সোমবার সকাল থেকে সামশেরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় দোকানপাট খোলা থেকে রাস্তায় সাধারণ মানুষের যাতায়াত অনেকটাই স্বাভাবিক হতে শুরু করে। রাজ্য পুলিশ প্রশাসনের শীর্ষ কর্তা এবং জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার আধিকারিকদের সময়মতো কড়া পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে ক্রমেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে মুর্শিদাবাদ জেলার সামশেরগঞ্জের অন্তর্গত ধুলিয়ান এবং সংলগ্ন এলাকায়। কয়েকটি দাবির ভিত্তিতে কিছু মানুষের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিনে উত্তেজনা ছড়িয়েছে মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জ, সুতি, এবং সামশেরগঞ্জ থানা এলাকার বিস্তীর্ণ অংশে। রক্তক্ষয়ী আন্দোলনকে নিয়ন্ত্রণে আনতে মুর্শিদাবাদ জেলায় এসেছেন খোদ রাজ্যে পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার। এখনও মুর্শিদাবাদ জেলায় রয়েছেন এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার সহ রাজ্য পুলিশের একাধিক শীর্ষ আধিকারিকেরা।
এদিন রাজ্য পুলিশের তরফে এডিজি আইনশৃঙ্খলা জাভেদ শামিম দাবি করেন, গ্রামছাড়াদের ঘরে ফেরানোই পুলিশের প্রাথমিক লক্ষ্য। ইতিমধ্যেই মালদহে আশ্রয় নেওয়া ১৯ জনকে গ্রামে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। মালদহ পুলিশ নিজেরা দায়িত্ব নিয়ে তাঁদের ঘরে ফেরান বলে জানান পুলিশকর্তা।
ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশাসনের উপর আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আর তার ফলেই ক্রমশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে ধুলিয়ান এবং সংলগ্ন এলাকায়। খুলতে শুরু করেছে দোকানপাট। এডিজি(দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার বলেন,জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার সুপার আনন্দ রায়-সহ পুলিশের একাধিক শীর্ষ আধিকারিকেরা ধুলিয়ান এলাকায় পায়ে হেঁটে ঘুরে সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থা ফেরানোর জন্য পদক্ষেপ করেন।
এছাড়াও বিএসএফ এবং অন্য কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা সামশেরগঞ্জ এবং সংলগ্ন এলাকায় টহলদারী চালাচ্ছেন। সোমবার সকাল থেকে নতুন করে আর কোনও অশান্তির খবর পাওয়া যায়নি। জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার সুপার আনন্দ রায় জানিয়েছেন,’ এলাকার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে রাজ্য পুলিশ যৌথভাবে টহলদারি চালাচ্ছে। অশান্তির ঘটনায় জড়িত থাকার জন্য ইতিমধ্যেই প্রায় ২০০ বেশি দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’ তিনি জানিয়েছেন,’কিছু এলাকায় ড্রোনের মাধ্যমেও নজরদারি করা হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ পিকেট করা হয়েছে ,মোটরসাইকেল করে পুলিশ পেট্রলিং চলছে এবং কনভারের মাধ্যমে পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী বিভিন্ন এলাকায় ঘুরছে।’ পুলিশ সুপার সাধারণ মানুষের কাছে অনুরোধ করেন কোনও রকম গুজবে কান দেবেন না।
আরও পড়ুন- মহিলাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ প্রশাসন, মণিপুরে ফের নাবালিকাকে ধর্ষণ করে খুন!
অন্যদিকে এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার সোমবার সামশেরগঞ্জ থানায় দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বলেন,’ ধুলিয়ান এবং সংলগ্ন এলাকার পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। প্রতিটি জায়গায় আমাদের বাহিনী রয়েছে এবং সিনিয়র অফিসাররা সেখানে থাকছেন।’
সুপ্রতিম সরকার বলেন ,’ অশান্তির কারণে কিছু মানুষ যারা ধুলিয়ান ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন তাদের মধ্যে ১৯ জন গতকাল রাতেই ফিরে এসেছেন। আরও ১০০ জন শীঘ্রই ফিরতে চলেছেন। যারা ফিরে আসছেন তাদের সকলের নিরাপত্তার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের ।যারা ইতিমধ্যেই ফিরে এসেছেন তারা সকলেই নিরাপদে এবং অক্ষত রয়েছেন। তাদের যেকোনও প্রয়োজনে প্রশাসন সমস্ত রকমের সহযোগিতা করবে। ‘এডিজি আরও জানিয়েছেন,’ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সামশেরগঞ্জের পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হচ্ছে এবং দোকানপাট আজ থেকেই খুলতে শুরু করে দিয়েছে।’
তবে বাকি গ্রামছাড়া বাসিন্দাদেরও দ্রুত ফেরাতে তৎপর পুলিশ। আর সেই জন্যই দ্রুত এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া প্রয়োজন, দাবি জাভেদ শামিমের। সেই উদ্দেশ্যেই মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত এলাকায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য পুলিশ। তার ফলে বিভিন্ন এলাকায় অশান্তি ছড়ানোর কোনও গুজব দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারবে না, ঠিক যেমন বর্তমান পরিস্থিতিতে গুজব নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছে পুলিশ। তবে সামশেরগঞ্জে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকার প্রভাব মালদহ ও বীরভূমের কিছু এলাকার পড়েছে। এই প্রসঙ্গে জাভেদ শামিম জানান, যেহেতু মোবাইলের টাওয়ার পিন কোড অনুযায়ী হয়, ফলে একই এলাকায় ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় প্রভাব পড়েছে একই পিন কোডের অন্তর্গত পার্শ্ববর্তী জেলার বিভিন্ন এলাকায়।