প্রতিবেদন : কমল হাসানের বিখ্যাত ছবি চাচি-৪২০ নিশ্চয়ই মনে আছে? স্ত্রীর কাছাকাছি থাকবেন বলে একেবার চাচির ভেক ধরে পৌঁছে গিয়েছিলেন তার বাড়িতে। অথচ বিপদ এড়াতে ওঠা-নামা করতেন পাইপ বেয়ে। বাকিটা ইতিহাস। এও খানিকটা তেমনই। আদতে গৃহবধূ। বিহারের দেহাতি মহিলা। কিন্তু তার ভিতরেই লুকিয়ে আছে ভয়ঙ্কর সব পরিকল্পনা। আর আছে বিশাল ডাকাত গ্যাং। যার ব্যাকবোন হিসেবে কাজ করে সে। একঝলক দেখলে মনে হবে কোনও এক দেহাতি গৃহবধূ। হেঁশেল আর ছেলেপুলে আর চাষবাস দেখেই যার দিন গুজরান হয়। শাড়ি থেকে চালচলন, সবেতেই আটপৌরের ছোঁয়া। দেখে বিহারের প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকার শান্ত, আপাত নিরীহ মহিলা ছাড়া অন্য কিছু মনে হওয়া মুশকিল। কিন্তু এই মহিলাই আসলে একাধিক রোমহর্ষক ডাকাতির মূল চক্রী। নাম আশা দেবী। অন্ধকার সার্কিটের নাম চাচি। মাথায় ঘোমটা টেনে একেবারে ভয়ঙ্কর ঠান্ডা মাথায় একাধিক সোনার দোকান লুটের ছক করত সে। বৃহস্পতিবার তাঁকে যখন পুলিশি ঘেরাটোপে দেখা গেল, মনে হল ঘোলাটে চোখের তীক্ষ্ম চাহনিতে সে মুহূর্তে যেন মেপে নিচ্ছে সবকিছু। একসময় কুখ্যাত গ্যাংস্টার সুবোধ সিংয়ের দলেও কাজ করেছে। এছাড়াও নিজে দল গড়ে বিহার, বাংলা-সহ একাধিক রাজ্যে সোনার দোকানে ডাকাতির ঘটনার ছক তৈরি করেছে ওই মহিলা। বিহারের সমস্তিপুরের মালিপুরের বাসিন্দা বছর ৪৯-এর এই চাচি। ডোমজুড়ের সোনার দোকানে ডাকাতির ঘটনার তদন্তে নেমে এই ‘চাচি’কে গ্রেফতার করে কার্যত তাজ্জব হয়ে যান হাওড়া সিটি পুলিশের গোয়েন্দারা। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, আশা দেবী (Asha Devi) ডাকাতির যাবতীয় ‘লজিস্টিক’ সাপোর্ট দিত। ডাকাতির জন্য ব্যবহৃত গাড়ি, ডাকাতির পর লুট হওয়া সামগ্রী রাখা, অন্যত্র পাঠানো, কোথায় ওই সমস্ত চোরাই মাল পাচার বা বিক্রি করা হবে, ডাকাতি করতে আসা দুষ্কৃতীরা কোথায় থাকবে, ডাকাতির পর কোথায় গিয়ে তারা গা ঢাকা দেবে তার সবটাই ঠিক করে দিত একেবারে সাদামাটা চেহারারা এই চাচি। ডাকাতি করতে যাওয়ার জন্য সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি কিংবা ডাকাতির আগে কোথায় গিয়ে ডাকাতরা উঠবে কিংবা ডাকাতির পরে কোন রুট দিয়ে কোথায় যাবে তার পুরোটাই তৈরি করে দিত চাচি (Asha Devi)। এমনকী পুলিশ তল্লাশি করতে যাওয়ার আগে ডাকাতরা কোথায় পালাবে তাও ঠিক করে রাখত সে। কে কে কোন ডাকাতিতে যাবে তাও ঠিক করে দিত চাচি। প্রয়োজনে ডাকাতির জন্য শার্প শ্যুটার নিয়োগ করত সে। যেমনটা ডোমজুড়ে সোনার দোকানে ডাকাতির জন্যে দু’জন পেশাদার খুনিকে সুপারি দিয়ে নিয়োগ করেছিল চাচি। হাওড়ার নগরপাল প্রবীণ ত্রিপাঠী জানান, ডাকাতির আগে ধৃতরা অঙ্কুরহাটির কালীতলায় ঘর ভাড়া নিয়ে বেশ কিছুদিন থেকেছিল। সেখান থেকেই তারা ডোমজুড় এলাকায় একাধিকবার রেইকি করে গিয়েছিল। এরা মূলত ঘষা কাচযুক্ত দরজা দেওয়া দোকানে ডাকাতির জন্য টার্গেট করত। এতে ভেতরে চিৎকার-চেঁচামেচি হলে বাইরে থেকে কিছুই টের পাওয়া যেত না। এর আগে আসানসোলেও তারা ঘর ভাড়া নিয়ে থেকেছিল। ডোমজুড়ে সোনার দোকানে ডাকাতির জন্য গাড়িও জোগাড় করে দিয়েছিল চাই। স্থানীয় কেউ এদের ডাকাতিতে সাহায্য করেছিল কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।