অনুপম সাহা, কোচবিহার: লোকগীতি এবং ভাওয়াইয়া শিল্পী গিদাল নজরুল ইসলাম বললেন, ‘‘কিছু মানুষ তাদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে এই বঙ্গকে বিভাজনের কথা বলছেন। এই বিভাজনে বাংলা বা উত্তরবঙ্গের কোনও লাভ হবে না। কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ ফায়দা তুলতেই এই ধরনের বঙ্গ বিভাজনের কথা বলছেন। উত্তরবঙ্গের মানুষ এই বিভাজন সমর্থন করেন না। লোকগীতি এবং ভাওয়াইয়া শিল্পী হিসেবে আমরা এটাকে সমর্থন করি না। রাজবংশী সমাজ এবং ভাওয়াইয়া শিল্পীদের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার যথেষ্ট করছেন। রাজবংশী উন্নয়ন বোর্ডের মধ্য দিয়ে এই সরকার পিছিয়ে-পড়া শিল্পীদের বিনামূল্যে বাদ্যযন্ত্র প্রদান থেকে শুরু করে ভাতা, ঘর তৈরি করে দেওয়া সমস্ত কিছুই করে দিচ্ছে।
আরও পড়ুন-১০ দুষ্কৃতী মিলে গণধর্ষণ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারকে
রাজবংশী সাহিত্যিক তথা বঙ্গরত্নপ্রাপ্ত লেখক কমলেশ সরকার বলেন, ‘‘বঙ্গ বিভাজনের নামে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে একটি দল রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষদের ভুল বোঝাচ্ছেন। আমরা বিভাজনের পক্ষে নই। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিভাজন করে আমাদের শক্তি বৃদ্ধি পাবে না, বরং আমরা সার্বিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ব এবং আমাদের সম্প্রদায় পিছিয়ে যাবে। বঙ্গবিভাজন না করে যদি বঙ্গের আরও সংযুক্তি হয় তাতেও আমাদের আপত্তি নেই। মুখ্যমন্ত্রীর কারণে জেলায় যে প্রচুর উন্নয়ন হয়েছে, তা অস্বীকার করা যায় না।
আরও পড়ুন-ঋষিকে প্রধানমন্ত্রীর দৌড় থেকে সরে দাঁড়াতে অনুরোধ বরিসের
বিশিষ্ট শিক্ষক, পঞ্চানন বর্মা-অনুরাগী তথা তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা চেয়ারম্যান গিরীন্দ্রনাথ বর্মন বলেন, ‘‘ভারতের ৫৭৬টি দেশীয় রাজ্যের সঙ্গে কোচবিহার ১৯৫০ সালের পয়লা জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যুক্ত হয়। আজকে নতুন করে যারা কোচবিহারকে আলাদা করার চেষ্টা করছে তাদের কি নৈতিক অধিকার আছে? তাদের এই দাবি অনৈতিক। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার কোচবিহারের সহজ সরল মানুষদের সমর্থন পাওয়ার জন্য রাজবংশী সমাজকে ভাঁওতা দিচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যে কোচবিহারে মনীষী পঞ্চানন বর্মার নামে বিশ্ববিদ্যালয় এবং সংগ্রহশালা করেছেন। রাজবংশীদের জন্য নারায়ণী ব্যাটালিয়ন-সহ আদাবাড়িঘাটের কামতেশ্বরী সেতু, তিস্তায় জয়ী সেতু, মেডিক্যাল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত। তাই আমরা এই বঙ্গ বিভাজন চাই না।
আরও পড়ুন-রেশনকার্ডে যিশুর ছবি, তীব্র উত্তেজনা ছড়াল কর্নাটকে
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহ বলেন, ‘‘বাংলায় বিজেপি প্রথমে মানুষদের মধ্যে ধর্মীয় বিভাজন, হিন্দু-মুসলিম বিভাজনের রাজনীতি শুরু করেছিল। ফলে উত্তরবঙ্গে ২০১৯ ও ২১-এ কিছুটা সাফল্য পেয়েছিল। পরে মানুষ বিজেপির এই রাজনৈতিক চক্রান্ত বুঝতে পেরে যায়। তাই নতুন করে আরও একটা বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। উত্তরবঙ্গ বঞ্চিত এই স্লোগান তুলে রাজ্যভাগের নামে উত্তরবঙ্গের সহজ সরল মানুষকে ভাঁওতা দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে। বুঝতে পেরে মানুষ অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গ সফরে এসে পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছেন, বাংলাভাগ হতে দেওয়া যাবে না। কাজেই বিজেপি এসব করে আর রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে পারবে না।’’