এবার পুজোয় পুরুলিয়ায়

পুরুলিয়া। পর্যটকদের প্রাণের জায়গা। রূপের পশরা সাজিয়ে বসেছেন প্রকৃতি। আছে বেশকিছু দর্শনীয় স্থান। সারা বছর বহু মানুষ বেড়াতে যান। পুজোর ছুটিতে ঘুরে আসতে পারেন। লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে পুরুলিয়া। আছে পাহাড়, জঙ্গল। রূপের পশরা সাজিয়ে বসেছে প্রকৃতি। সারা বছর বহু মানুষ বেড়াতে যান। পুজোর ছুটিতে ঘুরে আসতে পারেন। কমপক্ষে দু-তিন দিন প্রয়োজন। বেড়ানোর জায়গাগুলো মোটামুটি দুটো ভাগে বিভক্ত। অযোধ্যা পাহাড় সার্কিট ও গড় সার্কিট। পুরুলিয়া পৌঁছে গাড়ি ভাড়া করে বেরিয়ে পড়ুন। কী কী দেখবেন?
কাশীপুর রাজবাড়ি
পঞ্চকোট রাজপরিবার প্রায় ৮০০ বছর ধরে কাশীপুর শাসন করেন। রাজবাড়িটি তৈরি করেন মহারাজা নীলমণি সিং দেও সিংহ। দুর্গাপুজোর সময় রাজবাড়ির দ্বার সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হয়। অন্য সময় এখানে গেলে ভেতরে ঢুকতে পারবেন না। একসময় এই রাজবাড়িতে চাকরি করতেন কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত।
জয়চণ্ডী পাহাড়
পুরুলিয়ার অন্যতম আকর্ষণ জয়চণ্ডী পাহাড়। জয়চণ্ডী রেল স্টেশন থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আদ্রা স্টেশন থেকেও যাওয়া যায়। এই পাহাড়ে সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ ছবির শ্যুটিং হয়েছিল। পাহাড়ের উপরে আছে জয়চণ্ডী মন্দির ও বজরং মন্দির। উপরে ওঠার সিঁড়ি আছে।

আরও পড়ুন-কামারপুকুর রামকৃষ্ণ মঠে প্রার্থনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী

গড়পঞ্চকোট মন্দির
গড়পঞ্চকোট মন্দির ছিল সিং দেও রাজত্বের অংশ। মন্দিরগুলো বর্গি আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং অধিকাংশ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। কিছু কিছু অবশিষ্ট আছে। পুরুলিয়া শহর থেকে গড়পঞ্চকোটের দূরত্ব ৫৫ কিলোমিটার।
পাঞ্চেৎ ড্যাম
গড় পঞ্চকোট থেকে মাত্র ১৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পাঞ্চেৎ ড্যাম। এই ড্যামটি রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ড দুই রাজ্যের বর্ডারে। ধানবাদ এখান থেকে একটু দূরে। গড় পঞ্চকোট ঘুরে ড্যামটি ঘুরে নিতে পারেন।
বড়ন্তি
বড়ন্তি পাহাড় ও তার পাদদেশে আছে বড়ন্তি লেক। পাহাড়টি লেকের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত। লেকের উত্তর-পশ্চিম পাশের পাহাড়টিকে বহু মানুষ ভুল করে বড়ন্তি পাহাড় মনে করেন।
মার্বেল লেক
দেউলঘাট, আড়শা থানা বোরামের কাছে রয়েছে মার্বেল লেক। অসাধারণ একটি জায়গা। অদূরেই কানসাই নদীর কাছে ১৫টি মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। অসাধারণ কারুকার্য। মন্দিরগুলো সেন ও পাল যুগের প্রতিনিধিত্ব করে।
দুর্গা বেড়া
দুর্গা বেড়া হল কৃত্রিমভাবে তৈরি একটি জলাশয়। ৪০ ফুট গভীর। স্বচ্ছ জলে লাগে আকাশের নীল রং। দেখে চোখ ও মন জুড়িয়ে যায়। জায়গাটা ‘নীল জল’ নামেও পরিচিত। দুর্গা বেড়া তৈরি হয়েছে কঠিন আগ্নেয় শিলা আহরণের মাধ্যমে, যা হাইড্রো প্রকল্প নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে। উত্তোলিত শিলাগুলি জলাশয়ের চারপাশে রয়েছে।

আরও পড়ুন-নৈহাটি হাসপাতাল পরিদর্শনে সাংসদ

মুরগুমা
মুরগুমা বাঁধটি ঝালদা ব্লকের মধ্যে বেগুনকোদরের উত্তরে এবং পুরুলিয়া শহর থেকে প্রায় ৫৫ কিলোমিটার দূরে কংসাবতী নদীর উপনদীতে অবস্থিত। অসাধারণ পিকনিক স্পট। এখান থেকে অযোধ্যা পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখা যায়।
সীতাকুণ্ড
বাঘমুন্ডি ব্লকের অযোধ্যা গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে বাগান্দি গ্রামে অবস্থিত সীতাকুণ্ড। চমৎকার জায়গা। চারপাশে রয়েছে ছোট ছোট জলাশয়। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। হাতছানি দেয় মাঝারি ঘন প্রাকৃতিক বন। দেখা যায় নানা ধরনের পাখি। সারাদিন চলে কিচিরমিচির। হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, রাম ও সীতা অযোধ্যা পাহাড়ে এসেছিলেন। তৃষ্ণার্ত ছিলেন সীতা। রাম পৃথিবীর মাটিতে তীর নিক্ষেপ করেন। মিষ্টি জলের স্রোত বেরিয়ে আসে। সীতা তাঁর তৃষ্ণা নিবারণ করেন। সেই কারণেই স্থানটি সীতাকুণ্ড নামে পরিচিত।
তুন্দ্র সম্প্রদায়ের লোকেরা শিকারে যাওয়ার আগে সীতাকুণ্ডের জল পান করেন। তাঁরা মনে করেন সীতাকুণ্ড তাঁদের জন্য একটি পবিত্র স্থান।
রাকাব অরণ্য
রাকাব বন ১৬ ক্রোশের একটি বন। একটা সময় ছিল কাশীপুরের রাজার শিকারের জায়গা। এখানকার কেশরগড়ের অবশিষ্টাংশ পর্যটকদের আকর্ষণ করে। এই অঞ্চলে মিলমণি মেলা নামে একটি মেলা বসে। প্রচুর লোকসমাগম হয়।
খাইরাবেরা
বাঘমুন্ডি পাহাড় এবং বনের মধ্যে অবস্থিত একটি সেচবাঁধ খাইরাবেরা। বর্তমানে আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে। পুরুলিয়া শহর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে বাঘমুন্ডি ব্লকে অবস্থিত। এই জায়গায় চেমটো এবং বাররা পাহাড়ের পাদদেশে একটি বিস্তীর্ণ জলাশয় রয়েছে। অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
বামনি জলপ্রপাত
দেখার মতো জায়গা বামনি জলপ্রপাত। সবুজ প্রকৃতির কোলে অবস্থিত। দূর থেকে শোনা যায় জল পতনের শব্দ। বাতাস স্যাঁতসেঁতে এবং আর্দ্র। দিনের বেলায় শোনা যায় ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক।
চড়িদা গ্রাম
পুরুলিয়া মানেই ছৌ নাচ। চড়িদা গ্রামে পাওয়া যায় ছৌ নাচের মুখোশ। ছোট্ট গ্রাম। ঘুরে আসতে পারেন। গেলে অবশ্যই অন্তত একটি মুখোশ কিনবেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অনেকটাই পর্যটকদের উপর নির্ভরশীল।
দুয়ারসিনি
বান্দোয়ান থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরে কংসাবতী নদীর দক্ষিণে কুচিয়া বিটের অন্তর্গত দুয়ারসিনি। ছোট ছোট পাহাড়, মাঝখানে ঘন সবুজের সমারোহ। এই আদিবাসী গ্রামটি নির্জনতা নিস্তব্ধতায় আপনার একান্ত সঙ্গী হতে পারে। ঘুরে আসতে পারেন শুশুনিয়া পাহাড় থেকে।

Latest article