উদার আকাশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে অর্ণব সাহা-র প্রবন্ধের বই রাজনৈতিক কলাম : কর্তৃত্ববাদ বনাম আজকের ভারত’। এতে আছে ৩০টি রাজনৈতিক কলাম। ভারতীয় গণতন্ত্রের অগ্নিপরীক্ষা ছিল ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচন। তার কিছু আগেই বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখাগুলো প্রকাশিত হয়েছে। তাই অক্ষরমালার সুঠাম শরীরে ধরা রয়েছে সময়ের চিহ্ন। ভারতের সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে বিগত একদশক এক চরম উগ্র ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদ ও দক্ষিণপন্থার উত্থানের পর্যায়, যা ভারতীয় গণতন্ত্রের উদার, সহিষ্ণু ধারাটিকে ফেলে দিয়েছে চ্যালেঞ্জের মুখে। সেই সার্বিক কর্তৃত্ববাদী ও আধিপত্যবাদী রাজনৈতিক অভ্যুত্থানের বিপরীতে বিগত নির্বাচনেও ভারতের জনগণ তাঁদের নিজেদের মতো করে স্বাধীন, স্বতন্ত্র কণ্ঠস্বরটি ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়েছেন। অর্থশক্তি, পেশিশক্তি, এজেন্সিতে বলীয়ান এক টোট্যালিটারিয়ান শাসকের বিরুদ্ধে জনগণের এই অসম যুদ্ধ ভারতের বুকে গণতান্ত্রিক পরিসর রক্ষা করার ইতিহাসে লেখা থাকবে।
আরও পড়ুন-বিশ্ব থিয়েটারের কথা
বলা যায়, লেখাগুলো ভারতীয় জনগণের সেই নীরব, অনুচ্চ লড়াইয়ের প্রতি ট্রিবিউট। প্রথম প্রবন্ধ ‘কাশ্মীরে পূর্ণ আধিপত্যের প্রকল্প এতদিনে সম্পূর্ণ হল’য় প্রশ্ন তোলা হয়েছে, কাশ্মীর কি চিরকাল ভারতের ছিল? দ্বাদশ শতকের কাশ্মীরি ঐতিহাসিক কলহনের ‘রাজতরঙ্গিণী’র উল্লেখ করে প্রবন্ধে লেখা হয়েছে, ‘‘তা থেকে জানা যায় দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় শাসক কাশ্মীর শাসন করতেন। মাঝেমাঝে ভারতের বৃহৎ শাসকেরা কাশ্মীর দখল করলেও তাদের আধিপত্যের বন্ধন শিথিল হওয়া মাত্রই স্থানীয় শাসকরা বিদ্রোহ করতেন। ১৩৩৯ সাল থেকে স্থানীয় মুসলিম শাসকরা কাশ্মীর শাসন করেছেন।’’ ২০২৪-এর ভোটের আগে অযোধ্যায় নির্মাণ করা হয়েছে রামমন্দির। শহর জুড়ে তৈরি করা হয়েছে ঝাঁ-চকচকে রাস্তা। তারজন্য উচ্ছেদ করা হয়েছে বহু হকার, ছোট দোকানদারকে। কারণ পুণ্যভূমিতে ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারবে না ছোট দোকানিরা। তাদের পেটের খিদের উপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে হিন্দু ভারতবর্ষ। বিষয়টি ধরা পড়েছে ‘ভারতবাসীর খিদের পাহাড়ের উপর রামমন্দির সৌধ’ প্রবন্ধে। ‘হিংসা যখন স্বাভাবিক হয়ে ওঠে’, ‘নালন্দা থেকে বাবরি ইতিহাস বিকৃতির ট্র্যাডিশন চলছেই’, ‘কেন্দ্রীয় দুর্নীতির বিরুদ্ধে নরম কেন বামেরা?’ প্রভৃতি প্রবন্ধগুলোয় নেই ভেজা ভেজা আবেগ। আছে কাঠ-কাঠ যুক্তি, পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য। ভাষা মেদহীন, চাঁচাছোলা। কোথাও নেই কুয়াশার আস্তরণ। লেখাগুলো বিশেষভাবে রেখাপাত করে, ভাবায়। প্রচ্ছদ মৌসুমী বিশ্বাস। দাম ৩০০ টাকা।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
সাহিত্যের বিবিধ শাখায় বিচরণ করেছেন নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। কবিতা লিখেছেন। পাশাপাশি লিখেছেন প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাস। লিখেছেন ছড়াও। তাঁর শিশু-কিশোর ভাবনাকে সামনে রেখেই ‘শিশু-কিশোর সাহিত্যিক নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী’ শীর্ষক একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন ড. অম্বালিকা সরকার। প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয়েছে সারঙ্গ প্রকাশনী থেকে। আছে কয়েকটি প্রবন্ধ। সূচিক্রম অনুযায়ী প্রথম অধ্যায়ের শিরোনাম ‘বাংলার শিশু-কিশোর সাহিত্যের ইতিবৃত্ত : প্রেক্ষাপট ছড়া’। বিরাট বিষয়। অথচ তার জন্য বরাদ্দ মাত্র চার পাতা। শিশু-কিশোর মনন নিয়ে ভাসা ভাসা কিছু কথা এবং কয়েকজন শিশু-কিশোর সাহিত্যিকের নামোল্লেখ ছাড়া আর কিছুই পাওয়া গেল না। অনুসন্ধানের অভাব প্রকট। উল্লেখ নেই বর্তমান কালের কয়েকজন শিশু-কিশোর সাহিত্যিকের জন্মসালের। শিরোনামে ‘প্রেক্ষাপট ছড়া’ থাকলেও, মূল লেখায় ছড়ার ছিটেফোঁটা উপস্থিতি নেই। দ্বিতীয় অধ্যায় ‘নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ব্যক্তিজীবন’। যদিও এই অংশে ব্যক্তিজীবনের পরিবর্তে সাহিত্যে তাঁর পূর্বসূরি, সমসাময়িক, উত্তরসূরিদের নিয়ে গুরুত্বসহকারে আলোচনা করা হয়েছে। তৃতীয় অধ্যায় ‘নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর সাহিত্যজীবন’। তুলে ধরা হয়েছে কবির সাহিত্যকৃতির তালিকা। কাব্যগ্রন্থের উল্লেখ যেমন আছে, তেমন আছে উপন্যাস, আত্মস্মৃতি, ভ্রমণ কাহিনি, রহস্য কাহিনি, ছোটদের ছড়া ও কবিতা ইত্যাদির উল্লেখ। চতুর্থ অধ্যায় ‘ছড়ার সৃষ্টিতে অনবদ্য নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী’। দীর্ঘ রচনা। আলোচনা করা হয়েছে বেশকিছু ছড়ার উপর। এই অংশটি কিছুটা খিদে মেটায়। পঞ্চম অধ্যায় ‘সমকালীন ছড়াকার ও নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী’ আরেকটু বিস্তার দাবি করে। এছাড়াও আছে উপসংহার। সহায়ক গ্রন্থপঞ্জি এবং বিভিন্ন ছড়া গ্রন্থের প্রচ্ছদের ফটোকপি। উদ্দেশ্য সৎ। তবে খণ্ডটি আশাপূরণে ব্যর্থ। তাকিয়ে রইলাম দ্বিতীয় খণ্ডের দিকে। প্রচ্ছদ সুকান্ত দাস। দাম ৩৫০ টাকা।