মোদি সরকারের (Modi Government) আট বছর পূর্ণ হল। কী এমন নতুনটা করলেন মোদি?
সাড়ম্বর ভাষণ এবং ঢক্কা-নিনাদে পরিপূর্ণ প্রচার এবং আরও প্রচারে কেটে গেল আট-আটটা বছর। ফল অষ্টরম্ভা! জওহরলাল নেহরুর ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে এই সময়কালে (Modi Government) দেশটাকে গোল্লায় পাঠালেন একক গৌরবে, ৫৬ ইঞ্চির সাহসী পৌরুষ দেখিয়ে। আর অমিত শাহ কথিত ‘জুমলা’য় তাঁর বেজায় দক্ষতা দেখল ভারতবাসী।
এই জুমলার মর্মার্থ হল— যাহা ভাবিব, তাহা বলিব না। যাহা বলিব, তাহা করিব না। তিনিই একমেব অদ্বিতীয়। তাই তাঁর কথাই বলতে হচ্ছে।
তাঁর কাজের কয়েকটা রেকর্ড তুলে ধরে আমরা বোঝার চেষ্টা করব এই ফকিরের কেরামতি।
আট বছর পার করে—
- মূল্যবৃদ্ধির হার তিন দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ।
- খাদ্যপণ্যের দাম সর্বকালের সবচেয়ে চড়া।
- পেট্রোপণ্যের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ, রান্নার গ্যাসে বেড়েছে তিনগুণ।
- বেকারি স্বাধীনতার পরে সর্বোচ্চ
- কাজ হারিয়েছেন কয়েক কোটি মানুষ।
- মজুরির হার ভয়ঙ্কর ভাবে তলানিতে পৌঁছে গেছে।
- জিডিপি (মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন) বৃদ্ধির হার আট বছরে কমে অর্ধেক হয়ে গেছে।
- ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য ধারণাতীত ভাবে বেড়েছে।
- সম্পদ কেন্দ্রীভূত হয়েছে দু’একটি কর্পোরেট পরিবারের হাতে।
- কালো টাকা কীভাবে বেড়েছে। সাম্প্রতিক কালে তার পরিসংখ্যান প্রকাশ হয়েছে।
- গোটা দেশ জুড়ে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের বাতাবরণে হিংসা বেড়ে চলেছে
দু’একটি তথ্য তুলে ধরা যাক—
মোদি সরকারের আমলে মূল্যবৃদ্ধি ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। সরকারি হিসেবেই এপ্রিলে পাইকারি মূল্যসূচক ১৫ শতাংশের বেশি। গত তিন দশকে যা কখনও হয়নি। ক্রেতা মূল্যসূচকে বৃদ্ধির হার ৭.৮ শতাংশ। গত আট বছরে সর্বোচ্চ। এপ্রিলে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে ৮.৩৫ শতাংশ। তারমধ্যে তরিতরকারির দাম বেড়েছে ২৩.২৪ শতাংশ। ৮ বছরে ভোজ্য তেলের দাম বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। আটার দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। এই প্রথম অর্থনীতিবিদরা দেশে ‘চাপাটির সংকট’ দেখতে পাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: রেণু খাতুনের পাশে এবার মুখ্যমন্ত্রী, সরকারের তরফে নেওয়া হল ৩ ব্যবস্থা
সরকার পক্ষ বলছে, অতিমারির কারণে আর্থিক সংকট দেখা দিলেও এখন সেই সংকট কেটে যাচ্ছে। আর যুদ্ধ-ইত্যাদি আন্তর্জাতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে। কিন্তু সম্প্রতি যেসব হিসাব জনসমক্ষে চলে এসেছে, তাতে জানা যাচ্ছে যে, অতিমারি যদি না-ও ঘটত, ভারতীয় অর্থব্যবস্থার গতিভঙ্গ ঠেকানোর উপায় ছিল না।
কেন-না, নোট বাতিল এবং যথেষ্ট চিন্তাভাবনা না-করেই জিএসটি ব্যবস্থা চালু করা—২০১৬ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৭ সালের জুলাই, এই পৌনে এক বছরে কেন্দ্রীয় সরকার নরেন্দ্র মোদির একক কৃতিত্বে অর্থব্যবস্থার কোমর ভেঙে দিয়েছিল।
ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বিশ্লেষণ অনুযায়ী মূল্যবৃদ্ধির আন্তর্জাতিক কারণ প্রধান নয়, এর প্রধান দায় সরকারি নীতির। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ বা আন্তর্জাতিক তেলের বাজারের উপর এই মূল্যবৃদ্ধির দায় চাপিয়ে দিলে সরকারের আর কিছু করার থাকে না। মানুষকেও ভুল বোঝানো যায়। এটা এক ধরনের চতুর কৌশল। দায়টা যে কেন্দ্রীয় সরকারের সেই কথাটা বুঝে নিতে হবে। কারণ আন্তর্জাতিক পণ্যমূল্যের স্তরে এক শতাংশ পরিবর্তন হলে ভারতের ভোগ্যপণ্য মূল্যসূচকে পরিবর্তন হয় মাত্র ০.০২ শতাংশ। আর দেশের পাইকারি মূল্যসূচকে এক শতাংশ বৃদ্ধি ঘটলে ভোগ্যপণ্যের সূচক বাড়ে ০.২৬ শতাংশ।
মোদির ৮ বছরের (Modi Government) শাসনে মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বেকারি। স্বাধীনতার পরে সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে বেকারি। সরকারি হিসেবে কর্মহীনতার হার ৭.৯ শতাংশ।
মোদি সরকারের আট বছরে বৈষম্য বেড়েছে অত্যন্ত তীব্র গতিতে। মুষ্টিমেয় কর্পোরেটের হাতে জমা হচ্ছে প্রভূত সম্পদ। লকডাউনে ভারতের সবচেয়ে বড় লোকেদের সম্পদ ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর ১৩০ কোটি ভারতীয়ের সবচেয়ে কম আয়ের ২৪ শতাংশ সারা মাসে ৩ হাজার টাকাও আয় করতে পারেনি। বিশ্বখাদ্যসূচকে ২০১৪-তে ভারতের স্থান ছিল ৫৫। ২০২১-এ তা নেমে হয়েছে ১০১।
৮ বছরে দেশের অর্থনীতিকে খাস্তা করে ছেড়েছে মোদি সরকার। অর্থনীতি হল দেশের মেরুদণ্ড। সেই মেরুদণ্ড বিরাট ধাক্কা খেয়েছে মোদি জমানায়। আজেবাজে যুক্তি দিয়ে সরকার পক্ষ দায় এড়াচ্ছে। আর বিভাজনের রাজনীতি ও সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকাই এই শাসকদের মূল কর্মসূচি। জ্ঞানব্যাপী বা মথুরা ইস্যুকে জোর করে সামনে আনা হচ্ছে।
চরম ঔদ্ধত্য, স্বৈরতান্ত্রিক কার্যকলাপ, সংখ্যাগুরুবাদ ও কর্তৃত্ববাদকে প্রশ্রয় দিয়ে ফ্যাসিবাদী ধারায় দেশ চলাচ্ছে মোদি সরকার। ধর্ম আর জাতের ঘোলাজলে বিভাজনের নিত্যনতুন ফন্দি এঁটে এই শাসকরা ভুলিয়ে দিচ্ছেন দেশের মানে এবং শত্রু-মিত্রের ধারণা। বিরোধিতার মানে এদের কাছে— দেশদ্রোহ। গো-মাতা এই গেরুয়া রাজনীতির অক্সিজেন। উগ্র হিন্দুত্ববাদী জঙ্গি বাহিনী শাসকীয় প্রশ্রয়ে শক্তি প্রদর্শন করছে। ৮ বছর এক বিভীষিকাময় মিথ্যার রাজত্বে পরিণত হয়েছে দেশ।