কিছুদিন আগেই ছিল বিশ্ব ফিজিক্যাল থেরাপি দিবস বা ফিজিওথেরাপি দিবস। চিকিৎসাশাস্ত্রে একটা অপরিহার্য শাখা এই ফিজিওথেরাপি (Physiotherapy)। একজন শারীরিক ভাবে অক্ষম মানুষকে সক্ষম করে তুলতে ফিজিওথেরাপির বিকল্প নেই। অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যায় শারীরিক অসুস্থতা ও কর্মক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে শরীরে নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে বয়স্কদের। যেমন হাঁটু ব্যথা, কোমর ব্যথা, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, জয়েন্ট বা অস্থি সমস্যা ইত্যাদি।
শুধু বয়স্ক মানুষই নন, এখন কমবয়সিরাও হাঁটু, কোমর, জয়েন্ট নার্ভের সমস্যা, লিগামেন্ট পেন, বাতের ব্যথা নানাবিধ শারীরিক সমস্যায় ভোগেন। এই সব ক্ষেত্রে খুব কার্যকরী ভূমিকা পালন করে ফিজিওথেরাপি। চিকিৎসা-বিজ্ঞানের একটি বড় অংশ হল রিহ্যাবিলিটেশন বা পুনর্বাসন। যা ফিজিওথেরাপি ট্রিটমেন্টেই সম্ভব। আজকের যুগে বহু মানুষই চোখ বন্ধ করে ভরসা করে এই ট্রিটমেন্টটির উপর।
ফিজিওথেরাপি যেহেতু চিকিৎসা বিজ্ঞানের অঙ্গ তাই একজন ফিজিওথেরাপিস্টের স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের প্রায় অনেক বিষয়ে যেমন অ্যানাটমি, ফিজিওলজি, প্যাথলজি, সাইকোলজি, ফার্মাকোলজি, কাইলোসিওলজি, অর্থোপেডিক্স, রিউমাটোলজি ইত্যাদি সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান রাখতে হয়। ফিজিওথেরাপি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি স্বতন্ত্র চিকিৎসা পদ্ধতি।
ফিজিওথেরাপি’র সূচনা
ফিজিওথেরাপি (Physiotherapy) নতুন কোনও চিকিৎসা পদ্ধতি নয়। প্রাচীন গ্রিসে হিপোক্রেটাস ম্যাসেজ ও ম্যানুয়াল থেরাপি দ্বারা ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার সূচনা করেছিলেন। খ্রিস্টপূর্ব ৪৬০ সালে হেক্টর ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার একটি শাখা ব্যবহার করতেন যাকে বর্তমানে হাইড্রোথেরাপি বলে। ১৮৯৪ সালে ফিজিওথেরাপির আধুনিকতম বিভাগ অর্থাৎ ম্যানুয়াল থেরাপি, ম্যানিপুলেটিভ থেরাপি, এক্সারসাইজ থেরাপি, হাইড্রোথেরাপি, ইলেক্ট্রোথেরাপি ইত্যাদি একে একে আসে। নিউজিল্যান্ডে ১৯১৩ এবং আমেরিকাতে ১৯১৪ সালে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা শুরু হয়।
ফিজিওথেরাপিস্ট-এর ভাগ
ফিজিওথেরাপিতে শুধুমাত্র ব্যাচেলর ডিগ্রি অথবা পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি পেয়েছেন এমন ব্যক্তিকেই ফিজিওথেরাপিস্ট বলা যাবে। তিনিই হলেন কোয়ালিফাইড ফিজিওথেরাপিস্ট। এছাড়া রয়েছে ফিজিওথেরাপি নিয়ে তিন বছরের ডিপ্লোমা কোর্স এবং এক বছরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ফিজিওথেরাপি কোর্স। যাঁরা এই কোর্স করেন, সকলেই একজন কোয়ালিফাইড ফিজিওথেরাপিস্টের সঙ্গে সহায়ক হিসেবে কাজ করতে পারেন।
আরও পড়ুন- আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পদক জয় বাংলার মেয়ের, উচ্ছ্বসিত মুখ্যমন্ত্রী
যেসব ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি
বাতের ব্যথা।
স্পন্ডিলাইটিস, স্পন্ডাইলোসিস, স্পন্ডিলিস্থেসিস; অর্থাৎ ঘাড়, কোমর ও মেরুদণ্ডের ব্যথায় ভুগছেন যাঁরা, তাঁদেরও এই চিকিৎসা প্রয়োজন।
হাঁটু, গোড়ালির ব্যথায় ভুগছেন যাঁরা।
আঘাতজনিত ব্যথা।
হাড় ক্ষয় জনিত রোগ।
জয়েন্ট স্টিফনেসের ক্ষেত্রে।
শল্যচিকিৎসায় স্নায়ুতন্ত্রের জটিলতায় ভুগে পঙ্গু হয়ে যান অনেকে। এ ধরনের রোগীর শরীর অবশ হয়ে যায় বা মাংসপেশি শক্ত হয়ে যায়। এসব রোগীর কর্মক্ষমতা বাড়ানো এবং অস্থিসন্ধি সচলতা ফেরাতে ফিজিওথেরাপির বিকল্প নেই।
প্যারালাইসিস জনিত সমস্যায়।
মুখ বেঁকে যাওয়া বা ফেসিয়াল পলসি।
পা বাঁকা (ক্লাবফিট)
সেরিব্রাল পলসি (প্রতিবন্ধী শিশু)। জন্মগতভাবে যেসব শিশু প্যারালাইসিস বা শিশুদের ঘাড়, হাত, পা বেঁকে যাওয়া ঠিক করতেও এই চিকিৎসার বিকল্প নেই।
ভেঙে যাওয়া হাড় জোড়া লাগার পর আঘাতপ্রাপ্ত অংশের মাংসপেশি ও হাড় ঠিকমতো কাজ করতে সময় নেয়। এক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি কার্যকরী।
ফ্রোজেন শোল্ডার বা কাঁধে ব্যথা এবং পায়ের গোড়ালির সমস্যায় আক্রান্তদের ফিজিওথেরাপি দিতে হয়।
পোড়া রোগীদের ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় ধরে মাংসপেশির সংকোচনের কারণে স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ব আসতে পারে। সেক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি খুব কার্যকরী।
বুকে কফ জমা, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের এই চিকিৎসা প্রয়োজন।
এ ছাড়া হৃদ্যন্ত্রে অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে রোগীর অক্সিজেন ধারণক্ষমতা ঠিক রাখতে ফিজিওথেরাপি দিতে হয়।
ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) রোগীদেরও ফিজিওথেরাপির (Physiotherapy) প্রয়োজন হয়।
বার্ধক্যে শরীরের বিভিন্ন অংশের ব্যথা ও মাংসপেশিতে ক্ষয়ের কারণে প্রবীণ ব্যক্তিরা চলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। এসব মানুষের স্বাভাবিক চলাচলের ক্ষমতা বজায় রাখতে ফিজিওথেরাপির বিকল্প নেই।
দুর্ঘটনার কারণে হাত-পা হারানো ব্যক্তির কৃত্রিম অঙ্গ সংযোজনের প্রয়…