সিপিএমে নেই মানুষের আস্থা, হিন্দুদের বাঁচাতে পারছে না বিজেপি

তৃণমূল কংগ্রেসের বিকল্প নেই কোথাও। ডানে কিংবা বামে। রামের দল সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ। বামেরা আস্থা অর্জনে অপারগ। আগামী নির্বাচনে তাই অন্য কোনও সম্ভাবনার পরীক্ষা করছি না আমরা। ভোট দেব দলে দলে জোড়া ফুলে। লিখছেন দেবলীনা মুখোপাধ্যায়

Must read

‘দেশটা তোমার একার নাকি করছ ছলকলা/ সুযোগ পেলেই চালিয়ে যাচ্ছ হিন্দুর উপর হামলা।/ মনে রেখো, হিন্দুরাও দেশ বাঁচাতে পাশে ছিল,/ দেশে দেশে দেশ বাঁচাতে রক্ত তারাও দিয়েছিল।/ তবে ধর্ম নিয়ে কেন এই ঝামেলা?/ ও দেশবাসী, বন্ধ কর হিন্দুর উপর হামলা।’
এই ছড়া, এই গান ভারতের নয়। বাংলাদেশের।
এখানে ‘হিন্দু’ শব্দটির জায়গায় ‘মুসলমান’ কথাটি বসিয়ে নিন। কী আশ্চর্য! সাম্প্রতিক ভারতের ছবি পেয়ে যাবেন। পহেলগাঁও কাণ্ডের পর ভারতের (পড়ুন উত্তর ভারতের) চিত্র।
সবাইকে বুঝতে হবে, সিএএ সুড়সুড়িতে এপার-ওপার কোনও দিকেরই হিন্দু জনগোষ্ঠীর বিন্দুমাত্র লাভ নেই। বিদেশি দুষ্কৃতী-জঙ্গি অনুপ্রবেশ রোধে সক্রিয় নয় অমিত শাহের মন্ত্রক। তাদের অপদার্থতার মাশুল বইছে বাংলা। মুর্শিদাবাদ ইস্যুতে রাজ্য জুড়ে বিদ্বেষ-বাষ্প ছড়াবার কদর্য অবাঞ্ছিত পরিবেশ রচিত হচ্ছে। এতে সার্বিকভাবে ক্ষতি হতে পারে বাংলার বহু আকাঙ্ক্ষিত শিল্পায়ন উদ্যোগ এবং অর্থনীতির। এই ক্ষতি দিনের শেষে দেশেরও। কিন্তু বিজেপির তাতে কী এসে গেল!
গোয়েন্দা রিপোর্টে, যত দূর জানা যাচ্ছে, মুর্শিদাবাদে সংঘটিত বেনজির অশান্তি কাকতালীয় কিছু নয়, রীতিমতো চক্রান্ত করেই ঘটানো। শেখ হাসিনা উৎখাত পর্বে ঢাকা-সহ বাংলাদেশের নানা প্রান্তে জেল পালানো জঙ্গিদের একটা বড় অংশই মুর্শিদাবাদে হাঙ্গামার নেপথ্যে। কমপক্ষে ২০ জঙ্গির ওই দল তিনটি ভাগে ভাগ হয়ে সামশেরগঞ্জ, সুতি ও ধুলিয়ানে হাঙ্গামার পুরোভাগে ছিল। সুতি সীমান্ত দিয়ে এপারে ঢুকেছিল তারা। ইউনুস ক্ষমতা নেওয়ার পরেই ওপার বাংলা মৌলবাদী ও পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিদের কী ভয়াবহ লীলাক্ষেত্র হয়ে উঠেছে, তা সারা দুনিয়া জানে। তাদেরই একাংশ সক্রিয় মুর্শিদাবাদ লাগোয়া এলাকাগুলিতে। মুর্শিদাবাদে হাঙ্গামার নির্দেশাবলি এসেছে সীমান্তের ওপার থেকেই। ৪ জানুয়ারি তারা নাকি রেকি করে গেছিল। তাদের উপর নির্দেশ ছিল— রেল স্টেশন, বিডিও অফিস, থানা, বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রের মতো সরকারি সম্পত্তি এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানেও আক্রমণ চালাতে হবে। সরকারি সম্পত্তিতে অগ্নিসংযোগও করা চাই। প্রয়োজনে খুন করতে হবে কর্তব্যরত পুলিসকে। সেইমতোই নষ্টামি করার চেষ্টা দুষ্কৃতীরা করেছিল।

আরও পড়ুন- ‘সরাসরি রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের’ ডাক: ভারতের ঐক্য প্রতিষ্ঠায় শক্তিশালী আঘাতের জন্য সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ অভিষেকের

এই হল বিজেপির ফাঁপা আওয়াজ। হিন্দু হিন্দু হিন্দু করে বেড়ায় চারদিকে। কিন্তু সংখ্যাগুরুদের রক্ষা করারও মুরোদ নেই হিন্দুত্ববাদী শাহের, কোত্থাও, তা সে মুর্শিদাবাদে হোক বা পহেলগাঁওতে।
আর সিপিএম?
তাঁদের ব্রিগেড বক্তৃতায় একটি বাক্য ভীষণ ‘কমন’, ‘কমরেড… এখান থেকে ফিরে আর বিশ্রাম নয়। ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।’ কিন্তু যে কথাটা শোনা যায় না—এবার শূন্যের গেরো থেকে বেরতে হবে। শূন্যের মাহাত্ম্য প্রবল, যদি তা কোনও সংখ্যার পরে বসে। আর সেই সংখ্যাটাই হাতড়ে চলেছে সিপিএম।
ক’দিন আগে এক রবিবারে ব্রিগেডে এই যে ১৮ থেকে ৮১ ভিড় করলেন মেহনতি মানুষের সংগঠনের ডাকে, সবটাই তো ফাঁকা কলসি। জনসভায় কত লোক হল, তা দিয়ে ভোট হয় না। আমাদের রাজ্যে ভোটার সংখ্যা প্রায় ৮ কোটি। গত বছরের লোকসভা ভোটের নিরিখে সিপিএমের প্রাপ্তি মাত্র ৬.৩৩ শতাংশ। আসলে সিপিএম হার্মাদদের অত্যাচার এত সহজে মানুষ ভুলে যেতে পারছেন না। শুধু কমিটেড ভোটার দিয়ে তো আর নির্বাচন জেতা যায় না। কোটি কোটি মানুষ রাজনীতির আঙিনার বাইরে আছেন। ইভিএমের বোতাম টেপার আগে তাঁদের মনে একটাই প্রশ্ন ভেসে ওঠে, এ আমার জন্য কী করবে? তখন কোনও তত্ত্বকথা, আদর্শ তাঁর সামনে আসে না। উঁকি দেয় শুধু ভবিষ্যৎ চিন্তা। আমার কাজ থাকবে তো? আমার হাতে টাকার জোগান কমে যাবে না তো? আমার সন্তান স্কুলে যেতে পারবে তো? আমার মেয়ের বিয়ে ঠিকমতো দিতে পারব তো? এই প্রশ্নগুলোই তখন তাড়া করে তাঁকে। আর তিনি ভাবেন একটি ছবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ। গত ১৫ বছর ধরে সাধারণ মানুষের মনে তাঁর ছবিটা ধরে রাখতে পেরেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিপিএম দাবি করে, তাঁরা মেহনতি মানুষের পার্টি। কিন্তু এই দেড় দশকে মেহনতি মানুষগুলোও যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই ভোট দিয়ে এসেছে! কেন? উত্তর একটাই— মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি আস্থা। আর সিপিএমের প্রতি অনাস্থা।
আদর্শ বুঝি না। যাকে ভোট দেব, তাকে চিনিই না। তাহলে ব্রিগেডের সামান্য ভিড়টুকু ভোটযন্ত্র পর্যন্ত পৌঁছবে কীভাবে?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পড়ে থেকেছেন মানুষের মাঝে। বাংলার মানুষ বিশ্বাস করেছে, আপদে বিপদে এই জননেত্রীকে পাশে পাওয়া যায়। তারপরই কিন্তু এই ভাবমূর্তির প্রভাব পড়েছে ভোটযন্ত্রে। সিপিএম বা বিজেপিতে তেমন কেউ কোথায়?
ব্রিগেডের ভিড়ই বলে, সিপিএম নামেই কমিউনিস্ট পার্টি। এরা কোনওদিনই বামপন্থী নয়। এরা আদর্শে মার্ক্সবাদী। লোক দেখানোয় মেহনতি মানুষের সমর্থক। কিন্তু সবটাই ক্ষমতার আকর্ষণে।
‘এগিয়ে চলো। আমি আছি তোমার সঙ্গে’… ছোট্ট দুটো বাক্য। এটা বলতে পারেন বলেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখনও নির্বিকল্প। সিপিএম বা বিজেপি, কেউ তাঁর ধারে কাছে নেই।

Latest article