একুশের প্রচার তুঙ্গে, ধর্মতলায় খুঁটিপুজো

সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের দিকেও হাজার হাজার মানুষের জমায়েত হয়। তাঁরা মিছিল করে এসে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের ওপরেই বসে পড়েন।

Must read

প্রতিবেদন : ঐতিহ্য বজায় রেখেই সোমবার দুপুরে ধর্মতলায় হল একুশে জুলাইয়ের খুঁটিপুজো। তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সির নেতৃত্বে ও তত্ত্বাবধানে খুঁটিপুজোর মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে গেল একুশের মঞ্চ বাঁধার কাজ। সব দিক থেকেই এবারের শহিদ সমাবেশ ঐতিহাসিক হতে চলেছে। গতবারের তুলনায় এবারে মঞ্চে কিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত ঠিক আছে, মূল মঞ্চে ওঠার জন্য এবার আর সিঁড়ি ব্যবহার করা হবে না। তার পরিবর্তে তৈরি হবে র‍্যাম্প। একই সঙ্গে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে মঞ্চের সামনের দিকে এগিয়ে এসে উত্তাল জনতাকে অভিবাদন-শুভেচ্ছা-সেলাম জানান ও বক্তৃতা করেন— যেভাবে সেই জায়গা রাখা থাকে, এবার অনেকটা সেভাবেই সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের দিকেও মঞ্চের পরিধি কিছুটা বাড়ানো হবে। নেত্রীর চলাচলের জন্য যথেষ্ট জায়গা রাখা হচ্ছে।

আরও পড়ুন-নক্ষত্রপ্রবাহ এবং সহস্র চুনি

কেননা, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের দিকেও হাজার হাজার মানুষের জমায়েত হয়। তাঁরা মিছিল করে এসে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের ওপরেই বসে পড়েন। ওই অংশে তৃণমূল কর্মী-সমর্থক-আমজনতা যাতে নেত্রীকে আরও ভালভাবে দেখতে পান সে-কারণে একেবারে মঞ্চের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত জায়গা রাখা থাকবে। যাতে নেত্রী এগিয়ে গিয়ে সকলকে অভিবাদন জানাতে পারেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই ঘোষণা করেছেন, এবারে একুশে জুলাই দিনটিকে লোকসভা ও চার বিধানসভা উপনির্বাচনের জয়ের পর এই সমাবেশেই উৎসর্গ করা হবে। এই মঞ্চ থেকেই জাতীয় ও রাজ্যস্তরে আগামী দিনে কোন পথে চলবে তৃণমূল কংগ্রেস তার দিশা দেবেন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিনের খুঁটিপুজোতে উপস্থিত ছিলেন দলের সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার, প্রাক্তন সাংসদ ডাঃ শান্তনু সেন, অশোক দেব, আলোক দাস, বাবু বক্সি-সহ বেশ কয়েকজন দলীয় কাউন্সিলর ও অন্যান্য নেতৃত্ব। প্রতিবারের মতো এবারও তিনটি ধাপে মঞ্চ করা হবে। এখনও পর্যন্ত মঞ্চের মাপ যা ঠিক করা হয়েছে তা হল— মূল মঞ্চ, যেখানে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ দলের শীর্ষস্তরের নেতা, নেত্রী, বিধায়ক, মন্ত্রী, সাংসদ, আমন্ত্রিত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বসবেন সেই মঞ্চের মাপ ৫২/২৪ ফুট। দ্বিতীয় মঞ্চটি ৪৮ ফুট/২৪ ফুট। তৃতীয় মঞ্চটির আয়তন ৪০ ফুট/২৪ ফুট। উচ্চতায় ৩টি মঞ্চ যথাক্রমে ১০, ১১ ও ১২ ফুট।
এদিন খুঁটিপুজো শেষে দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি বলেন, এই দিনটি আমাদের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যের। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ১৯৯৩ সালের পর থেকে আমরা শহিদস্মরণ করে আসছি। নতুন করে আর এ-নিয়ে কিছু বলার নেই। তবে প্রতিবারের মতো এবারও একুশের সমাবেশকে সামনে রেখে আমাদের প্রস্তুতি চলছে। আজ মঞ্চের কাজ শুরু হল। উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে থেকেই রাজ্য জুড়ে একুশে জুলাইয়ের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে দল। উত্তর থেকে দক্ষিণ রাজ্যের প্রতিটি বিধানসভায়, জেলায়, অঞ্চলে প্রস্তুতি বৈঠক চলছে। রাজ্যস্তরের নেতৃত্ব একাধিক জেলায় গিয়ে প্রস্তুতি বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন। সব মিলিয়ে একুশের শহিদ তর্পণের প্রস্তুতি তুঙ্গে।
একুশে মেগা সমাবেশ দেখার জন্য শহর জুড়ে বিভিন্ন প্রান্তে থাকছে জায়ান্ট স্ক্রিন। সমাবেশ-চত্বর ঘিরে থাকছে বরাবরের মতোই আঁটোসাঁটো নিরাপত্তা-ব্যবস্থা। মঞ্চ ও তার আশেপাশের এলাকা মুড়ে ফেলা হবে সিসিটিভিতে। প্রতিবারই ভিড়ের নিরিখে একুশে তার নিজেই নিজের রেকর্ড ছাপিয়ে দেয়। এবারেও তার ব্যতিক্রম হবে না। বিশেষ করে লোকসভা ও চার বিধানসভা উপনির্বাচনে বিপুল জয়ের পর দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের ভিড় আছড়ে পড়বে একুশের সমাবেশে। ১৮ জুলাই থেকে দলের কর্মী-সমর্থকরা শহরে আসতে শুরু করবেন। প্রতিবারের মতন এবারও বিধাননগরে সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্ক, রাজাহাট, নিউ টাউনের ইকোপার্ক সংলগ্ন এলাকা, দক্ষিণে গীতাঞ্জলি স্টেডিয়াম, উত্তীর্ণ, নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়াম, ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্র এ-ছাড়াও বড়বাজারের একাধিক ধর্মশালা বুক হয়ে গিয়েছে। এসব জায়গায় থাকবেন নেতা-কর্মী-সমর্থকরা। থাকবে তাঁদের খাওয়াদাওয়ার বন্দোবস্ত। সব মিলিয়ে এবারের একুশের শহিদ তর্পণকে সামনে রেখে শহিদ সমাবেশ সবদিক থেকেই রেকর্ড গড়তে চলেছে। এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে শহরের জ্যাম নিয়ন্ত্রণের জন্য একাধিক পরিকল্পনা করেছে কলকাতা পুলিশ। পার্কিংয়ের ক্ষেত্রেও থাকছে আলাদা বন্দোবস্ত।

Latest article