁকা মাঠে বাংলার মাথা হেঁট করল বিজেপি
বাঙালির চির ঐতিহ্যের পৌষমেলাকে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিক থেকে ফিরিয়ে এনে আবারও মিলন উৎসবের চেহারা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিন বছর পর শান্তিনিকেতনে পৌষমেলা প্রাঙ্গণে মানুষের ঢল নামল। সকলের মুখেই মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগের প্রশংসা। শান্তিনিকেতন তথা রবীন্দ্রপ্রেমীরা বুঝিয়ে দিয়েছেন, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের পৌষমেলা বন্ধের সিদ্ধান্ত কখনওই গ্রহণযোগ্য ছিল না। সেই ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে এনে রবি ঠাকুরকে যথাযথ মর্যাদা দিল বাংলার মা-মাটি-মানুষের সরকার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, অমর্ত্য সেন ভারতবর্ষে থাকলে এদিন নিশ্চয়ই উপস্থিত থাকতেন। সবার উদ্যোগে আবার সকলের হৃদয়-অঙ্গনে স্থান করে নিয়েছে পৌষমেলা। এই মেলা সব সীমারেখা, ভেদাভেদ, কালিমা মুছে দিয়ে আদতেই মিলন মেলার রূপ নিক, এটাই চাই। ৩ বছর পর খুশির হাওয়া শান্তিনিকেতনে