স্বাস্থ্যক্ষেত্রে সরকার ও চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে সমন্বয় আরও মজবুত করতে গড়ে উঠল প্রোগ্রেসিভ হেলথ অ্যাসোসিয়েশন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) রাজ্য স্বাস্থ্য পরিবষায় যেসব উন্নয়নমূলক প্রকল্প চালু করছেন, সকলের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছছে কি না তা দেখবে PHA। সোমবার, সংগঠনের আত্মপ্রকাশের কথা ঘোষণা করে জানালেন রাজ্যের নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী তথা PHA-র সভানেত্রী ডাঃ শশী পাঁজা (Shashi Panja)। তিনি স্পষ্ট জানান, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এই সংগঠনের কোনও সম্পর্ক নেই। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে কোথায় কী ফাঁক আছে এবং কীভাবে তার সমাধান হয় সেটাই প্রধানত দেখবে এই সংগঠন। একই সঙ্গে কোনও ভাবে স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যাহত বরদাস্ত করা হবে না বলে স্পষ্ট জানান মন্ত্রী।
আরও পড়ুন-যোগীরাজ্যে শিক্ষকের কাছে স্যানিটারি প্যাড চাওয়া অপরাধ! শাস্তি পেল ছাত্রী
শশী পাঁজার (Shashi Panja) জানান, ১০টি লক্ষ্য রয়েছে তাঁদের। ইতিমধ্যেই PHA-র রেজিস্ট্রেশনের জন্য পাঠানো হয়েছে। তাঁদের নিজস্ব ইমেল আইডি থাকবে। গ্রাম থেকে শহর চিকিৎসকরা ইমেলের মাধ্যমে সদস্য হওয়ার আহ্বান জানাতে পারবেন। ৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম স্টেট এগজিকিউটিভ বডির মিটিং। মুখ্যমন্ত্রী অনুমোদনের পরেই স্বাস্থ্য ভবনের সঙ্গেও তাঁদের সরাসরি যোগাযোগ থাকবে বলে জানান শশী। তাঁর কথায়, স্বাস্থ্য পরিষেবা সবার মৌলিক অধিকার। কোনও পেনডাউনে পরিষেবা ব্যাহত হবে এটা মানা যায় না। এই সংস্থা চিকিৎসক এবং রোগীর স্বার্থ রক্ষা করতে সব বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে লড়াই করবে।
শশী পাঁজার কথায়, সবার কাছে পরিষেবা পৌঁছতে মুখ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বিভিন্ন উন্নয়ন করছেন। সেগুলি সবার কাছে পৌঁছে দিতেই এই উদ্যোগ। প্রোগ্রেসিভ হেলথ অ্যাসোসিয়েশনে বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধিরা আছেন। তালিকা জানান শশী।
করবী বড়াল
তাপস চক্রবর্তী
রানা চট্টোপাধ্যায় (বিধায়ক)
জয়া মজুমদার গান্ধী
জয়ন্ত সরকার
মোল্লা ইরফান
কল্লোল বন্দ্যোপাধ্যায়
বিশ্বদীপ মজুমদার
রাজু কবিরাজ
অপর্ণা মজুমদার
কৌস্তভ রায়
রজত দে
শীর্ষা
প্রিয়াঙ্কা রানা
রাজর্ষি দত্ত
স্বরূপ সাহা
সুমন বিশ্বাস
সৌরভ মাজি
অভিজিৎ ভৌমিক
সুব্রত সেন
PHA-এর ১০টি লক্ষ্যের কথা জানান শশী পাঁজা।
১. স্বাস্থ্যসেবা সংস্কারে অগ্রগতির দিশা:
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দূরদর্শী নেতৃত্বে অনুপ্রাণিত হয়ে, PHA তার দেখানো উদাহরণ অনুসরণ করে পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত উন্নয়নমূলক স্বাস্থ্যসেবা উদ্যোগ কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যাতে সাধারণ মানুষের সর্বোত্তম সেবা নিশ্চিত করা যায়।
২. স্বাস্থ্যক্ষেত্রে সমন্বয় গড়ে তোলা:
চিকিৎসক, নার্স এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে, PHA সরকার এবং চিকিৎসা সম্প্রদায়ের মধ্যে দৃঢ় সমন্বয় গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করবে। তাদের অসুবিধা ও সমস্যা সমাধান করা হবে যাতে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা নিরবচ্ছিন্ন থাকে।
৩. স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা বজায় রাখা:
যারা স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে, তাদের বিরুদ্ধে সক্রিয় প্রতিরোধ গড়ে তুলবে PHA। চিকিৎসক সমাজ এবং রোগীদের স্বার্থ রক্ষা করা অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য।
৪. চিকিৎসা পেশাজীবীদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা:
ডাক্তার এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে দায়বদ্ধতা প্রতিষ্ঠা করা অন্যতম লক্ষ্য। স্বচ্ছতা ও নৈতিকতা বজায় রেখে স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নত করার জন্য কাজ।
৫. সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলি অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার
একটি অবিচ্ছিন্ন সরকারি স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা বজায় রাখতে অটল। সকল নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া একটি মৌলিক অধিকার, যা কোনো অবস্থাতেই ব্যাহত হতে পারে না।
৬. সরকারি হাসপাতালগুলিতে কাজ বন্ধের বিরোধিতা
হাসপাতালগুলিতে কাজ বন্ধ বা ধর্মঘট, যা জনস্বাস্থ্য পরিষেবাকে ব্যাহত করে, তা আমরা সমর্থন করি না। আমরা সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান এবং রোগীর সেবা অগ্রাধিকার দেওয়ার পক্ষে।
৭. চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কর্মপরিবেশের উন্নয়নের পক্ষে উদ্যোগ
স্বাস্থ্য পেশাজীবীদের সুরক্ষার জন্য আমরা তাদের কাজের পরিবেশ উন্নত করতে আন্দোলন করব। একটি উত্সাহী ও সমর্থিত কর্মী দলই কার্যকর স্বাস্থ্য পরিষেবার মূল চাবিকাঠি।
৮. ডাক্তার-রোগীর সম্পর্ক সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি
ডাক্তার ও রোগীর মধ্যে বিশ্বাস গড়ে তোলা অগ্রাধিকার। আমরা পারস্পরিক বোঝাপড়া, সম্মান এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় কার্যকর যোগাযোগ বাড়াতে সচেতনতা কর্মসূচি আয়োজন করব।
৯. হিংসা ও হাসপাতালের সম্পত্তি ধ্বংসের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান
ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী বা হাসপাতালের সম্পত্তির উপর যে কোনো ধরনের হিংসা অগ্রহণযোগ্য। এমন কাজ জনস্বাস্থ্য পরিষেবাকে ব্যাহত করে, এবং আমরা অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা দাবি করি।
১০. সন্ত্রাসমূলক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কঠোর আইন কার্যকরের পক্ষে উদ্যোগ
স্বাস্থ্যকর্মী ও প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সন্ত্রাসমূলক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়নের আহ্বান জানাই।