মোহালি, ১ এপ্রিল : ভঙ্গুর ব্যাটিংয়ের চেনা চিত্রনাট্য। নাইটরা (KKR) উইকেট হারাবে। তার মধ্যে একা লড়বেন আন্দ্রে রাসেল! তাঁর ব্যাটে-বলে হলে কেকেআর জিতবে। না হলে হারবে। ঘরোয়া ক্রিকেটের ‘অ্যালেক্স ফার্গুসন’ এসেও ছবিটা বদলাতে পারলেন না! ফলে হার দিয়েই আইপিএল শুরু হল কেকেআরের।
চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত পারবেন কী করে? রাসেল যখন ফিরে গেলেন, কেকেআর ১৩০-৬। পাঞ্জাব কিংস বহুদূরে। তবু ১৯ বলে ৩৫ রান করে ফেলেছিলেন ড্রে-রস। ভেঙ্কটেশ আইয়ারকে (৩৪) নিয়ে ২৮ বলে ৫০ রান তুলে ফেলেছিলেন। কিন্তু স্যাম কুরানের বুদ্ধিমত্তার কাছে হার মানলেন। রাসেল স্টেপ আউট করবেন বুঝে স্লোয়ার দিয়েছিলেন ইংলিশ সিমার। বল রাসেলের টপ এজ নিয়ে সোজা সিকান্দার রাজার হাতে। তখনই ম্যাচটাও বোধহয় চলে গেল শিখর ধাওয়ানদের হাতে। বাকিটা শুধু ছিল বৃষ্টির হাতে। রেন রুলে পাঞ্জাব জিতল ৭ রানে। বৃষ্টি যখন শুরু হয়েছিল, কেকেআরের রান ১৬ ওভারে ১৪৬-৭।
প্রথম ম্যাচেই নাইটদের (KKR) টপ অর্ডারের যে চিত্র সামনে এল সেটা ভয়ঙ্কর। পাঁচ ওভারের মধ্যে ২৯ রানে ৩ উইকেট। কেকেআরের ব্যাটিং কার্ডের দিকে তাকালে কী যেন নেই বলে মনে হচ্ছে। সেটা বড় নামও হতে পারে। আইপিএলে এটাই দিনের শেষে কাজ করে! মনদীপ সিং (২), অনূকুল রায়দের (৪) নাম ঘরোয়া ক্রিকেটেও অপরিচিত। অথচ, নাইট ম্যানেজমেন্ট তাঁদের ফেলে দিল স্যাম কারেন, অর্শদীপ সিং, নাথান এলিসদের সামনে। যাঁরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ইতিমধ্যেই যথেষ্ট প্রতিষ্ঠিত মুখ।
মজার ব্যাপার হল এই দলে যাঁর একটু-আধটু সুনাম আছে সেই আন্দ্রে রাসেল নামলেন সাত নম্বরে। ততক্ষণে কেকেআর ৮০-৫ হয়ে গিয়েছে। দেখে মনে হতে পারে এই দলের টপ অর্ডার এত ভারী যে রাসেল উপরে জায়গা পাচ্ছেন না। কিন্তু সব মনে হওয়া তো সত্যি হয় না! গুরবাজ (২২), নীতীশ (২৪) ও রিঙ্কু সিং (৪) ফিরে যাওয়ার পর রাসেল এলেন। ততক্ষণে ১০ ওভার পার। ছোট ফর্ম্যাটের ক্রিকেটে সেরা ব্যাটারকে বেশি বল খেলার সুযোগ দিতে হয়। এখানে সেই নিয়ম নেই! রাসেলকে পরে নামানোর রেওয়াজ অনেক মরশুম ধরে চলে আসছে।
যেটা বলার, ১৯২ রানের সামনে থাকলে টপ অর্ডারকে ভাল করতেই হবে। অন্তত একজনকে ইনিংস ধরে রাখতে হবে। পরেরদিকে ‘ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার’ হিসাবে নামা ভেঙ্কটেশ আইয়ার এই কাজটা করলেও বাকিরা সেটা পারেননি। অথচ উইকেটে কোনও জুজু ছিল না। তবু কারেন, এলিস, অর্শদীপদের নামের কাছে হার মেনেছেন নাইট ব্যাটাররা।
মোহালির উইকেটে কিছু না কিছু থাকেই। বোলাররা সুবিধা পায়। কিন্তু শনিবাসরীয় ম্যাচে উল্টো ছবি দেখা গেল। একে তো স্লো উইকেট, তার উপর দুপুরের ম্যাচে রোদের তাপে আরও দেরিতে এল বল। উমেশ ও সাউদিকে দুই ওভার করে বল দিয়ে নীতীশ রানা এরপর নিয়ে আসেন নারিনকে। যাঁর প্রথম ওভারেই ১৪ রান নিলেন ভানুকা রাজাপাক্ষে। এতে পাঁচ ওভারের পর পাঞ্জাব কিংসের রান দাঁড়াল ৫০-১।
নীতিশ টসে জিতে পাঞ্জাবকে ব্যাট করতে দিলেন দুটো কারণে। এক, তাতে রান তাড়া করার সুবিধা ছিল। দুই, উত্তর ভারতের এই অঞ্চলে সন্ধ্যার পর শিশির পড়ে। তখন বল গ্রিপ করা মুশকিল হয় বোলারদের জন্য। বিশেষ করে স্পিনারদের ক্ষেত্রে। মাথায় রাখতে হবে কেকেআরের প্রধান শক্তি আবার দুই রহস্য স্পিনার নারিন ও বরুণ চক্রবর্তী। নীতীশ এই ঝুঁকিটা অড়াতে চেয়েছিলেন।
তবে সাউদি দ্বিতীয় ওভারে প্রভসিমরান সিংকে (২৩) তুলে নিয়েছিলেন। কিন্তু শিখর ধাওয়ানকে পাশে নিয়ে এরপর ঝড় তুলতে শুরু করেন রাজাপাক্ষে (৫০)। যাঁর ২০২১-এ কলম্বোর প্রেমদাসা স্টেডিয়ামে ভারতের বিরুদ্ধে একদিনের ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল। পরে উমেশ যখন তাঁকে ফেরালেন, পাঞ্জাবের রান ছিল ১১ ওভারে ১০৯-২। রানটা যে শেষপর্যন্ত ১৯১-৫-এ গেল, তাতে রাজাপাক্ষের অবদান অনেক।
শিখর স্ট্রাইক রোটেট করে খেলছিলেন। প্রথমে প্রভসিমরান, পরে রাজাপাক্ষেকে স্ট্রাইক দিয়ে উল্টোদিকে থাকলেন। কিন্তু জিতেশ শর্মাকে (২১) সাউদি তুলে নেওয়ার পর খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করে নিজের উইকেট দিয়ে গেলেন বরুণ চক্রবর্তীকে। তাঁর ২৯ বলে ৪০ রানের ইনিংসে বাউন্ডারি ছ’টি।
পাঞ্জাবের ইনিংসের শেষদিকে কারেন ২৬ ও শাহরুখ খান ১১ নট আউট থেকে গেলেন। রাজার সংগ্রহ ১৬। তবে শেষদিকে পাঞ্জাবের রানটা আটকে গেল। একটা সময় পাঁচ ওভারে উঠেছে ৩৪ রান। বরুণ চার ওভারে ২৬ রান দিয়ে শিখরের উইকেট নিয়েছেন। কিন্তু নারিন ও সাউদিকে নিয়ে নীতীশের চিন্তা থেকেই গেল। সাউদি এদিন দিয়েছেন ৫৪ রান। নারিনের অবদান চার ওভারে ৪০। আসলে ব্যাটারদের মতো বোলারাও ব্যর্থ হন এদিন।
এদিকে, এদিন ফ্লাড লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খেলা বন্ধ ছিল ২১ মিনিট। পরে অবশ্য ম্যাচই বন্ধ হয়ে যায় বৃষ্টির জন্য।
আরও পড়ুন: প্রেসিডেন্ট পদে তাঁর লড়াই রুখতে চক্রান্ত চলছে, দাবি ট্রাম্পের